ফিচার মতামত-মুক্তমত

‘যে মরে গেলো, সে-ই তো বেঁচে গেলো— শুরু হলো তার আসল জীবন’

লিখেছেন মিরাজ রহমান

এবারের ঈদটা একটু ভিন্নরকম। করোনায় আতঙ্কিত ঈদ। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ঈদুল ফিতর। অতীত ইতিহাসে আমার জীবনে এমন ঈদ আর আসেনি। শত বছর আয়ূপ্রাপ্ত কোনো মুরব্বির জীবনেও মনে হয় এমন ঈদের সাক্ষাৎ হয়নি।

ভিন্ন রকম ঈদটাকে একটু অন্যরকমভাবে কাটাতে চেয়েছিলাম। ঈদের নামাজ শেষে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক-মুরব্বিসহ ভালোবাসা ও ভালোলাগার মানুষগুলোর খোঁজ-খবর নিচ্ছিলাম ফোনে ফোনে। প্রতি বছর যাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, এবার হলো ফোনালাপ। দুধের সাধ ঘোলে মিটানো আরকি…

কথা বলছিলাম সেজো ভাবির সঙ্গে, রোকেয়া নাসির। ভাবি আমার ওপর একটু রাগ ছিলেন। হয়তো সেটা সঙ্গত কোনো কারণে অথবা হয়তো কোনো অকারণে। কথার ফাঁকে ভাবি বললেন, ‘মরে যাওয়া কী খারাপ কিছু নাকি? মরে যাওয়াই বরং ভালো। যে মরে গেলো, সে-ই তো বেঁচে গেলো— শুরু হলো তার আসল জীবন।’

সুন্দর পরিসমাপ্তিতে ভাবি সঙ্গে কথা শেষ হলো যথারীতি। কিন্তু বাক্যটা আমার মাথায় গেথে গেলো— ‘যে মরে গেলো, সে-ই তো বেঁচে গেলো— শুরু হলো তার আসল জীবন।’ আপনার আমার— আমাদের সবার জীবনের চিরসত্য হলো— মৃত্যু। চাইলেও মরতে হবে, না চাইলেও মৃত্যু আসবে। মানবজীবনের সব মিথ্যার মাঝে কোনো একটি বিষয় যদি সত্য থাকে তবে সেটা— মৃত্যু। আল্লাহ মহান পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘কুল্লু নাফছিন জাঈকাতুল মাউত। প্রত্যেক প্রাণী মরণশীল।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত— ১৮৫; সুরা আম্বিয়া, আয়াত—  ৩৫; সুরা আনকাবুত, আয়াত— ৫৭) জন্ম লাভ করেছি মানে; মৃত্যু একদিন আসবেই।

উল্কার রেডিওমেট্রিক বয়স নির্ণয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে প্রায় ৪৫৪ ± কোটি বছর বয়সের এই পৃথিবীতে কেউ বেঁচে থাকতে পারেনি। কেবল মানুষ নয়; কোনো প্রাণীও অমরত্ব লাভ করেনি। কোনো একটি নজির নেই বেঁচে থাকার। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, ‘হে নবী! তোমার পূর্বেও আমি কোনো মানুষকে অমরত্ব দান করিনি। তোমার মৃত্যু হলে ওরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে?’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত— ৩৪)

এখন প্রশ্ন হলো, মৃত্যু কী? মরে যাওয়া মানে কী শেষ হয়ে যাওয়া নাকি নতুন কোনো কিছুর শুরু হওয়া? মরে যাওয়া মানে কি হারিয়ে যাওয়া নাকি বেঁচে যাওয়া?

মৃত্যু মানে হইলৌকিক জীবনের ইতি টেনে পরলৌকিক জীবনে প্রবেশ করা। রূহ বা আত্মার জগত স্থানান্তর। ক্ষণস্থায়ী জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনে যাত্রা। মৃত্যু মানে জীবনের রূপান্তর। মৃত্যু হওয়া মানে হারিয়ে যাওয়া কিংবা শেষ হয়ে যাওয়া নয়; বেঁচে যাওয়া কিংবা চিরস্থায়ী জীবনের সূচনা ঘটা।

মরতে যখন হবেই জন্ম তাহলে কেন হলো? এই জীবনে কেন এলাম আমরা? ভিন্ন একটি জগতে কেনইবা আবার যেতে হবে আমাদের?

