ফিচার বই ভিডিও

ইতিহাসের এক অনালচিত অধ্যায়— সাংবাদিকতায় বঙ্গীয় উলামা-মাশায়েখ

Featured Video Play Icon
লিখেছেন মিরাজ রহমান

সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক বিষয়। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত এই গণমাধ্যম। সংবাদপত্র বিহীন সমাজ বা রাষ্ট্র স্রোতহীন নদীর মতো। কোনো রাষ্ট্র সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করতে পারে না। যে জাতি যত স্বচ্ছ, তাদের সংবাদ মাধ্যম তত শক্তিশালী। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। যেহেতু গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়, তাই গণমাধ্যমকর্মীদেরও দর্পণের মতো স্বচ্ছ থাকা আবশ্যক। এটা তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং বিশেষ ভূষণও বটে। সংবাদ বলতে মুদ্রণজগৎ, প্রচার মাধ্যম, সম্প্রচার কেন্দ্র, ইন্টারনেট কিংবা গণমাধ্যমের উপস্থাপিত বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের একগুচ্ছ নির্বাচিত তথ্যের সমষ্টিকে বোঝানো হয়।

আজ থেকে শতবর্ষ পূর্বে যখন আধুনিক সভ্যতার এতো উন্নতি ঘটেনি তখনও বঙ্গীয় আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখগণ তাদের অনেক দায়-দায়িত্নের পাশাপাশি সংবাদপত্র প্রকাশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং সূত্রপাত করেছিলেন বাঙালি মুসলিম সমাজের এগিয়ে যাওয়ার পথচলার। কাজটি এতোটা সহজ ছিল না— একদিকে প্রতাপশালী বৃটিশ সরকারের রক্তচক্ষু অপরদিকে সমাজের প্রচলিত অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার ও কুপমণ্ডুকতার প্রতিপত্তি। উভয় বাধাকে উপেক্ষা করে বাঙালি জাতিকে এগিয়ে নিতে অন্য সকলের মতো  বাংলাদেশের উলামা-মাশায়েখগণ সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র প্রকাশে আত্মনিয়োগ করেছেন। ‘সাংবাদিকতায় বঙ্গীয় উলামা-মাশায়েখ’ গ্রন্থটিতে আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখদের ইতিহাস আলোড়নকারী অনন্য ভূমিকার সেই কথাগুলোর উঠে এসেছে। অত্যন্ত গবেষণালব্ধ ও ভূয়সী প্রসংশাযোগ্য এই কাজটি করেছেন ড. মুহাম্মদ ইকবাল হোছাইন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

ইতিহাসের চেপে থাকা নতুন এক অধ্যায় উন্মোচন করেছেন লেখক। তার এ গবেষণা কর্মের মাধ্যমে বঙ্গীয় আলেম-উলামাদের অবদানগত এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অনালচিত দিকে উদ্ভাসিত হলো। সমাজের অপসংস্কৃতি রোধ কল্পে ও শিক্ষামূলক সভ্যতার প্রচার-প্রসারে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র প্রকাশের মাধ্যমে বঙ্গীয় আলেম-উলামাগণ যেভাবে অবদান রেখেছেন গ্রন্থটির পাতায় পাতায় তা আলোচিত হয়েছে। মোট চারটি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে গ্রন্থটিকে। প্রথম অধ্যায় রয়েছে সংবাদ ও সাংবাদিকতায় ইসলাম ও বঙ্গীয় মুসলিম। এই অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে আলোচিত হয়েছে সংবাদ ও সাংবাদিকতার সূচনা : ইসলামী দৃষ্টিকোণ প্রসঙ্গ। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আলোচিত হয়েছে উলামা মাশায়েখ এর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা ও বাঙালি মুসলমানের নবজাগরণ প্রসঙ্গ। তৃতীয় পরিচ্ছেদে উঠে এসেছে বঙ্গীয় সাংবাদিকতায় উলামা-মাশায়েখের অবদানের ইতিহাস।


