বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন লাইব্রেরিটির অবস্থান আধুনিক তিউনিশিয়ায়। কারওয়্যাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ এই লাইব্রেরি। বিশ্ববিদ্যালয়, এটি সংলগ্ন মসজিদ এবং এই লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা হয় একত্রে, ৮৬৯ সালে। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন নারী।আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর আগে একজন নারী সমাজের বিকাশের জন্য এতটা অবদান রেখেছেন তা ভাবতেও বিস্ময়ে অভিভূত হই আমরা। তিনি চেয়েছিলেন জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র তৈরি হোক। তাই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সকল সম্পদ ব্যয় করে তিনি তৈরি করেন কারওয়্যাইন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠা করেন একটি সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার।
সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া এই বিদূষী নারীর নাম ফাতিমা আল ফিহরি। তার বাবা মোহাম্মদ আল ফিরহি ছিলেন একজন সফল বণিক। তিউনিশিয়ার কারওয়্যাইন থেকে তিনি সপরিবারে পাড়ি জমান মরোক্কোর ফেস এ। ফেস তার জন্য ছিল পারিবারিক ব্যবসার দূর্দান্ত একটি জায়গা। ফাতিমা এবং মরিয়ম দুই কন্যাকেই শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর উভয়েই বিপুল সম্পদের মালিক হন এবং সমাজের জন্য আত্মনিয়োগে ব্রতি হন। মরিয়ম উদ্যোগ নেন পবিত্র মসজিদ আল-আন্দালাজ নির্মাণে। আর ফাতিমা লক্ষ্য নির্ধারণ করেন আল কারওয়্যাইন নির্মাণের, যা উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে বড় মসজিদ বলে প্রসিদ্ধ। মসজিদ নির্মানের মাঝামঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানের কাজ শুরু হয়। তার এই মহৎ কীর্তির নামেই এলাকার নাম হয়ে যায় কারওয়্যাইন।
কারওয়্যাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন আবু আল আব্বাস আল জ্ব্যামী, আবু মাহবুব আল ফাসিসহ বিখ্যাত অনেকে। এর সুনাম বিস্তৃত ছিল শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও। ইউরোপের সংস্কৃতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তথা মুসলিম বিশ্বে অগ্রসর ভূমিকা রাখে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্বের প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারটি নানা কারণে ছিল পরিত্যাক্ত। ২০১২ সালে কানাডিয়ান-মরোক্কান স্থাপত্যশিল্পী আজিজা চৌহানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় পাঠাগারটির পুনঃগঠনের। আজিজা বলেন, ‘এই শহরে আমি বেড়ে উঠেছি, থেকেছি ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত। আমার দাদা এই পাঠাগারে পড়াশোনা করতে যেতেন। কিন্তু আমি এখানে কখনোই যাই নি। কারণ জনসাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল না এখানে।’
পাঠাগারটিতে ৪ হাজার এরও অধিক বই রয়েছে এবং এর অধিকাংশই ১ হাজার ২০০ বছরের পুরোনো। আজিজাকে এই সময়ে এসেও পাঠাগারের কাজ করতে গিয়ে অনেক কটূক্তি শুনতে হয়। নারী হওয়ার কারণে তিনি শিকার হন হয়রানির। ‘নারী হওয়ার কারণে মানুষ আমাকে পাগল বলতে শুরু করে। কারণ মরোক্কান স্থাপত্যশিল্পীদের সঙ্গে তারা আমাকে মেলাতে পারত না। কিন্তু আমার জন্য কাজটা খুব গর্বের ছিল, কারণ ফেস এর মানুষ বা আমার সন্তানেরা এই পাঠাগারে যেতে পারবে যেখানে তাদের দাদা একসময় এসেছেন, পড়াশোনা করেছেন এবং আইনজীবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।’
এক মহৎ নারী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এটি। আর আরেক নারীর শ্রম বিশ্বের প্রাচীনতম পাঠাগারটিকে এখন উন্মুক্ত করে দিয়েছে সবার জন্য। আমাদের উপমহাদেশে বেগম রোকেয়াকে ১৯ শতকে এসে কতই না সংগ্রাম করতে হয়েছে নারী শিক্ষার জন্য। আর তিউনিশিয়ায় সেই অষ্টম শতকে সমাজের বিকাশে অবদান রেখেছেন মুসলিম নারীরা। তারা শিক্ষিতও ছিলেন। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সংগ্রাম শুরু হয়েছে অনেক আগেই। আমাদের তাল মেলাতে হবে, পায়ে পা মেলাতে হবে সচেতনভাবে।
ভিডিও ডকুমেন্টরি দেখতে ক্লিক করুন এই লিংকে https://www.youtube.com/watch?v=s7dPgwdoU9U
সূত্র: হুয়াই ইসলাম
লিখেছেন : আফসানা সুমী
সম্পাদনা : রুমানা বৈশাখী / ফকির কামরুল
ফরম প্রিয়.কম
কমেন্টস করুন