একটি জগতের জন্যই মূলত এতোগুলো জগতের সৃষ্টি। জন্ম লাভ করা আবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পরা। যাত্রাটা অনেকটা এমন— মনে করুন আপনি সৌদি আরব যাবেন। উদ্দেশ্য হজব্রত পালন করা। বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলেন এবং এয়ারপোর্টে গিয়ে প্লেনে বসলেন। এরপর সৌদি পৌছে আবার বাস বা গাড়িযোগে হোটেলে গেলেন এবং সর্বশেষ কাঙিক্ষত উদ্দেশ্য সফল হলো— হজব্রত পালন করতে সক্ষম হলেন আপনি। প্রতিটি মানুষের প্রকৃত গন্তব্য আখিরাত। পরকালীন জীবনে আপনি কেমন থাকবেন না থাকবেন, তার প্রস্তুতিস্থল হলো— এই পৃথিবী। যাত্রাপথ। সামান্যক্ষণের বাসযাত্রা অথবা প্লেন ভ্রমণের মতো। প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো— পুনরুত্থিত হওয়া এবং ওপাড়ের জীবনে সফলতা লাভ করা। পুনরুত্থিত হতেই হবে এবং এটাই চিরসত্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন। তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। আবার তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন তিনিই।’ (সূরা হজ, আয়াত— ৬৬)

পৃথিবী হলো— দারুল আমল বা কর্মক্ষেত্র। আর আখিরাত হলো— দারুল জাঝা বা প্রতিদান জগত। আর মৃত্যু হলো ‘দারুল আমল’ থেকে ‘দারুল জাঝা’য় গমনের দরজা। কর্মের জগতে রয়েছে কর্ম; রয়েছে অ-কর্মের অবকাশ। কর্মজগতের কর্ম আর অ-কর্মের ভিত্তিতে সজ্জিত হবে প্রতিদান জগত। সেখানে থাকবে শুধু প্রতিদান। থাকবে না কোনো কর্ম বা অ-কর্মের কোনো অবকাশ।

আল্লাহ মহান পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর তোমাদের কর্মফল তো পূর্ণমাত্রায় বুঝিয়ে দেওয়া হবে কিয়ামতের দিন। এরপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে দাখিল করা হবে— সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো ছলনাময় ভোগ ছাড়া কিছুই নয়। (সূরা আল ইমরান, আয়াত— ১৮৫)

গোটা মানবজীবনটাই হলো পরীক্ষাকেন্দ্র। একটি পরীক্ষার হল। সীমিত প্রশ্ন। নির্দিষ্ট উত্তর। পরীক্ষা শেষে অপেক্ষ্যমান চূড়ান্ত সফলতার হাতছানি অথবা শাস্তি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘পুণ্যময় তিনি, যাঁর (কুদরতের) হাতে রাজত্ব। তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করেন; কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, মহাক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক, আয়াত— ২)

সুতরাং প্রকৃত বুদ্ধিমান সে ব্যক্তি; পরীক্ষার হলের সময়কুটুকে যর্থাথ মূল্যায়ন করে এবং সঠিক উত্তর প্রদানের মাধ্যমে চূড়ান্ত সফলতা অর্জনে সচেষ্ট হয় যে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান সে; নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য উপার্জন করে যে। আর অক্ষম সে; নিজেকে প্রবৃত্তির অনুগামী করে এবং আল্লাহর প্রতি অলীক প্রত্যাশা পোষণ করে যে। (জামে তিরমিযী, হাদীস নং— ২৪৫৯)

হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! সবচাইতে বুদ্ধিমান লোক কে? তিনি (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি অধিকহারে মৃত্যুকে স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত থাকে।’ (ইবনে মাজাহ)

পরীক্ষার হল বা পরীক্ষাকেন্দ্র কি সব সময় থাকা যায়? যায় না। পরীক্ষার হল থেকে বের হতে পারাকেই অনেকটা বেঁচে যাওয়া মনে হয়। এছাড়া ইহজগতকে কারাগারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার আর কাফিরের জন্য জান্নাত।’ এর মানে কারাগারে যেমন মানুষ সব সময় থাকে না; থাকতে চায় না— দুনিয়াও মুমিনের সব সময় থাকার স্থান নয়। দুনিয়া হলো কেবলই আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং প্রকৃত জীবনের পাথেয় তৈরিতে ব্যস্ত থাকা।

মৃত্যু আসবেই। মৃত্যু থেকে পালিয়ে থাকার কোনো অবকাশ নেই। নেই কোনো বেঁচে থাকার উপায়-পদ্ধতি। আল্লাহ মহান পবিত্র কোরাআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যে মৃত্যু থেকে পালাতে চাও, সে মৃত্যুর সঙ্গে অবশ্যই তোমাদের সাক্ষাৎ হবে। তারপর তোমাদের সেই মহান আল্লাহর কাছে ফেরত পাঠানো হবে; যিনি প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সব বিষয় জানেন এবং তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল ও কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।’ (সুরা জুমআ, আয়াত— ৮)।

অন্য এক আয়াতে আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগালে পাবেই; এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও।’ (সুরা নিসা, আয়াত— ৭৮)

