‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’— একটি আরবি বাক্যবন্ধন। যার সরল বাংলা অর্থ— পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহতায়ালার নামে শুরু করছি। শুরু করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যেকোনো ‘কাজ’ শুরু করা। হাদিসের ভাষ্য মতে, ‘বিসমিল্লাহ’ ছাড়া যে কাজ শুরু করা হয়, তা কল্যাণহীন, অসম্পূর্ণ ও বরকতশূন্য থেকে যায়। (ইবনে মাজাহ)। রসুল (সা.) প্রতিটি কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা শুরু করতেন। ইসলামী বিধান মোতাবেক যেকোনো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা বা ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা কাজ শুরু করা সুন্নত। কোনো কোনো ফকিহ বলেছেন, এটা মুস্তাহাব। ইসলামের মূলনীতি হলো— প্রত্যেক ভালো কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা শুরু করা উচিত। ‘বিসমিল্লাহ’ শুধু একটি সূচনাবাক্য নয়; মহান আল্লাহর বড়ত্ব, তার একত্ববাদের সাক্ষ্য ও নিয়ামতের স্বীকৃতিসহ প্রভুর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে মুক্তির প্রার্থনা নিহিত রয়েছে এ বাক্যে।
ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় বিসমিল্লাহর গুরুত্ব অপরিসীম। এটিকে সব শুভ কাজের সূচনাবাক্য এবং বরকত লাভের উপায় জ্ঞান করা হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা তাওবা ছাড়া বাকি সব সুরার সূচনা হয়েছে ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা। পবিত্র কোরআনের এ আয়াতকে ‘কোরআনের মুকুট’ বলা হয়। যদিও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বাক্যবন্ধনটি কোরআনের বিভিন্ন সুরার অংশ নাকি আলাদা আয়াত— তা নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। হজরত সুলাইমান (আ.) সর্বপ্রথম রানী বিলকিসের কাছে লেখা চিঠিতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ ব্যবহার করেছেন। এরপর আর কোনো নবী-রসুলকে ‘বিসমিল্লাহ’ দান করা হয়নি। রসুল (সা.) প্রথম প্রথম ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ বাক্য ব্যবহার করতেন। এরপর কোরআন নাজিলের ধারাবাহিকতায় সুরা নামলের ৩০তম আয়াতে পুরা ‘বিসমিল্লাহ’ নাজিল হওয়ার পর থেকে তিনি এর ব্যবহার শুরু করেন। (তাফসিরে রূহুল মাআনি)।
পবিত্র কোরআনের সুরা আনআমের ১২১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যেসব প্রাণীর ওপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, তোমরা সেগুলো ভক্ষণ কর না।’ এই আয়াতের আলোকে ইসলামী বিধান হলো— ‘বিসমিল্লাহ’ ছাড়া কোনো প্রাণী জবাই করা হলে তা ভক্ষণ করা ‘হালাল’ নয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন খাদ্য খাবে; তখন যেন সে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে অবশ্যই যেন ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’ বলে। (আবু দাউদ)
কমেন্টস করুন