জীবনী ফিচার সেরা দশ স্কলারস

২০১৮ সালের সেরা ১০ মুসলিম ব্যক্তিত্ব

লিখেছেন মিরাজ রহমান

দ্য ওয়ার্ল্ডস ফাইভ হানড্রেড মোস্ট ইনফ্লুনসিয়াল মুসলিম (The worlds 500 Most Influential Muslims)- জর্ডানের আম্মানে অবস্থিত দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্যাটিজিক স্টাডিজ সেন্টার দ্বারা পরিচালিত একটি উদ্যোগ। যারা মূলত বিশ্বব্যাপি প্রতিবছর প্রভাশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি জরিপ পরিচালনা করে থাকে। এটি একটি সম্পূর্ণ বেসরকারি স্বাধীন গবেষণা সংস্থা। ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম এ তালিকা প্রকাশের কাজ শুরু হয়।

প্রতি বছরের মতো ২০১৮ সালে পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের নাম। দুই ধাপে দুটি জরিপ অনুষ্ঠিত হয়ে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের নাম নির্বাচিত হয়। প্রথম ধাপে সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০ জন ব্যক্তিত্বকে নির্বাচন করা হয় এবং দ্বিতীয় ধাপে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন ব্যক্তিত্বকে নির্বাচন করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্ব কারা নির্বাচিত হয়েছেন? চলুন জেনে নেই…

১. প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়িপ এর্দোগান : বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার প্রথম ব্যক্তিত্ব তিনি। ২০১৭ সালের এবং ২০১৬ সালের জরিপে তিনি অষ্টম ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার দেশ তুরস্ক। ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ সালে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তার বয়স ৬২ বছর। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও আধিপত্যের বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত। ২০১৪ সাল থেকে বর্তমানে তিনি তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম। এর আগে তিনি টানা ১১ বছর তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

২. কিং সালমান বিন আবদুল আজিজ বিন আল সৌদ : বিশ্বের সবেচেয় প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছেন তিনি। ২০১৬ ও ২০১৭ সালের জরিপে তিনি তৃতীয় স্থানে ছিলেন। তার দেশ সৌদি আরব। জন্ম- ৩১ ডিসেম্বর ১৯৩৫ মোতাবেক তার বয়স ৮০ বছর। রাজনৈতিক ক্ষমতার বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কিং সালমান বিন আবদুল আজিজ মর্ডারেট সালাফি মুসলিম নেতা। বর্তমানে তিনি রয়েল সৌদি আরবের বাদশাহ এবং সৌদি আরবে অবস্থিত পবিত্র দুই মসজিদের জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি এই পদে আসীন হন।

৩. কিং আবদুল্লাহ (দ্বিতীয়) ইবনে আল হুসাইন : বিশ্বের সবেচেয় প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার তৃতীয় ব্যক্তিত্ব তিনি। ২০১৭ সালের জরিপে দ্বিতীয় ও ২০১৬ সালের জরিপে তিনি প্রথম ছিলেন। তার দেশ জর্ডান। জন্ম- ১৯৬২ সাল অনুযায়ী বর্তমানে তার বয়স ৫৪ বছর। রাজনীতি এবং ঐতিহ্যবাহী বংশের বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী নির্বাচিত। তিনিও একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম নেতা। বর্তমানে তিনি জর্ডানের হাশেমাইট কিংডমের রাজা এবং জেরুজালেমের বিভিন্ন অঞ্চলের জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

৪. সাইয়্যেদ আলী খোমেনি : বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছেন তিনি। ২০১৭ ও ২০১৬ সালের জরিপেও তিনি চতুর্থ স্থানের অধিকারী ছিলেন। তার দেশে ইরান। ১৭ জুলাই ১৯৩৯ সালে জন্ম মোতাবেক তার বয়স এখন ৭৭ বছর। রাজনীতি এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার কারণে তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত। তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী শিয়া মুসলিম। পাশাপাশি একজন বিপ্লবী শিয়া নেতা। তিনিই বর্তমানে ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সবোর্চ্চ নেতা।

৫. কিং মুহাম্মাদ (ষষ্ঠ) : বিশ্বের সবেচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার পঞ্চম ব্যক্তিত্ব তিনি। ২০১৭ ও ২০১৬ সালের জরিপেও তিনি পঞ্চম ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার দেশ মরক্কো। ২১ আগস্ট ১৯৬৩ সালে জন্ম মোতাবেক তার বয়স ৫৩ বছর। রাজনীতি, প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং উন্নয়নের বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মালেকি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম। বর্তমানের তিনি মরক্কোর বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিং মুহাম্মাদ (ষষ্ঠ) সরাসরি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর বংশধর এবং তার পরিবারের সদস্যরাই বিগত ৪০০ বছর যাবত মরক্কো শাসন করছেন।

