জীবনী

বাংলাদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী— আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ

লিখেছেন মিরাজ রহমান

১৯৮০ সালের ২৫ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি পৃথক মন্ত্রণালয় হিসেবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যাত্রা শুরু হয়। নামকরণ করা হয়— Ministry of Religious Affairs। ১৯৮৪ সালের ০৭ জানুয়ারি মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে মাহবুবুর রহমানের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ২০১৯ সালের ০৭ জানুয়ারি মাননীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত— মোট ১৮ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা এ মন্ত্রণায়ের অভিভাবকের আসনে সমাসীন হয়েছেন।

কেবল আক্ষরিক অর্থে নয়; ১৯৮০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত— ৪০ বছরের ইতিহাসে কর্মদক্ষতাপূর্ণ ব্যবস্থাপনা গুণ, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, কর্মকান্ডগত ব্যাপ্তি ও সফলতা, আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখবান্ধব জনপ্রিয়তা এবং গণমুখি কল্যাণকর কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ সব ধর্মের অনুসারীদের বসবাসস্থল বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখার বিবেচনায় স্বাধীন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর উপাধিতে আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহকে ভূষিত করলে কোনো অত্যুক্তি হবে না বরং এটাই হবে তার যথার্থ মূল্যায়ন এবং যথাযোগ্য স্বীকৃতি।

রাজনীতিতে তিনি যেমন ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহ্যধন্য আদর্শ সৈনিক; ধর্ম পালন ও আধ্যাত্মবাদের সাধনায় তেমন ছিলেন অলিকুল শিরোমনী সদর সাহেব হুজুর আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরি (রহ.)-এর সংষ্পর্শশুভ্রতায় আলোকিত শিষ্য। বহু বক্তৃতায় শেখ আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার রাজনৈতিক নেতা। আর আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরি (রহ.) আমার ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক নেতা।’ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনায়নে টেকনোক্র্যাট কোঠায় এ সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ।

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পরই তিনি মন্ত্রণালয় ও তার আওতাধীন দপ্তরসমূহের সব কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দূর্নীতিমূক্তভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রদান করেন এবং শক্ত হস্তে তা বাস্তবায়নও করেন। হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ও কর্যকরি বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তার দায়িত্বপালনকালে। তার একান্ত চেষ্টায় রাজকীয় সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌছায়। এরই ধারাবাহিকতায় হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি ও বিমানভাড়া কমানোসহ সৌদি আরবে হাজীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান এবং ঢাকায় ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার মতো অসম্ভব সব ব্যবস্থানাও বাস্তবায়িত হয়। এছাড়া জেদ্দা বিমানবন্দরের হজ টার্মিনালে এয়ারকন্ডিশন স্থাপনের জন্য সফল আলোচনা করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগও গ্রহণ করেন তিনি। সর্বপরি তার নেতৃত্বে বহুকাল পর বাংলাদেশী হজযাত্রীরা সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং সহজ ও সফলভাবে পবিত্র হজব্রত পালনের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। হজপালনকেন্দ্রিক সফল ও গণবান্ধব কর্মকান্ড বাস্তবায়নের কারণে আওয়ামী লীগ দলসহ ক্ষমতাসীন সরকার ও দেশের আপামর মুসলিম জনসাধারণের পক্ষ থেকে ভূষসী প্রশংসা ও স্বীকৃতি এবং ভালোবাসা ও সম্মাননা অর্জন করেছেন শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ।

২০১৯ সালে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ৫৮ জন আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখকে সরকারিভাবে হজব্রত পালনে নেওয়ার ব্যবস্থা করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো সরকারিভাবে এতোজন আলেম-উলামাকে হজে পাঠানো হয়নি। শুধু হজে পাঠানোই নয়; সব মত ও পথের আলেম-উলামাগণকে এর আগে কোনো উদ্যোগেই এভাবে একত্রিত হতে দেখা যায়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে শুধু দেশেই নয়; ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই সীমানা ছাপিয়ে সৌদি সরকারের মন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ হজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ। উল্লেখ্য ২০১৯ সালের হজ পরবর্তী সময়ে পবিত্র কাবা ঘর ধৌত করার মহতি আয়োজন-উৎসবে বাংলাদেশে থেকে প্রথমবারের মতো কোনো মন্ত্রী হিসেবে শেখ মোহম্মাদ আবদুল্লাহ আমন্ত্রণও পেয়েছিলেন।

ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে আলেম-উলেমা, পীর-মাশায়েখ ও বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। কাওমী মাদরাসায় অধ্যয়নরত লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর শিক্ষাসনদের সরকারি স্বীকৃতির বিষয়ে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলেম-উলামাদের মহাসমাবেশে প্রথমবারের মতো মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীর সম্মানিত ইমাম ও খতিবদের বাংলাদেশে আগমনের ব্যবস্থাপনায় মুখ্য ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি। অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তাবলিগ জামাতের চলমান বিবাদ নিরসন করে ২০১৯ ও ২০২০ সালে শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে উভয় পক্ষের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজিত হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ তরান্বিত করায় ভূমিকা রাখেন এবং এ প্রকল্পের তদরকি করতে বিভিন্ন জেলায় সফরও করেন তিনি। এছাড়া হাজার হাজার আলেম-উলামার কর্মসংস্থানস্থল মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের ৭ম পর্যায় অনুমোদনে আন্তরিক অবদান রাখেন শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ। উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন যাবত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্ণরসের সম্মানিত গভর্ণর হিসেবেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

