আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের অফুরন্ত ভান্ডার ঘিরে রেখেছে সৃষ্টিকুলকে। তার কোনো নেয়ামতই গুরুত্বের দিক থেকে কম নয়। তবে কিছু কিছু নেয়ামত প্রয়োজন ও অপরিহার্যতার বিচারে একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য স্রষ্টা তাদের যে ভাষার নেয়ামত দান করেছেন সেটাও এর অন্তর্ভূক্ত। মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আকুতিকে প্রকাশ করার জন্য আমরা মুখের মাধ্যমে অর্থপূর্ণ যে শব্দ বের করি সেটাই ভাষা। ভাষাকে আল্লাহ তাআলা তার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেছেন। পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেছেন, ‘তার এক নিদর্শন হলো, তোমাদের রং, ধরণ এবং ভাষার ভিন্নতা। (সূরা রূম: ২২)
ভাষা ছাড়া মানবসভ্যতা অচল। বাকহীন নিথর কোনো ভূখন্ডে বেঁচে থাকা কতটা যে দুর্বিষহ তা বোঝানো মুশকিল। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এবং মানবসভ্যতাকে ছন্দময় করে তোলার জন্যই আল্লাহ তাআলা আশরাফুল মাখলুকাত তথা মানুষকে দান করেছেন ভাষার নেয়ামত। সব প্রাণীরই স্ব স্ব ভাষা আছে, নিজেদের মধ্যে ভাব-বিনিময়ের মাধ্যম জানা আছে। কিন্তু মানুষের ভাষার মতো এত স্বাচ্ছন্দ্য, সহজাত ও সমৃদ্ধ ভাষা অন্য কোনো প্রাণীর নেই। এখানেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, সেরা জীব হওয়ার মাহাত্ম্য। প্রথম মানুষ হযরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করার পর সর্বপ্রথম তাকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন।
পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘হজরত আদমকে সৃষ্টি করার পর যত ভাষা দুনিয়াতে আছে সবকিছুর জ্ঞান তাকে তিনি দান করেছেন। (সূরা বাকারা : ৩১) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘মানব জাতিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং বর্ণনা করার জ্ঞান দিয়েছেন। (সূরা আর রহমান: ৪) মহান স্রষ্টা নিজেও মাতৃভাষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। যুগে যুগে মানুষের হেদায়াতের জন্য তিনি যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে মাতৃভাষায় যোগ্য ও দক্ষ করে পাঠিয়েছেন। যখন যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তা নবীদের মাতৃভাষায় করেছেন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি সব রাসূলকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে তারা আমার বাণী পষ্টভাবে বোঝাতে পারে’। (সূরা ইবরাহিম: ৪ )
প্রত্যেক ভাষাভাষীর দায়িত্ব হলো, নিজ নিজ মাতৃভাষাকে সম্মানের সাথে চর্চার মাধ্যমে সমুজ্জ্বল করে তোলা। আমাদেরও উচিত হাজার বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত প্রিয় ভাষা বাংলাকে বিশ্বের দরবারে মহীয়ান করে তোলার জন্য আকুল প্রয়াস চালানো। তবেই মাতৃভাষার প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ পালিত হবে; স্রষ্টার নেয়ামতের যথার্থ কদর করায় আমরা বিশেষভাবে মূল্যায়িত হব।