ওয়াজ মাহফিল ইসলাম প্রচারের জন্য অন্যতম একটি মাধ্যম। প্রতি রাতেই শহর ও গ্রামের লোকেরা দশে মিলে টাকা উত্তোলন করে এই ওয়াজ মাহফিলের ব্যবস্থা করে থাকে। এই ওয়াজ মাহফিল আমাদের জন্য এক ঐতিহ্য বলা চলে। গ্রামে ওয়াজ মাহফিল হলে আত্মীয়-স্বজনরা ওয়াজ মাহফিলের উদ্দেশ্যে বেড়াতে আসেন। সেদিন ঘরে রান্না হয় উন্নত খাবার। ওয়াজ মাহফিলকে উদ্দেশ্য করে মাহফিল সংলগ্ন এলাকায় বসে ছোট ছোট দোকান, যা গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা মেলা বলে থাকে। তারা সেখানে গিয়ে আনন্দ উল্লাস করে। ফোটকা, বেলুনসহ কিনে যত খেলনা। সারা বিকাল ঘোরাঘুরি, সন্ধ্যায় বসে যায় কোরআনের বাণী শুনতে। আজ ওয়াজ মাহফিলে কত টাকাই বা খরচ হলো; কিন্তু সামান্য একটু বুদ্ধির জন্য এই ওয়াজ মাহফিলটি বিশ্বে প্রচার করা গেল না। বক্তা যতটুকু আলোচনা করলেন তা সেখানেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। বিজ্ঞানের উন্নতির এই যুগে প্রয়োজন ওয়াজ মাহফিলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প সময়ে কম কষ্টে অসংখ্য মানুষের কাছে ইসলাম প্রচার করা খুব সহজ হয়ে দাঁড়ায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে পৃথিবী আজ এখন হাতের মুঠোয়।
মসজিদের মিম্বারে জুমার আলোচনা, ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের কোরআনের বাণী ভিডিও করে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচার করা আজ আমাদের সুযোগ হয়েছে। আমাদের স্মরণ রাখা উচিত সব নবী রসুল তাদের যুগে তৎকালীন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মহান আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে প্রচার করেছেন। হজরত মুসা (আ.)-এর যুগে জাদুর প্রভাব ছিল অধিক। মুসা (আ.) সে যুগের প্রেক্ষাপটে আল্লাহ মুজেজা ব্যবহার করে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। ফলে অসংখ্য জাদুকর আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল। হজরত ঈসা (আ.)-এর সময়ে চিকিৎসাবিদ্যার ব্যবহার ছিল বেশি। তাই তিনি আল্লাহ প্রদত্ত চিকিৎসাবিদ্যা ব্যবহারের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করতেন। এমনকি আমাদের সর্বশেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) সে সময়ের প্রযুক্তির মাধ্যমে আল্লাহর বাণী প্রচার করেছেন। তখন সাহিত্যের প্রভাব ছিল খুব বেশি। তিনি আরবি সাহিত্য ব্যবহার করে আল্লাহর সুমহান বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আমাদের বুঝতে হবে বিজ্ঞানের কল্যাণে গোটা বিশ্বই এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। বর্তমান ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অন্য ধর্মাবলম্বীর মানুষ যেভাবে তাদের ধর্ম সারা বিশ্বে প্রচার করছে, তাদের তুলনায় আমরা মোটেও পারছি না। তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচারকার্য, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ব্যাপকহারে প্রচারের জন্য ইহুদিদের রয়েছে প্রায় সাড়ে আট লাখ ওয়েবসাইট, খ্রিস্টানদের রয়েছে পাঁচ লাখের বেশি। তাছাড়া অন্যান্য অমুসলিমদের রয়েছে চার লাখের বেশি ওয়েবসাইট। তারা তাদের ধর্মীয় বক্তব্য ভিডিও করে ওয়েবসাইট, ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুসলমানদের কাছে প্রচার করে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করছে। সে বিষয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আজ আমাদের উচিত ওয়াজ মাহফিলের পদ্ধতি একদিকে যুগোপযোগী উন্নত মানের করা; অন্যদিকে সমকালীন বাতিল শক্তির মোকাবেলা করার মতো যোগ্যতা, দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগের সক্ষমতা থাকা।
ওয়াজ মাহফিল পরে শোনা যাবে মুঠোফোন থেকে। মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল। এই মোবাইলে ওয়াজ মাহফিল শুনতে ধারণ করে নিয়ে এসে বাড়িতে মা, স্ত্রী, ছোট বোন, মেয়েসহ অন্য নারীদের শোনানো যেতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তিতে ওয়াজ মাহফিলে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা সব মুসলমানের ওপর অবশ্যকর্তব্য। উম্মতে মোহাম্মদীর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দাওয়াত, আদেশ-নিষেধ, দ্বীন প্রতিষ্ঠা বা নসিহতের দায়িত্ব। প্রযুক্তির ভয়ে আজ কিছু আলেম সত্য বলতে ভয় পাচ্ছেন। আজকের আলোচনা ইন্টারনেটে পোস্ট করলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া মোটেই উচিত নয়। এজন্য প্রয়োজন ওয়াজ মাহফিল কমিটিকে বক্তার বিষয় ও সময় আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেওয়া, যার ফলে উপস্থিত মুসলমানরা শুনতে আগ্রহ পোষণ করেন।
কমেন্টস করুন