পরিবার-সমাজ ফিচার

প্রবীণদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে

ইসমাইল মাহমুদ : আমাদের বর্তমান সমাজে ছেলে-মেয়েরা বিয়ে-শাদী করার পর নিজেদের পরিবার আর সংসার নিয়ে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে পরেন। কর্মক্ষেত্র, নিজের ক্যারিয়ার, নিজ সন্তানের ভবিষ্যৎসহ নানাবিধ কারণে ছেলে-মেয়েদের মা-বাবা এবং পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের থেকে দূরে থাকেন। কোনো কোনো ব্যক্তি নিজ দেশে বাবা-মা বা বয়োজ্যেষ্ঠদের রেখে জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্য দেশে পাড়ি জমান। সে ক্ষেত্রে বয়োজ্যেষ্ঠরা একাকিত্বে ভোগেন এবং সন্তান আর আর নাতি-নাতনিদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগ থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরা বঞ্চিত হন। বর্তমান আধুনিক শহুরে ব্যবস্থায় অনেক পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বা বয়োবৃদ্ধ পিতা-মাতাকে বোঝা হিসেবে মনে করা হয়। ফলে দেশে দেশে গড়ে উঠছে বৃদ্ধ নিবাস। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা যখন কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তখন আধুনিক সমাজব্যবস্থায়, বিশেষ করে শহুরে জীবনব্যবস্থায় মৃত্যুর দিনক্ষণ গোনা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেরই ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। শেষ বয়সে অনেক পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমের মতো জেলখানায় জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে হয়। যে পিতা-মাতা সন্তানকে সমাজে আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হাসিমুখে নিজের সুখ-আরাম-বিলাস ত্যাগ করেন সে সন্তানের দ্বারাই বয়োবৃদ্ধ পিতা-মাতা নির্যাতিত-নিগৃহীত হবার অনেক ঘটনাই ঘটে চলেছে আমাদের চারপাশে। অথচ আমাদের ধর্মে পিতা-মাতাকে যথাযথ মর্যাদা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নির্দেশ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন শরীফেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। মনে রাখতে হবে পিতা-মাতার সেবা ব্যতীত জান্নাতে যেতে পারবেন না কেউ।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘শুধু আমারই ইবাদত করো এবং পিতা-মাতার প্রতি সদয়তা প্রদর্শন করো। তাদের মধ্যে কোনো একজন অথবা উভয়ই যদি বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদের প্রতি কখনো কোনো প্রকার বিতৃষ্ণা বা নিন্দার ভাব প্রদর্শন করবে না; এবং তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)
‘আমি পিতা-মাতার প্রতি সদয় হতে নির্দেশ প্রদান করেছি; আর যদি তারা জ্ঞানের অভাবে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে ও তা মান্য করতে বলে তবে তা কোরো না। তুমি আমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে এবং আমিই তোমাকে তোমার কৃতকর্মের কথা জানাব।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৯)
তিরমিজি শরীফে  বলা হয়েছে, ‘সে ব্যক্তি আমাদের অর্ন্তভুক্ত নয়; যে আমাদের নবীনদের প্রতি ক্ষমাশীল নয় এবং যে আমাদের প্রবীণদের সম্মান করে না।’ একদিন একজন লোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বললেন, তার বেশ ক’জন সন্তান রয়েছে; তবে তাদের কাউকেই তিনি চুমু দেননি। উত্তরে নবীজী বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তার সেই বান্দাকেই ক্ষমা প্রদর্শন করবেন যারা অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে।’ (সহীহ বুখারী শরীফ)
উপরিউক্ত পবিত্র কোরআন ও হাদিস থেকে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে যে, ইসলামের উপরিউক্ত সত্য শিক্ষা আমরা কতটুকু পালন করছি? ইসলামের সমুদয় শিক্ষা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ধারণ করতে হবে এবং ইতিবাচক উদাহরণগুলোর মাধ্যমেই আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হবে। তবেই আমাদের ইহকাল ও পরকাল শান্তিময় হবে।
মনে রাখতে হবে, সন্তানকে সুশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পিতা-মাতার এটি একটি বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের বাল্যকাল থেকেই ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করবেন এবং পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের সত্যের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করবেন। পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের নৈতিক গুণাবলির বিষয়ে অবহিত করবেন যাতে করে সন্তানেরাও ওই-সকল গুণাবলি নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারে। তাদের মিথ্যা শপথ গ্রহণ পরিহার করতে হবে যাতে করে সন্তানেরাও এসব থেকে রক্ষা পেতে পারে। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমাদের বয়োবৃদ্ধ পিতা-মাতা ও সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠদের শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং নবীনদের স্নেহ প্রদর্শনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

ওকে/এমএইচ

Comment

লেখক পরিচিতি

ইসলাম প্রতিদিন

ইসলাম প্রতিদিন- এটি ইসলাম প্রতিদিন.কমের একটি অফিসিয়াল আইডি। যাদের নামে ইসলাম প্রতিদিনে কোনো আইডি নেই, আমরা সাধারণত এই আইডির মাধ্যমে তাদের লেখাগুলো ইসলাম প্রতিদিন.কমে প্রকাশ করে থাকি।