মৃত্যু ঘটবে; তবে কার কখন মৃত্যু হবে এবং কীভাবে মৃত্যু ঘটবে— তা কারো জানা নেই। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘মানুষের চোখের দুই ভ্রুর মাঝখানে মৃত্যুর তারিখ লেখা রয়েছে। কিন্তু তা কোনো মানুষই দেখতে পায় না।’ (আল হাদিস)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই কখন কেয়ামত হবে; তা শুধু আল্লাহই জানেন। তিনিই মেঘ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন জরায়ুতে কী আছে। অথচ কেউই জানে না আগামীকাল তার জন্য কী অপেক্ষা করছে এবং কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু হবে। শুধু আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সব বিষয়ে অবহিত।’ (সূরা লোকমান, আয়াত— ৩৪)

মৃত্যু হবে। মরণ আসবেই— তবে অকাল মৃত্যু বলতে কিছু নেই। আমরা অনেক সময় অনেকের ক্ষেত্রেই বলে থাকি বা লিখে থাকি— অকাল মৃত্যু ঘটেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে ‘অকাল মৃত্যু’ বলতে কোনো কিছু নেই। কারণ সবার মৃত্যুর দিন-ক্ষণ, তারিখ সবকিছু পূর্বেই নির্ধারিত। নির্ধারিত সময়েই মৃত্যু বর‌ণ করেন সবাই। নির্দিষ্ট সময়ের এক মুহূর্ত আগে বা পরে কারো মৃত্যু হয় না। একেক জন মানুষ/প্রাণী একেক সময় মৃত্যুবরণ করলেও প্রত্যের মৃত্যুর সময় ও তারিখ নির্দিষ্ট। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি কোনো জনপদকে ধ্বংস করিনি, কিন্তু তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল। কোনো সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট সময়ের আগে যায় না এবং দেরিও করে না।’ (সুরা হিজর, আয়াত— ৪৫)

মৃত্যু বা জগত রূপান্তরের দুটি অবস্থা রয়েছে। এক. ভালো মৃত্যু। দুই. মন্দ মৃত্যু। কারো মৃত্যু হবে সহজ-সুন্দর এবং কারো মৃত্যু হকে কঠিন-ভয়াবহ। আল্লাহ মহান পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘এবং যদি তুমি দেখতে মৃত্যুর সময় ফিরিশতাগণ কাফিরদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের নফস হরণ করছে এবং বলছে তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ করো।’ (সুরা আল-আনফাল, আয়াত— ৫০) অপরদিকে আল্লাহ মহান আরো ইরশাদ করেছেন, ‘ফিরিশতাগণ মৃদুভাবে মুমিনের প্রাণ কবজ করবে পবিত্র থাকা অবস্থায় এবং বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। তোমরা যা করতে যা ফলে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা আন-নাহল, আয়াত— ৩২) যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন মানুষের অন্তরের চোখ খুলে যাবে। সে তখন ভাল কাজ সম্পাদন করার জন্য আরো সময় কামনা করবে। কিন্তু তাকে আর সময় দেওয়া হবে না।

অহরহই আমরা বিপদে পরে, সামান্য মুসিবতে পরলে বলে উঠি— ‘আয় মাবুদ আমারে উঠিয়ে নাও। মরণ দাও আমাকে।’ এমনটা বলা একেবারেই উচিত না। মৃত্যু প্রত্যাশা করাকে নিষেধ করা হয়েছে ইসলামে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বিপদের কারণে তোমাদের কেউ যেন কিছুতেই মৃত্যু প্রত্যাশা না করে। কারো যদি মৃত্যু প্রত্যাশা করতেই হয়, তাহলে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমাকে বাঁচিয়ে রাখো, যতক্ষণ আমার জন্য জীবন কল্যাণকর এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর।’ (বুখারি শরিফ)।

এছাড়া ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী পুনর্জন্ম লাভের বিষয়টিও সম্পূর্ণ ভ্রান্ত একটি ধারণা। কোনো মানুষ মৃত্যুর পর পুনরায় দুনিয়ায় আগমন করতে পারে না। মৃত্যুর পর সৎকর্মশীল মানুষের রুহ বা আত্মা ‘ইল্লিয়্যিন’ নামক স্থানে থাকে। কিয়ামত পর্যন্ত পরম শান্তিতে সেখানে অবস্থান করবে এবং হাশরের দিন বিচারকার্য শেষে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর অবিশ্বাসী ও পাপী লোকদের রুহ ‘সিজ্জিন’ নামক স্থানে থাকে। এতে তারা হাশরের মাঠে বিচারকার্য শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত অশান্তি ভোগ করতে থাকবে। বিচারকার্য শেষে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সুরা মুতাফিফফীন, আয়াত— ৭-১৮)

চিরসত্য মৃত্যু নিয়ে চিরসত্য অবস্থানকে গ্রহণ করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। পৃথিবীতে বহু মানুষ মৃত্যুকে অস্বীকার করেছেন; কিন্তু তারা হেরে গেছেন মৃত্যু সত্যতায়। সুতরাং মৃত্যু যখন হবেই, শুভ মৃত্যু পথে চলাটাই অধিক যুক্তিযুক্ত নয়কি?

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।