কুরআনের প্রতি মুসলমানদের ভালোবাসা চিরন্তন। এ ভালোবাসায় মানুষ অনেক অসাধ্যকেও সাধ্য করেছে। প্রতি যুগেই খোদাপ্রেমিকদের কুরআনের ভালোবাসায় এমন কিছু কাজ থাকে, যা বিস্মিত করে সবাইকে। ভালোবাসার তেমনি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন পাকিস্তানের এক অখ্যাত নারী নাসিম আখতার। সুই-সুতোর বুননে বিশ্বের প্রথম হাতে সেলাই করা কুরআনের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন তিনি। ৩২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় এ পাণ্ডুলিপিটি সম্পন্ন হয়েছে। ইসলামের প্রতি একান্ত ভালোবাসায় অনেক কঠিন কাজও বাস্তবে রূপ নেয়। এমনই একটি দুঃসাহসিক কাজ হাতে সেলাই করা কুরআনের পাণ্ডুলিপি। হাতে সেলাই করা এ কুরআনের ওজন ৬০ কেজি। এটি তুলা দিয়ে তৈরি। সোনালী রংয়ের কারুকাজ করে প্রতিটি পৃষ্ঠাকে সুসজ্জিত করা হয়েছে। কাভারে সিল্কের সুতো দিয়ে সুন্দরভাবে সজ্জিত করা হয়েছে।
নাসিম আখতার যখন এ কাজ শুরু করেন তখন তার বয়স তেমন বেশী ছিলো না। এমন নয় যে, অবসর জীবনের অলস সময় কাটাতে এটি করেছেন। এ হলো কুরআনের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা। ৩২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে সুই-সুতোয় কুরআনের পাণ্ডুলিপি তৈরি করে তিনি তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেন। এখন তিনি ৬০ বছরের বৃদ্ধা । কুরআনের অসামান্য পাণ্ডুলিপিটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পেরে এক বিশাল মাইল ফলক অর্জন করেছেন। এরজন্য ছিলো না কোনো বাজেট বা কোনো সংস্থার সহায়তা। ভালোবাসার টানে অনেক অসম্ভবও যে সম্ভব হয় তিনি তা-ই করে দেখালেন। আত্মার প্রশান্তি ও খোদার সন্তুষ্টিই এর একমাত্র প্রেরণা ও উৎসাহ।
নাসিম আখতারের অসামান্য এ কাজের খবর পেয়ে সৌদি আরব সরকার তাকে আমন্ত্রণ জানায়। পবিত্র কুরআনের এ পাণ্ডুলিপিটি তারা সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়। নাসিম আখতারের হাতে লেখা এ পাণ্ডুলিপিটি মসজিদে নববির কুরআর সংরক্ষণ মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়। মসজিদে নববির ৫নং গেট দিয়ে প্রবেশ করে বাম দিকে গেলেই চোখে পড়বে নাসিম আখতারের হাতে লেখা সুই-সুতোর বুননে পবিত্র কুরআনুল কারিমের তৈরি পাণ্ডুলিপিটি। পাঞ্জাব সংসদের স্পিকার চৌধুরী পারভেজ ইলাহি প্রেসিডেন্ট পদক ‘দ্য প্রেসিডেন্স প্রাইড অব পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য তার নাম প্রস্তাব করবেন। পবিত্র কুরআনুল কারিমের এ কপিটি গত ২১ সেপ্টেম্বর মদিনার মসজিদে নববিস্থ কুরআন মিউজিয়ামে উপহার দিয়েছেন নাসিম আখতার।
উল্লেখ্য যে, ১৯৮৭ সালের আগস্ট মাসে ৩০ বছর বয়সে এ কাজে হাত দেন তিনি। প্রত্যেক রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে কুরআনের আয়াত লিখতে বসতেন তিনি। রাত ছাড়াও তিনি প্রতিদিনের কাজ শেষ করে জোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময়ে কুরআনের আয়াত লেখার কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এভাবেই তার কেটে যায় ৩২ বছর। গত জানুয়ারিতে তার এ কাজ শেষ করেন। এ পাণ্ডুলিপিটির দৈর্ঘ্য ৫৬ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৩৮ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫৫ কেজি। পুরো কুরআন লিখতে ২৫ হাজার মিটার কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। এ কুরআনকে ২৪ পৃষ্ঠায় এক পারা এবং ৩ পারা করে ১০ খণ্ডে ভাগ করা হয়েছে। তবে শেষ পারায় রয়েছে ২৮ পৃষ্ঠা। প্রতি পৃষ্ঠায় ১৫টি করে লাইন রয়েছে।
কমেন্টস করুন