নারী ফিচার

নারী শিক্ষার ব্যাপারে কী বলেছে ইসলাম?

ইসলামে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে নারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে একটি পরিবারকে সুশিক্ষিত করে তুলতে হলে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা যদি কোরআন ও হাদীস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাব, নবী (সা.) সর্ব প্রথম নারীদেরকে শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং এই শিক্ষার বিধান সর্ব প্রথম বাস্তবায়ন করার সুবর্ণ সুযোগ পান রাসুলে পাক (সা.) -এর প্রিয় সহধর্মিণী হজরত খাদীজাতুল কুবরা (রা.)।

মহানবি (সা.) দ্বিধাহীনভাবে ঘোষণা করেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন ফরজ-অবশ্য কর্তব্য। আরবের মাটিতে উম্মি নবি (সা.) নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষা গ্রহণকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগের নারীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। হজরত মোহাম্মদকে (সা.) শিক্ষানুরাগী নারীরা একবার বললেন, আপনি জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্য সবসময় পুরুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন। তাই আমাদের জন্য একদিন নির্দিষ্ট করুন। মহানবি (সা.) সে অনুযায়ী তাঁদের শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনকি তিনি প্রতিনিধি পাঠিয়েও নারীদের শিক্ষা দিতেন। ফলে অনেক নারী জ্ঞানীর উদয় হয়েছিল, যারা ইসলামের মহান শিক্ষা প্রচারে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

অগণিত হাদীস দ্বারা এটাও সুস্পষ্ট প্রমাণিত নবী (সা.) নিজেই নারীদেরকে শিক্ষাদান করতেন, নারীদেরকে শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করতেন। সাহাবায়ে কেরামের নিকট থেকে নারীরা শিক্ষা গ্রহণ করতেন এমনকি বড় বড় সাহবীগণও নারীদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতেন। হজরত জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) বর্ণিত হাদীসে আছে- ‘একবার এক নারী রাসূল (সা.) -এর দরবারে এসে কিছু বিষয় শিক্ষা গ্রহণ করলো। বিদায় নিয়ে যাবার সময় রাসূল (সা.) তাকে বললেন আর জানার মত কিছু থাকলে অন্য সময় জেনে নিও। নারীটি আরজ করলো- ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আপনাকে না পাই অর্থাৎ যদি আপনি দুনিয়াতে না থাকেন তখন কি হবে? রাসূল (সা.) বললেন- আবু বকর (রা.) এর নিকট তখন শিক্ষা গ্রহণ করিও’ (বুখারী ও মুসলিম, তিরমিজী)।

ইসলামী দর্শন নারী শিক্ষার উৎসাহদাতা ও পথপ্রদর্শক। ইসলামে নারী শিক্ষার সুযোগ সীমিত এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। মুসলিম সমাজেও নারী শিক্ষক, অধ্যাপক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও প্রযুক্তিবিদের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং যত দূর সম্ভব ইসলামী জীবনবিধান প্রদত্ত সীমারেখা ও অনুশাসন মেনে নারীর জন্য উপযুক্ত শিক্ষা তথা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।

রাসূল (সা.) -এর যুগে এবং পরবর্তী সময়ে অগণিত মহিয়সী মুসলিম নারী শিক্ষাদান করেছেন এবং তারা শিক্ষকতা করে নিরক্ষরতা দূর করেছেন। নারী সাহাবীদের মধ্যে অনেকে ছিলেন অগাধ পাণ্ডিত্ব্যের অধিকারী। হজরত আয়শা (রা.) ছিলেন হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রের এক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। চার খলিফা সহ বড় বড় সাহাবীরা তার নিকট থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সা.) -এর সাহাবীরা যখনই কোন মাসআলার ব্যাপারে সন্দেহ বা সমস্যায় পড়তাম তখনই আমরা হজরত আয়শা (রা.) এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম এবং সঠিক সমাধান পেয়ে যেতাম (তিরমিজী, মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা-৫৭৪)। পুরুষ সাহাবীগণ নারী সাহাবীদের নিকট মাসআলা শিক্ষার জন্য যেতেন যা উক্ত হাদীসে উল্লেখ আছে। এর দ্বারা প্রমাণ হলো- নারীদের জন্য শিক্ষকতা করা বা নারীদের নিকট গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার ব্যাপারে ইসলামের কোনো বাধা নেই। তবে শর্ত হলো সর্বদা পর্দা রক্ষা করতে হবে। কেউ যদি পর্দাহীন হয় তাহলে সে তার চরিত্র ও নৈতিকতা হারিয়ে ফেলবে। আর চরিত্র নষ্ট হলে তো শিক্ষা লাভ করেও লাভ নেই।

Comment

লেখক পরিচিতি

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ। তরুণ লেখক। আলেম ও গবেষক। দীর্ঘদিন যাবত দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজপোর্টালে লিখছেন। কাজ করেছেন সুনামধন্য কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে।
বর্তমানে এই তরুণ লেখক আমাদের সময়.কম অনলাইন নিউজ পোর্টালের সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন দৈনিক বাংলাদেশের খবর পত্রিকার ইসলামি বিভাগের।

কমেন্টস করুন