জীবন বিধান বিধান

রোগী দেখতে যাওয়ার ফজিলত ও বিধান

‘মানুষ’ কবিতার কবি আব্দুল কাদিরের প্রথম প্যারাটিতে তিনি উল্লেখ করেন‘হাশরের দিন বলিবেন খোদা হে আদম সন্তান , তুমি মোরে সেবা কর নাই যাবে ছিনু রোগে অজ্ঞান, মানুষ বলিবে তুমি প্রভু করতার, আমরা কেমনে লইব তোমার পরিচর্যার ভার? বলিবেন খোদা দেখনি মানুষ কেদেঁছে রোগের ঘোরে, তারি শুশ্রষা করিলে তুমি যে সেথায় পাইতে মোরে।’ কবিতাটি – কবির ভাষায় যে ব্যাক্তি রোগীর সেবা করল তারা আল্লাহর সেবা করল। যারা রোগীকে অবহেলা করল তারা আল্লাহর প্রতি অবহেলা করল সে জন্য শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদেরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। রোগীকে দেখতে যাওয়া উত্তম একটি কাজ। সর্বসময় মনে ধারনা রাখতে হবে সে অসুস্থ হয়েছে একদিন আমিও এরকম অসুস্থ হতে পারি,আমি যদি রোগীকে দেখতে যাই আমি অসুস্থ হলে আমাকেও দেখতে আসবে আর রোগীকে দেখতে গেলে জান্নাতে স্থান করে নেওয়া হয়।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্নিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যাক্তি কোন অসুস্থ ব্যাক্তিকে দেখতে যায় তখন আকাশ থেকে এক ফিরিশতা তাকে লক্ষ্য করে বলতে থাকে মুবারক হও তুমি এবং মুবারক হক তোমার এই পথ চলা এবং তুমি জান্নাতে একটি স্থান করে নিলে।’ (ইবনে মাজাহ শরীফ) মুসলিম শরীফে আরও বর্নিত রয়েছে, যে রোগীকে দেখতে গিয়ে যতক্ষণ সেখানে অবস্থান করে ততক্ষন সে জান্নাতের বাগিচায় অবস্থান করে। হজরত সওবান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, মুমিন বান্দা যখন অসুস্থ মুমিন ভাইকে দেখতে যায় যতক্ষণ পর্যন্ত সে অবস্থান করে সে যেন জান্নাতের বাগিচায় থাকে। (মুসলিম শরীফ)

রোগীর সাথে দেখা করলে নিজে রোগী হলে অন্য মানুষ দেখা কিংবা সেবা করতে আসবে। তাই সেবা যে একটা শ্রেষ্ঠ ইবাদত সেটি সহজেই অনুমেয়। হাদিসের আলোকে দেখা যায়, একজন মুসলমানের আরেক মুসলমানের কাছে ছয়টি হক রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম হক হলো কারো রোগ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি রাসূলকে (সা.)  বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যাক্তি সকালে কোন মুসলমান রোগিকে দেখতে যায় সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকে। যে ব্যাক্তি সন্ধ্যায় কোন মুসলমান রোগিকে দেখতে যায় পরদিন সকাল পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকেন। আর তাকে জান্নাতের একটি বাগান দান করা হয়।’ (তিরমিযী শরীফ)।

রোগীকে দেখতে গেলে প্রথমেই তার কপালে হাত রেখে তার অবস্থা জিজ্ঞাসা করতে হবে। রোগী অথবা রোগীর পরিবার পরিজনের সাথে এমন কথাবার্তা বলা উচিত নয় যাতে তারা রোগীর হায়াতের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যেতে পারে। সকলকে সান্তনার কথা বলতে হবে, কোন ভাবেই মন ভাঙ্গা কথা বলা উচিত নয়। (আদাবুল মুআশারাত)

রোগীকে দেখতে যাওয়ার পর তার সাথে নম্র ভদ্র ভাবে কথা বলতে হবে। আপনি ধৈর্য্য ধারন করুন, আমি আপনার জন্য দোয়া করি, অতি নিকটেই সুস্থ হয়ে হয়ে যাবেন, এই সমস্ত মঙ্গল জনক কথা বলে তাকে সাহস দিতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি কোন রোগীর কাছে যাবে কিংবা মরণোন্মখ ব্যাক্তির নিকট যাবে তখন তার সাথে মঙ্গলজনক কথা কথাবার্তা বল। কেননা, তুমি যা বল ফিরিশতাগন তার উপর আমিন আমিন বলে।’ (মুসলিম ও মিশকাত শরীফ)

রোগীর সেবা করা আমাদের মহান দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই ডাক্তারের উচিত রোগীকে ভালভাবে সেবা করা। কোন রোগী যদি ডাক্তারের ভাল ব্যাবহার পেয়ে দোয়া করে তাহলে তার দোয়া কবুল হয়ে যায়। অন্যথায় কোন রোগী যদি কোন ডাক্তারের ওপর অসুন্তুষ্ট হয়ে ডাক্তারের জন্য বদদোয়া করে সেটি ও আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। (ইবনে মাজাহ)

সুতরাং রোগীর দোয়া আল্লাহর দরবারে রোগীর দোয়া ফিরিশতাদের দোয়ার মতো কবুল হয়। হজরত উমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, তুমি কোন রোগীকে দেখতে গেলে তোমার জন্য দোয়া করতে বল। কেননা রোগীর দোয়া ফিরিশতাগনের দোয়ার মত হয়। (উসওয়াতে রাসুলে আকরাম স.)

Comment

লেখক পরিচিতি

মো. আবু তালহা তারীফ

একজন প্রাবন্ধিক ও বিশ্লেষক এবং গবেষক। দেশের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী মাদ্রাসা-ই-আলিয়া,ঢাকার থেকে দাখিল, আলিম, ফাজিল সাফল্যেও সাথে উত্তীর্ন হয়ে একই প্রতিষ্ঠানে কামিল হাদিস বিভাগে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগে অনার্স ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়ন করছেন তরুণ এই লেখক।
ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা করতেন তিনি। যার ফলে কলম ধরেছেন ছোটবেলা থেকেই। বিভিন্ন রচনা প্রতিযোগীতায় জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য বার পুরুস্কারও পেয়েছেন। দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকায় তার জীবনের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকের ধর্মীয় পাতায় তার লেখা দেখা যায় প্রতিনিয়তই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন বইয়ের সম্পাদনাও করেছেন তালহা তারীফ। নবম শ্রেনীতে অধ্যায়ন অবস্থায়ই তার লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয়। তরুন আলোচক হিসেবে মিডিয়া ও মাহফিল পাড়ায় তার ব্যপক পরিচিতি রয়েছে।

কমেন্টস করুন