শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল— একাধারে তিনি ছিলেন একজন তরুণ লেখক, গবেষক, সংগঠক, বক্তা ও ইসলামী স্কলার। ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর সান্নিধ্যে চলে যান, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। তিনি ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠি জেলার সঞ্জয়পুর গ্রামে নানাবাড়িতে ১৯৮৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা আবদুশ শহীদ খান আর মা আফরোজা খানম আরজু। বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক আর মা গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মেঝো ছিলেন শাহাদাৎ। ছোটবেলায় পারিবারিকভাবেই পড়াশুনায় হাতেখড়ি। তারপর মকতবে কুরআন তেলাওয়াত ও আদব-কায়দা শেখা শুরু। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল পাঠ চুকিয়ে বরিশাল শহরে মুসলিম গোরস্তান রোড মাদরাসার হিফ্জখানায় দুই বছর কুরআনের হাফ্যজ হওয়ার চেষ্টা। দুই বছরান্তে শুদ্ধ করে কুরআন শেখা ও কিছু হিফ্জ করার পর শিক্ষার্জনের উদ্দেশে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি।
মাত্র বারো বছর বয়সে ঢাকায় এসে পুরোনো ঢাকার নাজির বাজারের মাদরাসাতুল হাদীসে দশ বছর অধ্যয়ন শেষে দাওরায়ে হাদীস ডিগ্রী অর্জন করেন ২০০৮ সালে। এর মধ্যেই নারায়ণগঞ্জের রসূলপুর ওসমান মোল্লা সিনিয়র ফাযিল মাদরাসা থেকে ২০০৪ সালে দাখিল ও সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা থেকে ২০০৬ সালে আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সম্মানসহ স্নাতক এবং প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান অর্জন করে স্নাতকোত্তর পাঠ সমাপ্ত করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নিজ বিভাগে এম. ফিল. গবেষণা করছিলেন তিনি।
কর্মজীবনে তিনি ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইনস্টিটিউট ফর এডুকেশন এন্ড রিসার্চ-এ গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। সাথে সাথে উত্তরার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল “ইনসাইট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল”-এ তারবিয়াহ প্রশিক্ষক হিসাবে নিয়মিত ক্লাসও নিচ্ছিলেন। এছাড়া জনাব শাহাদৎ হুসাইন খান ফয়সাল অ্যারাবিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (রেজি. এস১২৬৩৩/২০১৭)-এর পরিচালক হিসেবে আরবী ভাষা চর্চায় ও প্রসারে কাজ করেছেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি একাডেমিক পড়াশুনার বাইরে প্রচুর পড়াশুনা ও লেখালেখি করতেন। কুরআন-হাদিসের আলোকে গুনাহ মাফের উপায় তার লেখা প্রথম বই হলেও ইতিমধ্যেই তার ৬টি গবেষণা প্রবন্ধ দেশের স্বীকৃত গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া তার অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, দৈনিক সংগ্রাম, সাপ্তাহিক আরাফাতসহ বহু পত্রিকাসাময়িকী ও স্মরণিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলনে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন তিনি। পড়াশুনা ও লেখালেখির পাশাপাশি তিনি সাধারণ মানুষদের কাছে বিশেষ করে ছাত্র-তরুণ যুবকদের মধ্যে ইসলামের সুমহান বাণীকে ছড়িয়ে দিতে দাওয়াতী কাজ করেন।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শতাধিক পুরস্কার অর্জন করেন শাহাদৎ। বিশেষ করে ২০০৮ সালে স্যাটেলাইট চ্যানেল ATN বাংলায় অনুষ্ঠিত ‘ইস্পাহানী কুইজ প্রতিযোগিতা জানতে চাই জানাতে চাই’ -এ মাদরাসাতুল হাদীসের পক্ষে দলনেতা হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হন, ২০১১ সালে ইসলামিক টিভি আয়োজিত ‘হিটাচী চৌকস’ কুইজ প্রতিযোগিতায় সারাদেশের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে রাহাবার মাল্টিমিডিয়া আয়োজিত চ্যানেল নাইন-এ সম্প্রচারিত ইসলামী সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা ‘আলোকিত জ্ঞানী’তে চ্যাম্পিয়ন হন। পড়াশুনা, লেখালেখি আর সফর করা তার নেশা-পেশা ও শখ ছিল। সর্বশেষ তিনি সমকালীন প্রকাশনীতে প্রধান সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।