৬. বিচারপতি শায়খ মুহাম্মাদ তাকি উসমানি : বিশ্বের সবেচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে আছেন তিনি। ২০১৭ সালের জরিপে ষষ্ঠ ও ২০১৬ সালের জরিপে তিনি ২২তম স্থানে ছিলেন। তার দেশ পাকিস্তান। ০৩ অক্টোবর ১৯৪৩ সালে জন্ম মোতাবেক তার বর্তমান বয়স ৭৩ বছর। পাণ্ডিত্যপূর্ণতা এবং বংশধারার বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হয়েছেন। হানাফি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম। ইসলামিক আইনশাস্ত্র ও ইসলামিক অর্থনীতি বিষয়ে তিনি বিশ্ববিখ্যাত স্কলার। ১৯৮২ সাল থেকে ২০০২ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারকও ছিলেন তিনি।

৭. সাইয়্যেদ আলী হুসাইন সিস্তানি : বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালের জরিপে তিনি সপ্তম স্থানে ছিলেন কিন্তু ২০১৬ সালের জরিপে তিনি টপ টেন তালিকাতে ছিলেন না। তবে ২০১৪/১৫ সালের জরিপে সপ্তম স্থানের অধিকারী ছিলেন। তার দেশে ইরান। তিনি ০৪ আগস্ট ১৯৩০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বর্তমান বয়স ৮৬ বছর। পাণ্ডিত্যপূর্ণতা এবং বংশধারার বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব বিবেচিত। তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী শিয়া মুসলিম। তিনি ইরানের একজন বিপ্লবী নেতা হিসেবে পরিচিত।

৮. শায়খ আল হাবিব উমর বিন হাফিজ : বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার অষ্টম স্থানে রয়েছেন তিনি। ইয়েমেনের তারিম শহরে অবস্থিত দার আল মুস্তাফা নামক একটি সংস্থার পরিচালক তিনি। রাসুলের (সা.) জীবনীভিত্তিক নানা আয়োজন ও কর্মের কারণে তিনি মূলত বিশ্বময় পরিচিত। জন্ম ১৯৬২ সালের ১ জানুয়ারি। পিতার নাম মুহাম্মাদ বিন সালিম বিন হাফিজ। উমর বিন হাফিজ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী একজন সুন্নি মুসলিম। এর আগে কোনো বছর তিনি এ তালিকাতে স্থান লাভ করেননি, এবারই প্রথম।

৯. অধ্যাপক ড. শেখ আহমদ মুহাম্মদ আল-তৈয়ব : বিশ্বের সবেচেয় প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার নবম রয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালের জরিপে প্রথম ও ২০১৬ সালের জরিপে তিনি দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। তার দেশ মিশর। জন্ম- ১৯৪৬ সালে। মূলত প্রশাসনিক ক্ষমতার কারণে তিনি প্রভাশালী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম। বর্তমানে তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রান্ড শায়খ এবং আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের গ্রান্ড ইমাম হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। এরপূর্বে তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রায় সাত বছর এবং মিশরে সবচেয়ে শক্তিশালী ধর্মীয় নেতা বা গ্র্যান্ড মুফতি হিসাবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।

১০. শায়খ সালমান বিন কুদা : বিশ্বের সবেচেয় প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার দশম স্থানে রয়েছেন তিনি। বিন কুদা মূলত সৌদি স্কলার ও একজন বিখ্যাত শিক্ষাবিদ হিসেবে পরিচিত। এ বছলই প্রথম তিনি এ্ তালিকাতে স্থান লাভ করেছেন। তার জন্ম ১৯৪২ সালের ১ জানুয়ারি। তাকে সালাফি নেকওয়ার্কের বা সালাফি আন্দোলনের ‘কি স্কলার’ বলা হয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর তিনি একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। লেখালেখিতেও বেশ দখল রয়েছে বিন কুদার। The First Strangers তার লেখার বিখ্যাত একটি গ্রন্থ।

সূত্র : দ্য ওয়ার্ল্ডস ফাইভ হানড্রেড মোস্ট ইনফ্লুনসিয়াল মুসলিম

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কমেন্টস করুন