বাংলা বইয়ের ভিডিও পরিচিতিমূলক আয়োজন— ইসলাম প্রতিদিন বুকস।

বই পরিচিতি— ২১ : সাংবাদিকতায় বঙ্গীয় উলামা-মাশায়েখ।

লেখক— ড. মুহাম্মদ ইকবাল হোছাইন।

প্রকাশক— ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

বইটি কেনার জন্য— ০১৮৫৬১৪৪৪৪১


দ্বিতীয় অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে বঙ্গীয় সাংবাদিকতায় মুসলমান প্রসঙ্গ। তৃতীয় অধ্যায় আলোচিত হয়েছে বঙ্গীয় সাংবাদিকতায় উলামা-মাশায়েখ : জীবন ও কর্ম প্রসঙ্গ। এবং চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে উলামা-মাশায়েখ সম্পাদিত পত্র-পত্রিকার পর্যালোচনা। এছাড়া গ্রন্থের শেষে যুক্ত করা হয়েছে উপসংহার এবং পরিশিষ্ট।

গ্রন্থটি সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল লিখেছেন, ‘উনিশ শতকের প্রথম দিকে বঙ্গীয় সাংবাদিকতায় এদেশের স্বনামধন্য উলামা-মাশায়েখ অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাদের প্রতি রইলো আমাদের অপরীসীম শ্রদ্ধাবোধ। গবেষক লেখক ড. মোহাম্মদ ইকবাল হোছাইন তার গবেষণাকর্মতে  সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র প্রকাশে বাংলাদেশের আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখদের অবদানের কথা সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন।’

বঙ্গীয় সাংবাদিকতায় আলেম-উলামাদের অবদানগত সূচনা কথা তুলে ধরে লেখক ড. মোহম্মদ ইকবাল হোছাইন গ্রণ্থের ভূমিকাতে লিখেছেন, ‘বৃটিশ শোষণ থেকে মুক্তির প্রথম দাবীদার মাওলানা হযরত মোহানী একজন সফল দাঈ ছিলেন ঠিক তেমনি মৌলভী আব্দুল খালেক ১৮৭৮ সালে অটোম্যান খিলাফতে রাশিয়ার আক্রমণের প্রতিবাদে প্রথম ‘মহাম্মদী আখবার’ প্রকাশ করে সাংবাদিকতার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ‘মহাম্মদী আখবার’ প্রকাশের মাধ্যমে বাঙালি উলামা-মাশায়েখের পত্র-পত্রিকা প্রকাশের যে পথচলা শুরু হয়েছিল পরবর্তীতে তাদের আর পিছে তাকাতে হয়নি। ১৭৮০ সালে জেমস্ হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’ প্রকাশ বঙ্গে সংবাদপত্রের সূত্রপাত করলেও ১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর মিশন হতে ‘দিকদর্শন’ নামে প্রথম বাংলা সাময়িকী প্রকাশ পায়। দিকদর্শন প্রকাশের একযুগেরও অধিক সময় পর ১৮৩১ সালে মৌলভী আলীমুল্লাহ সম্পাদিত ‘সমাচার সভারাজেন্দ্র’ প্রকাশিত হয়। প্রাপ্ত রেকর্ড অনুযায়ী এটি মুসলিম সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা।’

বইটির মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩০৪। মুদ্রিত মূল্য ১৭২ টাকা। বইটি কিনতে চাইলে ঢাকার আগারগাঁওস্থ অথবা জাতঅয় মসজিদ বায়তুল মোকররমে অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ক্রয় করতে পারেন। অথবা কল করতে পারেন ৮১৮১৫৩৮ এই নাম্বারে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন www.islamicfoundation.gov.bd। এছাড়া ঘরে বসে বইটি কিনতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন ০১৮৫৬১৪৪৪৪১ এই নাম্বারে।

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।