নবীজি (সা.)

রাসুলের (সা.) দৃষ্টিতে ৮ শ্রেণীর ভালো মানুষ

লিখেছেন মাহফুয আহমদ

আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ; সেটা তো সর্বজনবিদিত। এ নিবন্ধের বিষয়বস্তুর ঊর্ধ্বে তাঁর স্থান ও অবস্থান। সুতরাং এখানে সর্বশ্রেষ্ঠ এই মানব এবং অপরাপর নবী-রাসুল নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না। জাতি হিসেবে সাধারণভাবে মুসলমানরা সবচেয়ে ভালো মানুষ। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)। তবে নবীজি (সা.) বিভিন্ন প্রসঙ্গে কিছু বিশেষ গুণের অধিকারী কতেক মানুষকেও সবচেয়ে ভালো মানুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ওইসব গুণ অর্জনের লক্ষ্যে আমাদেরও সেসব ভালো মানুষকে চিনে রাখা উচিত। নিম্নে কয়েকটি মাত্র হাদিস পেশ করা হলো-

১. সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সান্নিধ্য ও সাহচর্য লাভের চেয়ে বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে? সে জন্য এই শ্রেষ্ঠ উম্মতের শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম হলেন সাহাবায়ে কেরাম। তাদের পর তাবেঈন এবং তাবে তাবেঈন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো আমার যুগের লোকজন। এরপর তাদের পরবর্তী লোকজন এবং তারপর ওদের পরবর্তী লোকজন।’ (মুসলিম : ২৫৩৩)।

২. উসমান ইবনে আফফান (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই সবচেয়ে ভালো; যে কোরআন শিখে এবং শেখায়।’ (বোখারি : ৪৭৩৯)।

৩. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মানুষের উপকার করে সেই সবচেয়ে ভালো মানুষ।’ (সুনানে দারাকুতনি)।

৪. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) -এর সূত্রে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। বস্তুত তোমাদের মধ্যে আমি আমার পরিবারের জন্য তোমাদের তুলনায় উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি : ১৯৭৭)। অর্থাৎ পরিবারের অধিকার আদায় করে এবং যথাযোগ্য পন্থায় তাদের সঙ্গে ব্যবহার করা উত্তম হওয়ার মানদন্ড।

৫. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সঙ্গী হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে সেই উত্তম; যে নিজ সঙ্গীদের কাছে ভালো এবং প্রতিবেশী হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে সেই শ্রেষ্ঠ; যে আপন প্রতিবেশীর কাছে ভালো।’ (সুনানে তিরমিজি : ১৯৪৪)।  অর্থাৎ যে তাদের প্রাপ্য অধিকার আদায়ে ত্রুটি করে না এবং তাদের সঙ্গে সদাচরণ করে।

৬. আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইসলামের বিবেচনায় তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক উত্তম ব্যক্তি সেই; যে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। যখন তাদের মাঝে দ্বীনের সমঝ বিদ্যমান থাকে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ; ইমাম বোখারি : ২৮৫)।

৭. আবু বাকরা (রা.) বলেন, এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, সবচেয়ে ভালো (সৌভাগ্যবান) মানুষ কে? নবীজি বললেন, ‘যে দীর্ঘজীবন লাভ করে এবং পুণ্য কাজ করে।’ ওই সাহাবি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে সবচেয়ে খারাপ মানুষ কে? নবীজি বললেন, ‘যে দীর্ঘজীবন পায় আর মন্দকাজ করে যায়।’ (সুনানে তিরমিজি : ২৩২৯)।

৮. ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.) এর কাছে বসা ছিলাম। ইত্যবসরে এক বেদুইন এসে নবীজিকে বলল, ‘আপনি আমার পাওনা উটের ঋণ পরিশোধ করুন!’ নবীজি তাকে প্রাপ্তবয়স্ক একটি উট (যার মূল্যমান বেশি) দিয়ে দিলেন। লোকটি বলে উঠল, ‘আমি তো আপনাকে কমবয়সী উট (যার মূল্যমান কম) দিয়েছিলাম!’ প্রতি উত্তরে নবীজি বললেন, ‘লোকদের মধ্যে সেই সবচেয়ে ভালো; যে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ভালো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৮৬)।

Comment

লেখক পরিচিতি

মাহফুয আহমদ

মাহফুয আহমদ— বারঠাকুরী, জকিগঞ্জ, সিলেটে তার জন্ম। পিতার নাম মাওলানা মুফতি আউলিয়া হোসাইন। তিনি একজন শায়খুল হাদিস। মাহফুয সিলেটের বিয়ানীবাজারস্থ জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মাদরাসায় পড়াশোনা করেছেন। এরপর একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন।
বর্তমানে তিনি লন্ডনের জামিয়া দারুস সুন্নাহয় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি লন্ডনস্থ ইকরা টিভির নিয়মিত আলোচক।
তার লেখা অন্যতম বই হলো হাদিসশাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফা (রহ.), আদিল্লাতুল হানাফিয়্যাহ (অনুবাদ ও ব্যাখ্যা), মিডিয়া ও ইসলাম, প্রেরণার ঐতিহ্য, দুর্লভ তথ্য প্রভৃতি। শিক্ষকতা ও খতিবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি নিয়মিত লেখালেখি করেন।