ফিচার মুসলিম উম্মাহ

ফিলিস্তিনের চিঠি— লুণ্ঠিত আকসার জন্য নিষ্ফল রক্তক্ষরণ

যেই মুহূর্তে এই কথাগুলো লিখছি আমি, তখনো মসজিদে আকসার প্রতিবেশীরা বিপদগ্রস্থ ও নির্যাতীত। প্রতি পদে পদে তারা বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। একমাত্র আশ্রয়স্থল বাড়ীগুলোর উপর মুহুর্মুহু বোমা ফেলা হচ্ছে। জীবনের নিশ্চয়তা নেই কোথাও। শান্তি চাচ্ছে সবাই। কিন্তু শান্তি!  সে তো অনেক দূরের পথ। কয়েক দিন আগে এক ইহুদি ছাত্র নিহত হয়েছে। এখন তার প্রতিশোধ শতভাগ কড়ায় গণ্ডায় হিসেব করে নিতে হবে যে…

গত সপ্তাহে এক ফিলিস্তিনী যুবক কাজে বেরিয়ে আর ঘরে ফিরেনি। পরে জানাজানি হলো যে, তথাকথিত সীমান্ত বেড়ার পাশ ঘেঁষে হাঁটার অপরাধে ইহুদী সৈন্যরা তাকে হত্যা করেছে। তার রক্তের প্রতিশোধ নেয়া হবেনা? তার রক্ত কী মূল্যহীন? অথচ এক ইহুদীর রক্তের এত দাম! তার রক্তের বদলা নিতে ক্ষণে ক্ষণে ক্ষেপণাস্ত্রের পর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ফিলিস্তিনের জমিন কেঁপে কেঁপে উঠছে!

আরে না, না। আমি এ প্রশ্নের জবাবের আশাই করছিনা ,কারণ এর উত্তর তো আমার জানা। আরবরা নিজেরাই নিজেদের রক্তকে মূল্যহীন করেছে। নিজেরাই নিজেদের প্রাপ্য অধিকার নষ্ট করেছে। নেকড়ের হিংস্র থাবার সামনে খাবার হিসেবে স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে উপস্থাপন করেছে।

ধর্মের ব্যাপারে আরবদের অবহেলা তাদেরকে ঝগড়াটে ও সংঘাতময় বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে ফেলেছে। কারো ব্যাপারে কেউ মাথা ঘামাচ্ছেনা। নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে তারা তৎপর। সুতরাং পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কীটরা (যাদেরকে আমি পৃথিবীর জঞ্জাল বলি) তাদের ব্যাপারে আগ্রহী হলে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। যদি শুনি তাদেরকে কীটপতঙ্গ–পোকামাকড় ছেয়ে ফেলেছে, তাহলেও অবাক হবোনা।

ইহুদি গোষ্ঠী আসছে পোল্যান্ড, রাশিয়া, ইরান ও ইয়েমেন থেকে। এসেই তারা পুরানো স্বদেশকে, স্বদেশের স্মৃতিকে অনায়াসে ভুলে যাচ্ছে। বরং তারা সেটাকে জীবনের একটি বেদনাদায়ক অধ্যায় মনে করে এখন নবোদ্যমে ধর্ম–বিশ্বাসের ভ্রাতৃত্ব নিয়ে তাওরাত ও তালমুদের সংস্পর্শে নতুন জীবন যাপন করতে চায়। মসজিদে আকসার ভগ্নাংশের পাশে প্রভু হয়ে জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখে। আর ভাবে একদিন সমগ্র পৃথিবীর কর্তৃত্ব ও সাম্রাজ্য তাদের করায়ত্তে আসবে…

আর মুসলমান ? তাদের অবস্থা বলে লাভ কী? তারা তো রক্তের সম্পর্ককে ধর্মীয় ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের উপর প্রাধান্য দেয়। স্বার্থকে তারা ধর্ম– বিশ্বাসের সম্পর্কের  চেয়ে বেশী কিছু মনে করে। আর স্বজাতির অধিকারের উপর সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের মনতুষ্টিতেই তারা যেন বেশী আগ্রহী। যেদিকে তাকাই শুধু দেখি স্বার্থপরতা ও  সংঘাত…

সত্যি বলতে কী, নিজেরা যে অপরাধে অপরাধী একই অপরাধে অন্যের নিন্দা কীভাবে করি? বায়হাকীর একটি হাদিসে পড়েছি–“অচিরেই এমন সময় আসবে যখন  মানুষের কাছে  তার মূল্যবান চাবুক ও তীর বাইতুল মুকাদ্দাসের তুলনায় তুচ্ছ মনে হবে, অথবা পুরো পৃথিবী থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসকে মানুষ অধিক প্রিয় মনে করবে”। হাদিসের মর্মার্থ হলো- মসজিদে আকসা ও মানুষের মাঝে এমন একটি দূরত্ব সৃষ্টি হবে যখন মানুষ কামনা করবে- হায় ! মসজিদে আকসা হতে এক হাত দূরত্বে বসবাসের সৌভাগ্য ও যদি হত! আর সেটাই হয়েছিলো এক হাজার বছর পূর্বে। এরপর মসজিদকে ক্রুসেডাররা ছিনিয়ে নিয়েছে। তাদের হাতে নব্বই বছর থাকার পর শত রক্ত নদী পেরিয়ে সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবী তা পুনরুদ্ধার করেছিলেন। অনেক বছর পর  আবার মুসলিম জাতির ভাগ্যে মসজিদ হারানোর কারণের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ফলে তা ইহুদিরা দখল করে নিয়েছে এবং তারা মসজিদের গণ্ডিতে থাকার অন্যায় অধিকার পাকাপোক্তও করে ফেলেছে। এরপর নিকৃষ্টতম অবস্থায় পৌঁছে তারা মসজিদকে বিরান করেছে ও মসজিদের প্রতিবেশীদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে মসজিদে আকসার ধ্বংসস্তূপের উপর তাদের রাজত্ব ও সাম্রাজ্যের সিংহাসন কায়েমের স্বপ্ন  দেখছে।

