ফিচার বই ভিডিও

বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ— ‘বয়ানুল কুরআন’

Featured Video Play Icon
লিখেছেন মিরাজ রহমান

কুরআনুল কারিম—আল্লাহ মহানের কালাম। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুলের ওপর নাজিলকৃত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব। রাসুল (সা.)-এর ওপর দীর্ঘ ২৩ বছরে এ কিতাব নাজিল হয়েছে। একজন খাঁটি মুমিন-মুসলমান বান্দা হিসেবে সবার আগে শুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন পড়তে শিখতে হবে, নিয়মিত তিলাওয়াত করতে হবে এবং অধ্যয়ন করতে হবে। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা এবং এ কিতাবের নিদের্শনা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করাও ইবাদত। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত পবিত্র কুরআন বুঝে তিলাওয়াত করা। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, ‘হে নবী, এটি এক বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি এ জন্য নাজিল করেছি—যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহে চিন্তা-ভাবনা করে এবং বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা ছোয়াদ, আয়াত : ২৯)

পবিত্র কুরআন বুঝে পড়তে হলে তাফসীর বা ব্যাখ্যাগ্রন্থের সহযোগিতা গ্রহণ করা আবশ্যক। আরবি ভাষায় নাজিল হওয়া কুরআনের বিভিন্ন ভাষার তাফসীরগ্রন্থ রয়েছে। ইসলামী স্কলারগণ বলেছেন, পবিত্র কুরআন চিরন্তন মুজিজা হওয়ার প্রামাণ হলো—১৪ শত বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় পবিত্র কুরআনের তাফসীরগ্রন্থ রচিত হলেও আজও এর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। বাংলা ভাষাতেও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলা ভাষায় বহু তাফসীরগ্রন্থ রচিত ও অনূদিত হয়েছে এবং পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। বাংলাতে যেসব তাফসীরগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর কিছু বিশদ কলেবরের আবার কিছু গ্রন্থ সংক্ষিপ্ত। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত তাফসীরগ্রন্থের তালিকায় বয়ানুল কুরআন  অন্যতম প্রসিদ্ধ ও সমাদৃত একটি।

বয়ানুল কুরআনের মূল লেখক বা রচয়িতা মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)। যিনি বিশ্বব্যাপী হাকিমুল উম্মত বা উম্মতের রূহানী চিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি। আধ্যাত্মিক জগতের একজন রাহবার হলেও লেখালেখির জগতেও মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর খেদমত বিশ্বময় সমাদৃত হয়েছে। তার রচিত একাধিক গ্রন্থ বহু ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষের আত্মার খোরাক জুগিয়েছে। মাওলানা আশরাফ আলী রচিত যেসব গ্রন্থ ভুবন আলোকিত করেছে, বয়ানুল কুরআন তার অন্যতম। অনন্য এ তাফসীরগ্রন্থটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাঈল বরিশালী।