সর্বশেষ করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে ইবাদত/উপাসনা পালন বিষয়ে আলেম-উলামা ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের পরামর্শ গ্রহণ করে সময় উপযোগী বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদানের নেপথ্যে তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। করোনা মহামারির আঘাতে জীবন-জীবিকার যাতাকলে পিষ্ঠ আলেম-উলামা, মসজিদের খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জিন ও খাদেমদের প্রধানমন্ত্রী পক্ষ থেকে এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানগত সরকারি সব উদ্যোগেই নেপথ্যে কাজ করেছেন শেখ আবদুল্লাহ। এছাড়া দূর্যোগপূর্ণ এ সময়ে ব্যক্তিগতভাবেও দল-মত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বহু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। মুসলিম সম্প্রদায় এবং আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখদের পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিয়ে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর চেতনা লালনকারী এক ব্যক্তিত্ব।

শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ধার্মিক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ মোহাম্মাদ মতিউর রহমান এবং মাতার নাম মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় বা মেঝো সন্তান তিনি।

গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদরাসায় পবিত্র কোরআন হিফজকরণের মাধ্যমে শুরু হয় শেখ আবদুল্লাহর শিক্ষা জীবন। এরপর একই মাদরাসায় কওমী শিক্ষা ধারায় পড়াশুনা করেন কিছুকাল। সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং সুলতানশাহী কেকানিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে মেট্রিক পাস করেন তিনি। এরপর খুলনার আযম খান কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম. এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন শেখ আবদুল্লাহ। এরপর ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। এছাড়া ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশ সেবা করার লক্ষ্যে চাকুরির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ গ্রহণ করে তার নেতৃত্বে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।



সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। পরবর্তীতে তিনি অ্যাডভোকেট হিসেবে গোপালগঞ্জ জজকোর্ট এবং ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিসও করেছেন দীর্ঘদিন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করাসহ অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ। খুলনার আযম খান কমার্স কলেজের প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে চলমান ছয়দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে রাজনীতিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। এরপর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগদান করেন । এরপর বঙ্গবন্ধুর সরাসরি তত্ত্বাবধানে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন এবং সুনাম ও সফলতার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালনও করেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ।  ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করাসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হন এবং বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য আর্দশ সৈনিক ছিলেন আলহাজ এডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বিভিন্ন সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ। তার মৃত্যু পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ সাহেব ছিলেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কর্মী। দলের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে যে সব মানুষকে সবচেয়ে বেশি কাছে পেতাম তাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শ সৈনিক হারালো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।’

সদা হাস্যোজ্জ্বল এবং মিশুক সভাবের অধিকারী এ মানুষটি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহধন্য এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর ও তার নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আস্থাভাজন প্রতিনিধি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী সংসদীয় আসন ২১৭, গোপালগঞ্জ-০৩ এ যতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ তার পক্ষে নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সব নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংসদীয় প্রতিনিধি হিসেবে সততা, নিষ্ঠা ও সুনামের  সঙ্গে নির্বাচনী এলাকা তত্ত্বাবধান করেছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ ঘাতকের বুলেটের আঘাতে শাহাদাত বরণ করলে কঠিন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় দেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জীবনে নেমে আসে দুর্দিন। এসময় গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে শেখ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সকল লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি  উপেক্ষা করে অকুতোভয় সৈনিকের ভূমিকা নিয়ে আপসহীনভাবে দলের প্রতি অনুগত থেকেছেন এবং দলের নিবেদিত কর্মী-সমর্থকদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। এমনকি ১৯৮০ সালে এরশাদ সরকারের দেওয়ার মন্ত্রীত্বের অফারও প্রত্যাখান করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে দায়িত্ব পালন শুরু করেন অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ।

বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ সৌদি আরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। ধর্মপরায়ণ মুসলিম হিসেবে একাধিকবার পবিত্র হজব্রত ও উমরাহ পালন করেছেন তিনি।

বাধক্যজনিত শারীরিক অসুস্থতায় ২০২০ সালের ১৩ জুন রাত ১১.৪৫ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইনতিকাল করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রী হিসেবে তিনিই প্রথম শহীদ হন। মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাড়ি জমান পরকালে। জানাজার নামাজ শেষে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং রাজনৈতিক সহকর্মীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে চিরবিদায় নেন বাংলাদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। অ্যাডেভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দেশে প্রায় সব মত ও পথের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখগণ শোক প্রকাশ করে তার রূহের মাগরিফাত কামনায় দোয়া-মোনাজাতে করেছেন।

গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এ সৈনিকের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্মরণীয় হয়ে থাকবে দ্বীন ইসলাম তথা মুসলিম সম্প্রদায় ও আলেম-উলামাবান্ধব তার অবদানগুলো। অ্যাডেভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে তার চেতনা এবং তার আদর্শমাখা পথ-নির্দেশনা। চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে তার অবদানমালা।

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।