বেঁচে থাকার জন্য জীবিকার্জনের যে সব মাধ্যম রয়েছে এর মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য সর্বোত্তম পন্থা। ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে হালাল জীবিকার্জন এর বিশেষ সুযোগ রয়েছে। ইসলামে ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন। (আল বাকারা-২৭৫)
ব্যবসা-বাণিজ্য তথা ক্রয় বিক্রয় নবী রাসুলদের গুনের অন্তভূক্ত। আম্বিয়ায়ে কিরাম ব্যবসা পেশায় নিয়োজিত থেকে মানুষকে উপকার সাধন করেছেন। তারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সৎভাবে পরিচালনা করার কারনে মানুষের মনে নিজকে বিশ্বস্ত করে নেয়। বিশ্বস্ত ও সৎ ব্যবসায়িদের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা এমন লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে সালাত কায়েম করা থেকে এবং জাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখেনা তারা ব্যয় করে সেদিন কে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে পরিনামে তাদের সৎকাজের জন্য আল্লাহ উত্তম পুরুস্কার দিবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দিবেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন। (সূরা আন নুর-৩৭-৩৮)
বর্তমানে এ রকম অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে যারা সৎ, বিশ্বস্ত ও ইবাদত কারী তারা নিজ নিজ ব্যবসা কেন্দ্রে নামাজের স্থান তৈরি করে। অথবা মসজিদে আজান হলে ব্যবসা বন্ধ করে নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে যান। ব্যবসায়িক জিনিসপত্র সুন্দর ভাবে মেপে দেন। ব্যবসায়িক দ্রব্য সঠিকভাবে মেপে দেওয়া এত কম বেশী করা যাবেনা। পূর্ন ভাবে মেপে দেওয়াউৎকৃষ্ট। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা মেপে দেওয়ার সময় পূর্ন মাপ দিবে এবং ওজন করবে সঠিক দাড়িপাল্লায় এটাই উত্তম ও পনিামে উৎকৃষ্ট। (বানী ইসরাইল-৩৫)। ব্যবসা-বাণিজ্যের কোনো দ্রব্যে ভেজাল দিয়ে অসাধু পন্থা অবলম্বন করলে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা ঘোষনা করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বললেন, কিয়ামতের দিন অসাধু ব্যবসায়িরাগুনাহগারদের কাতারে উথিত হবে। (তিরমিজি)
ইসলামে ব্যবসায়িক অসাধুতার বিরুদ্ধে সতর্কবানী উচ্চারিত হয়েছে। চোরাকারকারী, মুনাফেকখোরী, মজুদদারী, কালো বাজারী, পন্যে ভেজাল দেওয়া ওজনে কারচুপি করা ধোকা প্রতারনা ও ঠকবাজীর আশ্রয় নেওয়া দামে হেরফের করা প্রভৃতি অসাধুর পথ ইসলামে নিষিদ্ধ। এই অসাধু ব্যবসায়িরা প্রিয় নবীর উম্মত নয়। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যবসায়ী ধোকাবাজী করে করে সে আমার উম্মত নয়। (মুসলিম)
পরিমাপ ও ওজন যারা কম করে তাদের জন্য ধ্বংস নির্ধারিত। যে সকল ব্যবসায়ী নিজের প্রপপ্য ঠিকমত বুঝে নেয় এবং যাদের সাথে ব্যবসা করে তাদের কম করে দেয় সেই সকল ব্যবসায়িদের ধ্বংস নির্ধারিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, পরিমাপ ও ওজনে যারা কম করে তাদের জন্য ধ্বংস নির্ধারিত। তারা যখন লোকদের থেকে নিজেদের প্রপ্য নেয় তখন পুরোপুরি নেয় এবং যখন লোকদের পরিমাপ বা ওজন করেদেয় তখন কম করে দেয় তারা কি বিশ্বাস করে না যে একটি কঠিন দিবসে তাদেরকে জীবিত করে উঠানো হবে। সেদিন সমস্ত মানবজাতি বিশ্ব জাহানের প্রভুর সামনে দাঁড়াবে। (সূরা মুতাফফিফীন-১-৬)
ব্যবসায়িক পন্যের কোনো দোষ থাকলে তা গোপন রাখা যাবেনা। ত্রেতার নিকট দোষের কথা জানাতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দোষমুক্ত পন্য বিক্রি করে ক্রেতাকে দোষের কথা জানায় না এমন ব্যক্তি সর্বদা অঅল্লাহর ঘৃনার মধ্যে থাকে এবং ফেরেশতারা সর্বদা তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। (ইবনে মাজাহ)
যে ব্যক্তি ব্যবসা বাণিজ্যে বা উপার্জনের ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের অন্তরকে আল্লাহর স্মরণে নিবদ্ধ রাখতে পারেন তার পক্ষে উপার্জনে প্রবৃত্ত হওয়া খুবই উত্তম। কোন ব্যক্তি যখন ত্যাগ স্বীকার করে সাওয়াব প্রাপ্তির আশায় মুসলিম জনপদে কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানী করে এবং ন্যায্যমূল্যে তা বিক্রয় করে তখন আল্লাহর কাছে তিনি শহিদী মর্যাদা পাবেন। রাসুল (সা.) বলেন, সত্যবাদী ও আমানদতার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী সিদ্দীক এবং শহীদদের সাথে থাকবে। ( তিরমিজি)