নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে শুক্রবার জুমআর নামাজের পূর্বক্ষণে সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৪৯ জন মুসলিমের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ হামলার বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের নেতারা নিন্দা জানিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাকে কোন মুসলিম নেতা কি মন্তব্য প্রদান করেছেন
হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই এর কড়া নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনাকে বর্ণবাদী ও ফ্যাসিবাদী হামলা বলে অভিহিত করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, এই হামলা প্রমাণ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। এর আগেও আমরা দেখেছি ইসলামভীতি কেমন বিকৃতত ও খুনে মানসিকতার জন্ম দেয়। এ ধরনের মানসিকতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। এরদোয়ান আরো বলেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা অলসভাবে দেখছে বিশ্ব। এই মুসলমানদের যে ব্যক্তিগতভাবে হয়রানি করা হতো, ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সীমান্ত ছাড়িয়ে তা গণহত্যায় রূপ নিয়েছে। মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আল্লাহ নিশ্চয়ই নিহতদের ক্ষমা করে দেবেন। আহতদের দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য সহায়তা প্রয়োজন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ আশা করছেন নিউজিল্যান্ড শিগগিরই এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করবে এবং আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বিশ্ব মানবতা ও শান্তির জন্য এটাকে এক ট্র্যাজেডি হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় হতাহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে একটি ঘৃণ্য, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদি হামলা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যেভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে যখন মানুষ সেখানে নামাজ আদায়রত অবস্থায়, তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে- এর চেয়ে জঘন্য কাজ, ঘৃণ্য কাজ আর হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, যারা জঙ্গি, যারা সন্ত্রাসী তাদের কোনো ধর্ম নেই, তাদের কোনো দেশ নেই, জাতিও নেই। তারা সন্ত্রাসী। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়াও বাংলাদেশকে জঙ্গিমুক্ত করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস মানুষের কোনো মঙ্গল করতে পারে না, অমঙ্গল ছাড়া।
এ ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াও। দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, আমরা এই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেছেন, ইন্দোনেশিয়া সরকার হত্যার শিকার ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে।
এক টুইটবার্তায় এ হামলাকে ইসলামফোবিয়ার ফল অভিহিত করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, নৃশংস এ হামলার মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়েছে যে সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। সন্ত্রাসবাদকে কখনো ধর্মের সঙ্গে মেলানো উচিত নয়। যা আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি। ইমরান খান আরো বলেন, ৯/১১ এর পর থেকে ইসলামফোবিয়ার যে বিস্তার ঘটেছে, তার কারণে এতদিন যেকোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অপবাদ মুসলমানদের দেওয়া হয়েছে। এখন যে মুসলমানদের ওপর নৃশংস হামলা হয়েছে, তা ওই ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবেরই ফসল। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিহত ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান তিনি।
মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন জোটের সবচেয়ে বড় দলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম জানান, এই হামলার ঘটনায় একজন মালয়েশিয়ার নাগরিক আহত হয়েছেন। ঘটনাটিকে বিশ্বশান্তি ও মানবতার ওপর এক কালো ছায়া হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, বর্বর এই হামলার কথা জানতে পেরে আমি বেদনাহত, যে ঘটনা মানবিক মূল্যবোধের বিরোধী ও সাধারণ মানুষের প্রাণ নিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মানুষ ও আক্রান্ত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাচ্ছি।
এছাড়া মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আল আজহার মসজিদের প্রধান ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েব লোমহর্ষক এই গণহত্যার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, লোমহর্ষক এই সন্ত্রাসী হামলা দেশে দেশে ক্রমবর্ধিষ্ণু ইসলামফোবিয়া, মুসলিম বিদ্বেষের কথা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি ও শেখ খলিফা বিন জায়দ আল নাহিয়ান নিউজিল্যান্ডের গভর্নর জেনারেল ডেম প্যাসি রেড্ডিকে শোক বার্তা পাঠিয়েছেন। বার্তায় দেশটির নেতারা দুটি মসজিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। শেখ খলিফা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কোনো মানুষ কি এভাবে নিরপরাধ মানুষের ওপর আক্রমণ করে। রাষ্ট্রপতি ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়েছেন।
ভারতের বেসরকারি মুসলমান শিক্ষিত সমাজ ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল বোর্ড’–এর প্রতিষ্ঠাতা কামাল ফারুকি এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রমশ বাড়তে থাকা এই ঘৃণা বেশ চিন্তার বিষয় বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘মুসলিমবিরোধী ভাইরাস বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছে। সব ধর্মাবলম্বীর এ ঘটনায় চিন্তিত হওয়া উচিত।’