ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পদকে মূলত মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। আর তিনি মানবজাতিকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি (খলিফাহ্) বানিয়ে সম্পদকে তার বশীভূত করে দিয়েছেন। যাতে করে সেমানবজাতি তার ওপর অর্পিত প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারে, ভূমিকে সঠিক ভাবে আবাদ করতে পারে এবং ভূমিতে যত ধরনের সম্পদ রয়েছে সেগুলোকে যথাযথ ভাবে ব্যবহার ও ভোগ করতে পারে। মানবজাতির সকল আর্থিক কর্মকা- প্রতিনিধিত্ব ও তার শর্তের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং সে পার্থিব জীবনে যা কিছুই করুক না কেন, সেজন্য তাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে আর আখিরাতে তাকে জীবিত অবস্থায় কৃত সকল কাজের জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে। যেমন আল-কুরআন তাঁর ভাষায়… “যারা বিবাহে সামর্থ্য নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন। তোমাদের অধিকারভুক্তদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায়, তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর যদি জান যে, তাদের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে অর্থ-কড়ি দিয়েছেন, তা থেকে তাদেরকে দান কর। তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো না। যদি কেহ তাদের ওপর জোর-জবরদস্তি করে, তবে তাদের ওপর জোর-জবরদস্তি পর আল্লাহ্ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা নূর, ৩৩)
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরো বলেন, “তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিনি তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় কর। অতএব, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ব্যয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার।” (সূরা হাদীদ, ০৭)
ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন, ‘এ আয়াতটি দ্বারা প্রমাণিত যে, সম্পদের মূল মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আর মানুষ তা ব্যবহারে দায়িত্বপ্রাপ্ত। সুতরাং এমন ভাবে তা ব্যবহার করতে হবে যার দ্বারা জমির প্রকৃত মালিক আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হয়ে তাকে পুরস্কার স্বরূপ জান্নাত প্রদান করেন। (তাফসীর কুরতুবী, ১৭/২৩৮)
ইসলামিক ব্যাংক ইসলামী আক্বীদার উপর প্রতিষ্ঠিত। তা থেকেই তার প্রকল্পগুলো প্রসারিত এবং ব্যাংকিং কার্যাবলী ও এর লেনদেন তার নিকটই দায়বদ্ধ। ইসলামী আক্বীদা ব্যাপক নীতি সম্পন্ন ব্যবস্থা হিসেবে অর্থনীতিতেও ব্যাপক ও পরিপূর্ণ নীতি উপস্থাপন করে। যেমন বিতরণ, সঞ্চায় এবং ভোগ সহ সব ক্ষেত্রে সব বিষয়ে।
সুদ গ্রহণ করা এবং তার উপর অটল থাকা পুরো জীবনে বিশেষ করে আর্থিক ক্ষেত্রে শরী‘আকে সমন্বয় করার ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা, ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে ঈমানের দাবি হচ্ছে মুসলিম দেশে আর্থিক ব্যবস্থায় সুদ পদ্ধতিকে মৌলিক উপাদান হিসেবে পরিত্যাগ করা। অনুরূপভাবে সুদ পদ্ধতির সাথে কাজ করা, সুদকে হালাল মনে করা ও সুদকে বৈধ করতে চাওয়া ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রতি নির্দেশ করে। এ কারণেই সুদ ভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হয়। আর এ কাজটিই হলো দ্বীনের ব্যাপারে ঈমানকে বাস্তবায়ন করা। (নুহাওবিলু মাছরাফ আর-রিবাবী ইলা মাছরাফ ইসলামী, ১/২৩।)
সুতরাং উল্লিখিত বিষয়ের আলোকে বলা যায় ইসলামিক ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব হলো তার সকল লেনদেন ও কর্মকান্ডে ইসলামী শরী‘আর আহকামকে পূর্ণরূপে আঁকড়ে ধরা। তাই তার উৎপাদন, সেবা এবং অর্থায়ন হালাল পরিধির মধ্যেই হতে হবে। তার পক্ষে সম্ভব হবে না হারাম ক্ষেত্রে ব্যাংকিং কর্মকা- পরিচালনা করা। কেননা, এর মাধ্যমে উদ্ভূত ভয়ানক ক্ষতিগুলো সমাজকে স্পর্শ করে। যেমন: মদ উৎপাদন, জুয়াখেলা, মাদকদ্রব্য, পতিতাবৃত্তি এবং ওই সব শিল্পে যা শূকরের গোশত অথবা রক্ত অথবা মৃত জন্তু জবেহ ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত। (গাযী ইনায়াহ, মাওসুয়াতুল ইকতিছাদ ইসলামী, পৃ:৭১, মুহসিন আল-খুযাইরী,আল-বিনকু আল-ইসলামী, পৃ:১৯)
মূল— ড. মিনা বিনতে ইবরাহীম আত-তুওয়াইজারী
অনুবাদ— আব্দুল মতিন