বাংলা ভাষায় অনূদিত ও রচিত তাফসীরগ্রন্থের মাঝে বয়ানুল কুরআন গ্রন্থটি তাফসীরবিশারদ ও কুরআন-গবেষকদের বিশেষ পছন্দ। এ তাফসীরগ্রন্থটির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মূল লেখক মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) এ ব্যাপারে গ্রন্থটির ভূমিকায় লিখেছেন, ১. গ্রন্থটিতে কুরআন মাজিদের সহজ ও সরল তরজমা স্থান পেয়েছে। ২. বিভিন্ন শব্দের শাব্দিক অর্থ ও ব্যাখ্যা সংযোজিত হয়েছে। ৩. কুরআনের সাদৃশ্যপূর্ণ ও পারস্পরিক সাংঘর্ষিক বিষয়াবলির যথার্থ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ যুক্ত করা হয়েছে। ৪. একই আয়াতের বিভিন্ন তাফসীরের মধ্য থেকে সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যাখ্যাটি সংযুক্ত করা হয়েছে। ৫. মাজহাবী মতভেদযুক্ত তাফসীরের ক্ষেত্রে শুধু হানাফী মাজহাবের মতামত উপস্থাপন করা হয়েছে। ৬. পবিত্র কুরআনের মর্ম বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পূর্বাপর সংযোগ-সম্বন্ধের জন্য যোগসূত্র শিরোনামে আলাদা ব্যাখ্যা যুক্ত করা হয়েছে। ৭. সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আলেম-উলামার বিশেষ উপকারিতার কথা চিন্তায় রেখে বিশেষ টীকা বাড়ানো হয়েছে যাতে সুরা ও আয়াতের মাদানী ও মক্কী হওয়ার, অপ্রসিদ্ধ লুগাত, বালাগাতশাস্ত্রীর জরুরি বিষয়, জটিল বাক্যবিন্যাস, ফিকাহ ও কালামবিষয়ক সূক্ষ্ম তত্ত্ব উদ্‌ঘাটন, শানে নুজুল, রেওয়ায়াত, কিরআত ও বিভিন্ন বিধানের মতভেদগত দৃষ্টিভঙ্গি সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় বয়ানুল কুরআনের অনুবাদ এর আগেও হয়েছে। তবুও মাওলানা ইসমাঈল বরিশালী কেন আবার এই তাফসীরগ্রন্থের বঙ্গানুবাদ করলেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নতুন অনুবাদের কৈফিয়তে লিখেছেন, নিকট অতীতে (প্রায় এক শ বছর পূর্বে) হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) প্রণীত তাফসীরে বয়ানুল কুরআনে অন্তর্ভুক্ত তাফসীরের বিষয়সমূহ ও হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপন শৈলীর কারণে এ তাফসীরগ্রন্থটি শতাব্দীজুড়ে সমানভাবে প্রচলিত ও সমাদৃত। চলমান পাঠ-রুচি ও চাহিদা জরিপের আলোকে সাবলীল ভাষায় এবং মূল গ্রন্থে বিদ্যমান সকল বিষয়ের আনুপূর্বিক অনুবাদ উপস্থাপন সংগত মনে করা হয়েছে।

তাফসীরগ্রন্থ বয়ানুল কুরআনের প্রথম খণ্ড এটি। এ খণ্ডে যেসব বিষয় স্থান লাভ করেছেন, তা হলো— ১. আশরাফ আলী থানভীর (রহ.) সংক্ষিপ্ত জীবনী। ২. অনুবাদক পরিচিতি। ৩. অনুবাদকের জবানবন্দি। ৪. তাফসীরে বয়ানুল কুরআনের খুতবা। ৫. কতিপয় প্রতিপালনীয় বিষয়, যেগুলোর প্রতি এ তাফসীরে লক্ষ রাখা হবে। ৬. মাসাইলুস সুলুকের তরজমার ভূমিকা। ৭. মূল মাসাইলুস সুলুকের ভূমিকা। ৮. সুরা ফাতেহা ও তাফসীর। ৯. মাসাইলুস সুলুক সুরা ফাতেহা-সংশ্লিষ্ট। ১০. সুরা বাকারা ও  তাফসীর। ১১. দ্বিতীয় পারা। ১২. তৃতীয় পারা। ১৩. আকাশ সৃষ্টিতে মানবজাতির কল্যাণ। ১৪. সুরা ফাতেহা ও সুরা বাকারা সংশ্লিষ্ট উজুহুল মাছানী : বিভিন্ন কিরআতের বিবরণ।

তাফসীরে বয়ানুল কুরআনের প্রকাশনা সম্পর্কে রাহনুমা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মুহাম্মাদ মাহমুদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে সমাদৃত একটি তাফসীরগ্রন্থ বয়ানুল কুরআন। বাংলা ভাষায় এমন একটি অনন্য গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ করতে পেরে আমরা কৃতজ্ঞ। আনুমানিক ৬ খণ্ডে এ তাফসীর সিরিজটি সমাপ্ত হবে। প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হলো। আশা করছি কুরআন-প্রেমিক ও গবেষকগণ এ তাফসীরগ্রন্থটির মাধ্যমে পূর্ণ উপকারিতা লাভ করবেন।

তাফসীরগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে রাহনুমা প্রকাশনী। প্রথম খণ্ডটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬০৮। মুদ্রিত মূল্য ১০০০ টাকা। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে এ খণ্ডটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। প্রচ্ছদ করেছেন মুহাম্মাদ মাহমুদুল ইসলাম। বইটি কিনতে চাইলে ফোন করুন ০১৭৬২ ৫৯৩৩৪৯ অথবা ০১৯৭২ ৫৯৩৩৪৯ এই নম্বরে। অনলাইন থেকে কিনতে ভিজিট করুন www.rahnumabd.com এই ঠিকানায়। এ ছাড়া ঘরে বসে বইটি কিনতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন রকমারি.কমে।

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।