ইবাদত বেসিক ইসলাম

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

লিখেছেন মিরাজ রহমান

‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’— একটি আরবি বাক্যবন্ধন। যার সরল বাংলা অর্থ— পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহতায়ালার নামে শুরু করছি। শুরু করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যেকোনো ‘কাজ’ শুরু করা। হাদিসের ভাষ্য মতে, ‘বিসমিল্লাহ’ ছাড়া যে কাজ শুরু করা হয়, তা কল্যাণহীন, অসম্পূর্ণ ও বরকতশূন্য থেকে যায়। (ইবনে মাজাহ)। রসুল (সা.) প্রতিটি কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা শুরু করতেন। ইসলামী বিধান মোতাবেক যেকোনো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা বা ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা কাজ শুরু করা সুন্নত। কোনো কোনো ফকিহ বলেছেন, এটা মুস্তাহাব। ইসলামের মূলনীতি হলো— প্রত্যেক ভালো কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা শুরু করা উচিত। ‘বিসমিল্লাহ’ শুধু একটি সূচনাবাক্য নয়; মহান আল্লাহর বড়ত্ব, তার একত্ববাদের সাক্ষ্য ও নিয়ামতের স্বীকৃতিসহ প্রভুর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে মুক্তির প্রার্থনা নিহিত রয়েছে এ বাক্যে।

ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় বিসমিল্লাহর গুরুত্ব অপরিসীম। এটিকে সব শুভ কাজের সূচনাবাক্য এবং বরকত লাভের উপায় জ্ঞান করা হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা তাওবা ছাড়া বাকি সব সুরার সূচনা হয়েছে ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা। পবিত্র কোরআনের এ আয়াতকে ‘কোরআনের মুকুট’ বলা হয়। যদিও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বাক্যবন্ধনটি কোরআনের বিভিন্ন সুরার অংশ নাকি আলাদা আয়াত— তা নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। হজরত সুলাইমান (আ.) সর্বপ্রথম রানী বিলকিসের কাছে লেখা চিঠিতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ ব্যবহার করেছেন। এরপর আর কোনো নবী-রসুলকে ‘বিসমিল্লাহ’ দান করা হয়নি। রসুল (সা.) প্রথম প্রথম ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ বাক্য ব্যবহার করতেন। এরপর কোরআন নাজিলের ধারাবাহিকতায় সুরা নামলের ৩০তম আয়াতে পুরা ‘বিসমিল্লাহ’ নাজিল হওয়ার পর থেকে তিনি এর ব্যবহার শুরু করেন। (তাফসিরে রূহুল মাআনি)।

পবিত্র কোরআনের সুরা আনআমের ১২১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যেসব প্রাণীর ওপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, তোমরা সেগুলো ভক্ষণ কর না।’ এই আয়াতের আলোকে ইসলামী বিধান হলো— ‘বিসমিল্লাহ’ ছাড়া কোনো প্রাণী জবাই করা হলে তা ভক্ষণ করা ‘হালাল’ নয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন খাদ্য খাবে; তখন যেন সে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে অবশ্যই যেন ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’ বলে। (আবু দাউদ)

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কমেন্টস করুন