ফিচার রাজনীতি

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণে ডাকসুর সিদ্ধান্ত মূলত কী?

ডাকসুর কার্যনির্বাহী সভায় নতুন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে— বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় নাম দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করা যাবে না। যদিও ডাকসুর গঠনতন্ত্রে ধর্মীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ বলে কোনো ধারা নেই। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ডাকসুর এজেন্ডা অনুযায়ী বিষয়টি উত্থাপন করেন সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন। সভা শেষে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ‘সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ  বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে’। তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য অনুযায়ী ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

এ ছাড়া ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কার্যনির্বাহী সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যার মধ্যে রয়েছে—ধর্মভিত্তিক রাজনীতির চর্চা ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’ সংবাদটি প্রচারের পর থেকে নানামুখী সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়াতেও। আসছে বিভিন্নমুখী মতামতও।

বিষয়টি নিয়ে ইসলাম প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। তার দেওয়া বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মতামত—যারা নিবন্ধিতভাবে রাজনীতি করছে তাদের মধ্যে ধর্মভিত্তিক দলও আছে। সুতরাং সেসব ইসলামী দল তো নিবন্ধিতভাবে রাজনীতি করছে। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার অথরিটি তো ডাকসু বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেই। আবেগঘন কথা বললে তো কেউ তা মেনে নেবে না।’

ভিপি নুর আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের মাধ্যমে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার ইচ্ছা করলে সেটা তো গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই বলি এটা বাস্তবসম্মত নয় এবং আমরা এটার পক্ষেও না। উগ্রবাদী সংগঠন যা আছে তা  আগে থেকেই নিষিদ্ধ আছে আর সেটাকে বাস্তবায়ন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ ভিসির সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে নুর বলেন, ‘ভিসি তো ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট। হয়তো-বা ছাত্রলীগের চাপে তিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন। আমার মনে হয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনকে উস্কে দেবার জন্য ছাত্রলীগের অতি উৎসাহী নেতারা এমন গুজব রটিয়েছে। আমি শেষ পর্যন্ত সভায় উপস্থিত ছিলাম না। আমি থাকা পর্যন্ত ভিসিও এটার বিপক্ষে ছিলেন। তিনি বারবার বলে যাচ্ছিলেন ধর্মভিত্তিক শব্দটা ব্যবহার না করতে।’

এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ঢাবি শাখা সাধারণ সম্পাদক মুহা. মাহমুদুল হাসান বাঙ্গালি ইসলাম প্রতিদিনের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, ‘ডাকসুর কোনো ক্ষমতা নেই একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার। তাই ডাকসু যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। আমাদের সিদ্ধান্ত হলো, যদি এ সিদ্ধান্ত সিনেটে পাশ হয়, তাহলে রাজনৈতিকভাবে এবং আইনগত ভাবে যে যে পদক্ষেপ নিতে হয়—সেটা আমরা নেব। ক্যাম্পাসে আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিলে আমরা প্রয়োজনে আদালতে রিট করব।’ তিনি আরও জানান, ‘ডাকসুর ভিপির বিবৃতি অনুযায়ী বলতে চাই, যদি উগ্রবাদী-জঙ্গীবাদী সংগঠনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার জন্য এই বিবৃতি দেওয়া হয়—তাহলে সেটাকে আমরাও সাধুবাদ জানাই।’

ওকে/এমএইচ

Comment

লেখক পরিচিতি

তামীম হুসাইন শাওন

তামীম হুসাইন শাওন— তরুণ মিডিয়াকর্মী হিসেবে পরিচিত। ঢাকার অদুরে দোহার উপজেলার বাসিন্দা। প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু গ্রামের স্কুল থেকে। ১০ বছর বয়সে নিজ ইচ্ছায় ইসলামী শিক্ষা শুরু করেন গ্রামের মাদরাসাতে। এরপর দীর্ঘ ৮ বছরের শিক্ষা জীবন কাটান গাজীপুরের একটি মাদরাসায়। ২০১৮ সালে যাত্রাবাড়ী মাদরাসা থেকে দাওরা হাদীস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। ২০১৯ সালে ইসলামী আইন নিয়ে গবেষণা (মুফতি কোর্স) সম্পন্ন করেন। কওমি মাদরাসায় অধ্যায়নরত অবস্থায় জেনারেল শিক্ষায় পর্যায়ক্রমে JDC, SSC ও HSC সম্পন্ন করেন।
২০১০ সালে মিজান জামাতে লেখাপড়ার কালে 'দৈনিক আমার দেশ' পত্রিকায় মতামত প্রকাশের মধ্যদিয়ে লেখালেখি বা সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। এরপর সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকায়ও তার বেশকিছু লেখা প্রকাশ হয়েছে। ২০১৮-১৯ পর্যন্ত জাতীয় অগ্রযাত্রা ও অগ্রযাত্রা২৪.কম-এ স্টাফরিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শিক্ষাজীবন চলাকালেই এই তরুণ আলেম ইসলামী মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে ইসলামী মিডিয়ায় কাজ শুরু করেন। যার মাধ্যমে এখন উপস্থাপনা ও সাংবাদিকতার কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যে Lal Sobuj Multimedia ও QURAN amar VALOBASHA নামে দুটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করছেন। এছাড়াও সমকালীন২৪.কম নামে একটি নিউসপোর্টালের সম্পাদক হিসেবে আছেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ভিডিও এডিটিং-এ তার দক্ষতা রয়েছে। এছাড়া যুক্ত আছেন ইসলাম প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে।