আল্লামা সুয়ুতি (রহ.) লিখেছেন, এভাবে সৃষ্টজীবের মধ্যে রাসুল (সা.)-এর সর্বপ্রথম সৃষ্টি হওয়া, নবুয়তপ্রপ্তিতে তার প্রাধান্য এবং তার ব্যাপারে অন্য নবীদের থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত অধ্যায়। তারপর তিনি বলেছেন, ইবনে আবু হাতেম তার তাফসীর গ্রন্থে এবং আবু নুয়াইম তার ‘দালায়েল’ গ্রন্থে হাসান ও কাতাদার সূত্রে আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবীজি (সা.) এ আয়াত যখন আমি নবীদের থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছি (সূরা আহযাব, আয়াত ৭) -এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, আমি সৃষ্টির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম মানব আর নবী হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ নবী। (আল-খাসায়েসুল কুবরা, তাহকিক ড. হুরাস, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা ৯)
আল্লামা কাসতালানি (রহ.)-এর বক্তব্যও অনুরূপ। তবে তিনি আরেকটু বাড়িয়ে বলেছেন, এটা প্রমাণ করে, মাটি থেকে আদমের আকৃতি তৈরি করার পর তার ভেতর থেকে রাসুলকে (সা.) বের করা হয়, নবুয়ত প্রদান করা হয় এবং তার থেকে প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়। এরপর আদম (আ.)-এর পৃষ্ঠদেশেই তাকে পুন:স্থাপন করা হয়। এরপর সেই সময় প্রেরণ করা হয় তাকে, যে-সময় তার জন্যে আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং তিনি সৃষ্টিকুলের প্রথম। এই যুক্তি অবান্তর যে, তাহলে আদম (আ.)-ই তো প্রথম সৃষ্টি হবে। কারণ, আদম (আ.) তখন মৃত ছিলেন, তার দেহে প্রাণ ছিলো না। আর রাসুল (সা.) ছিলেন তখন জীবিত, যখন তাকে বের করা হয়, নবুয়ত প্রদান করা হয় এবং তার থেকে প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়। সুতরাং তিনিই হবেন সৃষ্টির প্রথম আর আবির্ভাবে সর্বশেষ নবী। (আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা ৬২)
তাদের দু’জনের আগে আসবাহানী (রহ.) ‘দালায়েলুন নুবুওয়া’ গ্রন্থে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। (আসবাহানি কৃত ‘দালায়েলুন নুবুওয়া’, ভারতীয় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১২) আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই সকল বড়মাপের আলেম-ব্যক্তিত্ব কী করে হাদিসের বিশুদ্ধতা যাচাই না করেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন এবং এ-জাতীয় পর্যালোচনা পেশ করলেন? যদি তারা হদিসের শুদ্ধাশুদ্ধি যাচাই করতেন, তাহলে তাদের পরিশ্রম সার্থক হতো এবং মুসলিম উম্মাহও সমৃদ্ধ হতো।
মিশরের একজন প্রখ্যাত আলেম ও দায়ী ড. মুহাম্মদ খলিল হুরাস বলেন, এ হাদিসটি আবু নুয়াইম তার ‘দালায়েল’ গ্রন্থে এবং দাইলামি তার ‘ফিরদাউস’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন বটে। কিন্তু এর সনদে ‘বাকিয়া’ নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন, যিনি অভিযুক্ত এবং সাঈদ ইবনে বাশির নামক আরেকজন বর্ণনাকারী আছেন, যাকে ইবনে মাঈন প্রমুখ মুহাদ্দিস ‘দুর্বল রাবী’ আখ্যা দিয়েছেন। আল্লামা সাগানি ও ইবনে তাইমিয়াও হাদিসটিকে জাল বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। (আল-খাসায়েসুল কুবরা, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা ৯) এ জাতীয় আরও কিছু হাদিস রয়েছে, যা প্রত্যাখাত (মুনকার) ও বানোয়াট (জাল)। রাসুল (সা.) যে নবী হবেন তা আদম (আ.) সৃষ্টিরও বহু আগে আল্লাহর ইলমে থাকাটা খুবই স্বাভাবিক- তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।
মূল— সালেহ আহমদ শামী। ভাষান্তর— মনযূরুল হক। সূত্র— আকিক পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত মুহাম্মদ (সা.) ব্যক্তি ও নবী নামক গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।
কমেন্টস করুন