মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল গত বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক এক চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইসরাইলী গোয়েন্দারা মুসলিমবিশ্বে সামরিক শক্তিতে কিছুটা পিছিয়ে পড়া দেশগুলোকে টার্গেট করে তাদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি ও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শান্তিচুক্তির পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ সুদানও একই পথে পা বাড়িয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হায়দার বৌদাভি সিদ্দিকি খুরতুমে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বলে জিয়ো নিউজ উর্দুর খবরে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরাও ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে চাই। কূটনৈতিক এ যোগাযোগ সুদানের উপকারে আসবে বলেই আমরা মনে করি।
গুঞ্জন উঠেছে মুসলিমবিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ সৌদি আরবের ব্যাপারেও। কেউ কেউ অভিযোগ উঠিয়েছেন, সৌদি আরবও ইহুবাদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী। তবে, ইসলামভিত্তিক সংবাদ সংস্থা দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো সৌদি আরব ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে চায়, এই খবর পুরোপুরি সত্য নয়। এ বিষয়ে সৌদি আরব নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছে, ফিলিস্তিন স্বাধীন না হলে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক কোনো ধরনের চুক্তিতে তারা আগ্রহী নয়।
গত বুধবার সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান ঘোষণা করেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের নীতি অনুসরণ করে সৌদি আরব কিছুতেই ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে যাবে না। তিনি আরও জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে না এলে আমরা ইসরাইলের সঙ্গে হাত মেলাতে পারি না। এদিকে সৌদি আরবকেও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছে আমেরিকা।
ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার গত মঙ্গলবার এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতেরমত সৌদি আরবেরও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নেয়া মঙ্গলজনক হবে। জ্যারেড সাংবাদিকদের বলেন,দেশটি যদি ইসরাইলের সঙ্গে সমঝোতা ও সম্পর্ক উন্নয়ন করে তাহলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ইরান চাপের মুখে পড়বে এবং এ চুক্তি শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদেরও কল্যাণ বয়ে আনবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের কথা গত সপ্তাহে ঘোষণা করার পর থেকে আরব বিশ্বের বৃহত্তম দেশ সৌদি আরব নীরব থাকলেও বুধবার তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের ফলস্বরূপ,পশ্চিম তীরের কিছু অংশের সংযোজন স্থগিত করতে সম্মতির কথা জানিয়েছিল ইসরাইল। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই পরিকল্পনা এখনও বিদ্যমান রয়েছে।
উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের (জিসিসি) দুই সদস্য দেশ বাহরাইন ও ওমান সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইলের মধ্যে এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতার এখনও সাড়া দেয়নি। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা মনে করছেন, মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ সৌদি আরবকর্তৃক ইহুদি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হলে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।