ফিচার বই

প্যারেন্টিংয়ের গুড বই— গুড প্যারেন্টিং

মানবসন্তানদের মতো নির্ভশীল হয়ে আর কোনো প্রাণী জন্মায় না। জীবনের নানা পরতে পরতে নিবিড় যত্ন ও মায়া-মমতায় আগলে রেখে সন্তান বড় করতে হয়। প্রত্যেক মা-বাবাই সন্তাদের বেড়ে উঠানোর ক্ষেত্রে সাধ্য মতো চেষ্টা করেন। তারা চান সন্তান যেন তাদের চক্ষু শীতলকারী হয়ে ওঠে। সময়ের প্রয়োজনে সমাজ বদলেছে। তবে বহুলাংশেরই সন্তান প্রতিপালনের সনাতনী ধারণা বদলায়নি। যেকোনো পেশায় সফল হতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাপড়া ও পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রাখতে হয়। সন্তান প্রতিপালন তো এর চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুগের পরিবর্তনের সাথে সন্তানদের বেড়ে উঠায় তাল মেলাতে হলে প্যারেন্টিংও শেখার বিষয়। বাস্তবতা হলো, সমাজের বিবর্তন ও পরিবর্তনশীলতার সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেক মা-বাবাই হাঁপিয়ে উঠছেন। ফলে মা-বাবা ও আদরের সন্তানদের মাঝে বাড়ছে দূরুত্ব, শৃঙ্খলা থাকছে না পরিবারে। এই প্রেক্ষাপটে সন্তান প্রতিপালনে সফল হওয়ার নৈর্ব্যক্তিক বয়ান গুড প্যারেন্টিং। বইটি লিখেছেন নেসার আতিক। তিনি জন্মেছেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়। ব্যাংকিং পেশার বাইরে তিনি একজন মননশীল প্যারেন্টিং চিন্তক ও কথক। প্যারিন্টিং বিষয়ে এযাবৎ শতাধিক উন্মুক্ত উপস্থাপনায় অংশ নিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করে ‘কমনওয়েলথ এমবিএ’ করেছেন। বিআইবিএম ও ফ্রাংকফুর্ট স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট থেকে ব্যাংকিং, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় একজন সার্টিফাইড স্পেশালিস্ট তিনি। গুড প্যারেন্টিং বইটি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ

ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। যেমন নামাজ, রোজা ইত্যাদি। এই সকল বিষয় বাদ দিয়ে আপনি গুড প্যারেন্টিংয়ের উপর কেন বই লিখলেন?
নেসার আতিক : আমার ভাবনায় এসেছে যে, আমি একজন পিতা, সহকর্মী, ছাত্র, বন্ধু, একজন স্বামী এই সকল মাত্রায় জীবনটাকে যেভাবে দেখেছি সেখান থেকে আমার মনে হয়েছে যে, প্যারেন্টিং বা সন্তান প্রতিপালনের বিষয়ে আমাদের পেশাদারিত্বের অনেক অভাব আছে। এখানে আমি পেশাদারিত্বের কথাটা ইচ্ছাকৃতভাবে বলছি। কারণ একজন মানুষ যখন চিকিৎসক হতে চায়, ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় বা ভালো উকিল হতে চায় তখন তিনি সেই বিষয়টা ভালোভাবে লেখাপড়া করে শিখে নেন। কিন্তু আমাদের সমাজে প্যারেন্টিংয়ের বিষয়টাকে একটা প্রাকৃতিক বিষয় মনে করা হয়। দুনিয়া অনেক বদলে গেছে, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের মা-বাবা ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন না কিন্তু আজকের মা-বাবারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন সুতরাং প্যারেন্টিংয়ের এই বিষয়টাকে যদি পেশাদারিত্বের আকারে দেখা না যায় তাহলে আমরা কাঙ্খিত পরিবার বা সমাজ পাবো না। সাথে সাথে মা-বাবা ও সন্তানদের মাঝে একটা দূরত্ব তৈরি হবে। যেমনটা বর্তমানে হচ্ছে। এই প্রয়োজনের বোধ থেকেই মূলত আমি গুড প্যারেন্টিং নামের এই বইটি লিখি।

সন্তান প্রতিপালন করার জন্য বা সন্তানকে উত্তররূপে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। তো সন্তানকে উত্তররূপে গড়ে তোলার জন্য কোন শিক্ষাটাকে উত্তম মনে করেন?
নেসার আতিক : আমার এই বইতে আমি শিশু বিকাশে দক্ষতা পিরামিড নামে একটি অধ্যায় এনেছি। সেখানে আমি দেখিয়েছি একজন মুসলিম শিশু বেড়ে উঠার জন্য কিছু মৌলিক কিছু বিষয় প্রয়োজন। যেমন- ১. নৈতিক দক্ষতা। ২. শিক্ষাগত উৎকর্ষতা। ৩. ভাষাগত দক্ষতা। ৪. বিশ্লেষণ দক্ষতা। ৫. সামাজিক দক্ষতা। বর্তমান সময়ে নৈতিক শিক্ষার অনেক অভাব। সমাজের মানুষ এখন শিক্ষাগত উৎকর্ষতাকেই বড় করে দেখে। এবং এটাকেই জীবনের একমাত্র বিষয় মনে করে কিন্তু এটা জীবনের একমাত্র বিষয় নয়। আমি এই বইটিতে বুঝাতে চেষ্টা করেছি যদি আমরা নৈতিক দক্ষতা সম্পন্ন সমাজ গড়তে চাই তাহলে আমাদেরকে কুরআন ও হাদিসের আলো গ্রহণ করতে হবে। এবং নবী (সা.) এর আদর্শকেই উত্তম আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

আপনার বইটি একজন পাঠক কেন পড়বেন?
নেসার আতিক : বাজারে এই বিষয়ে ভালো কিছু বই আছে। কিন্তু এই বইগুলো সবই বিষয় ভিত্তিক। আমি চেষ্টা করেছি বইটি নৈর্ব্যক্তিক ব্যঞ্জনা থেকে লেখার। বাজারের বইগুলো লেখা হয়েছে আপনি কিভাবে প্যারেন্টিং নিয়ে অগ্রসর হবেন আর আমরা বলার চেষ্টা করেছি কেন আপনি প্যারেন্টিংকে গুরুত্ব দিবেন আমার ধারণা এই পার্থক্যের কারণেই পাঠক বইটি গ্রহণ করবেন।

২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান পাবলিকেশন। ১২৮ পৃষ্ঠার এই বইটির হার্ডকভার ছাপার মূল্য ২৩০ টাকা এবং পেপারব্যাক ছাপার মূল্য ২০০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছন সাইফ আলি। বইটি কিনতে চাইলে কল করুন ০১৭১০১৯৭৫৫৮ এই নাম্বারে অথবা ভিজিট করুন www.guardianpubs.com এই ঠিকানায়। এছাড়া রকমারি.কম থেকেও বইটি ক্রয় করা যাবে।

Comment

লেখক পরিচিতি

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ। তরুণ লেখক। আলেম ও গবেষক। দীর্ঘদিন যাবত দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজপোর্টালে লিখছেন। কাজ করেছেন সুনামধন্য কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে।
বর্তমানে এই তরুণ লেখক আমাদের সময়.কম অনলাইন নিউজ পোর্টালের সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন দৈনিক বাংলাদেশের খবর পত্রিকার ইসলামি বিভাগের।