আমরা কি নিবীর্যই থেকে যাবো? নাকি আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে অবস্থা পরিবর্তনের আশায় নব চেতনায় উজ্জীবিত হবো? যে ঢেউ ও তরঙ্গ আরবদেরকে পশুপালনকারীর স্তরে নামিয়ে এনেছে ও দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলেছে, তা তাদেরকে অতল গহবরের দিকে  ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। এই পতন ও স্খলন থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় মহান আল্লাহ্‌র করুণা, দয়া, বুদ্ধিভিত্তিক জাগরণ ও সময়োচিত পদক্ষেপ ।

ইসলামী জাগরণের স্লোগান কী আবার উঠবে? ইসলামের ঝাণ্ডা কী আবার উড়বে? নাকি অন্যদের ঝাণ্ডার নিচে থেকে থেকে অতল গহবরে তলিয়ে যাব আমরা?? হারিয়ে যাবো আমরা ???


মুহাম্মাদ আল-গাজালী (মিশর) রচিত দারুশ শুরুক, কায়রো, মিশর থেকে প্রকাশিত الحق المر  (তিক্ত সত্য) নাম গ্রন্থ থেকে অনুবাদ করেছেন মুহাম্মাদ মুহসিন মাশকুর


 

Comment

লেখক পরিচিতি

মুহাম্মাদ মুহসিন মাশকুর

মুহাম্মাদ মুহসিন মাশকুর। হাফেজ ও মাওলানা। তরুণ গবেষক। জন্ম ফেনীতে। মুহসিন মূলত পড়াশোনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশোনা করেছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগে অনার্সের ইতিহাসে সেরা রেজাল্টটি তার। বর্তমানে মুহসিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. ইউসুফের অধীনে এম.ফিল করছেন। তার গবেষণার বিষয়, ‘দ্য মেথড অফ টিচিং দ্য মিনিং অফ আল কুরআন : এন এম্পিরিক্যাল স্টাডি অন বেঙ্গলি স্পিকিং পিপল।'
মুহসিন স্বপ্ন দেখেন, প্রতিটা বাঙালি মুসলমান আল কুরআনের অর্থ জানবেন। এ পর্যন্ত একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তাঁর কয়েকটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের পথে। অনার্সে কলা অনুষদে সর্বোচ্চ রেজাল্টের জন্যে পেয়েছেন ‘কুদরত-ই-খুদা বৃত্তি’, ‘ডিন এওয়ার্ড অফ অনার' মাস্টার্সের জন্যে পেয়েছেন, ডিন এওয়ার্ড অফ এক্সিলেন্স' এবং কলা অনুষদে সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্যে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’।
কেবল একাডেমিক পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত নন মুহসিন। টেকনোলজি নিয়ে আছে তাঁর বেজায় আগ্রহ। ছেলেবেলা থেকেই গ্যাজেটের পোকা তিনি, ট্রাবলশুটার। টেকনোলজিতে তাঁর বেশ কিছু প্রফেশনাল কোর্সও করা আছে। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিচালনা ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আয়োজিত ফাউন্ডেশন স্কিলস ডেভেলপমেন্ট কোর্স করেছেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং সফট স্কিলসের উপর। তাতে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সনদ পেয়েছেন। লিড পরিচালিত ‘সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম ইন লিডারশিপ এক্সিলেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট কোর্স করেছেন। তাতে পিয়ারসন ইউকে এর সার্টিফিকেট পেয়েছেন।
এছাড়াও সামাজিক কাজে তাঁর দায়বোধ আছে। নবম থেকে ইন্টার পড়ুয়া ছাত্রদের তিনি নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণে কাউন্সেলিং করেন এবং ইংরেজি শেখান। তাদের নিয়ে পতিষ্ঠা করেছেন ‘লিভ ওয়েল’ নামে একটি মোটিভেশনাল প্রতিষ্ঠান।
অংশগ্রহণ করে থাকেন টেলিভিশনে বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠানে। সাধারণ মানুষের মাঝে কুরআনের মর্ম ও এর শিক্ষা ব্যাপক প্রচারের লক্ষ্যে কাজ করছেন অনেকদিন ধরেই। সেই সূত্রে কাজ করেছেন নানাবিধ প্রতিষ্ঠানে; একাডেমী অফ কুরআন স্টাডিজ, কুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশনসহ আরো অনেক জায়গায়। তরুণ ও অভিজ্ঞ কুরআন পঠন-পাঠনে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্টার ফর কুরআন স্টাডিজ (সি.কিউ.এস)।

কমেন্টস করুন