একজন মুসলিম বান্দার দৈনন্দিন আমলের মধ্যে দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে দোয়া ও জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সারা দেব। (সুরা আল মুমিন, আয়াত ৬০) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে বলা হয়েছে, দোয়ার শাব্দিক অর্থ ডাকা। এ ছাড়া কখনো কখনো জিকিরকেও দোয়া বলা হয়। সকাল-সন্ধ্যায় জিকির প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। (সুরা আহযাব, আয়াত ৪১)।
হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার রবের জিকির করে আর যে ব্যক্তি তার রবের জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে জীবিত ও মৃতের ন্যায়। (বুখারি)
উম্মতে মোহাম্মাদীর বিশেষ সম্মানের কারণে তাদের দোয়া করার আদেশ করা হয়েছে এবং তা কবুল করার ওয়াদা করা হয়েছে। পাশাপাশি যারা দোয়া করে না, তাদের জন্য শাস্তিবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। ইসলামী আইন মোতাবেক সাধারণ দোয়া বা মাসনুন দোয়া ফরজ বা ওয়াজিব নয়। দোয়া না করলে গোনাহও হয় না। তবে দোয়া করা সমস্ত আলেমের মতে মোস্তাহাব ও উত্তম এবং হাদীস অনুযায়ী বরকত লাভের কারণ।
আরবী, উর্দু, ফারসি ও ইংরেজিসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় মাসনুন দোয়া ও জিকির-আজকার, পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ আয়াত-সুরা এবং আল্লাহ মহানের ৯৯ নামের ফজিলত ও উপকারিতার বর্ণনা-সংবলিত বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব গ্রন্থ বাংলা ভাষায় অনুবাদ হওয়ার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় এ বিষয়ে অনেক মৌলিক গ্রন্থও রচিত হয়েছে। কিন্তু সব গ্রন্থই তো আর কালজয়ী গ্রন্থ নয়। মাসনুন দোয়া, জিকির-আজকার সংশ্লিষ্ট যত গ্রন্থ এ যাবৎকালে রচিত হয়েছে হিসনে হাসিন তন্মধ্যে সবচেয়ে মাকবুল, সুপ্রসিদ্ধ এবং আলেম-উলামা ও সাধারণ জনগণসহ সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একটি গ্রন্থ। এটি মূলত একজন মুমিন-মুসলমানের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এবং দিনের শুরুতে জাগ্রত হওয়া থেকে দিন শেষে শোয়া পর্যন্ত জীবনের সর্বাবস্থায় সকল কাজে রাসুল (সা.) কর্তৃক বর্ণিত দোয়া, জিকির-আজকার ও নির্দেশনার অনন্য সংকলন।
গ্রন্থটির মূল রচয়িতা—ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল জাযারি শাফেঈ (রহ.)। উর্দু অনুবাদ ও টীকা সংযোজন করেছেন—মাওলানা মুহাম্মদ ইদরিস মিরাঠি (রহ.)। তাখরিক বা ব্যাখ্যা লিখেছেন—মুফতি ইসমাতুল্লাহ হাসান যায়ি এবং বাংলা ভাষায় অনন্য এই গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন—মাওলানা হেদায়েতুল হক।
হিসনে হাসিন গ্রন্থটি সম্পর্কে বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মারকাজুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার আমীনুত তালীম মাওলানা আব্দুল মালেক বলেছেন, ‘এটি কোনো অজিফার পুস্তকও নয় আর মুসিবত কিংবা বিশেষ উদ্দেশ্যে খতম করার কোনো কিতাবও নয়। আফসোসের বিষয় হলো—খুব কমসংখ্যক লোকই কিতাবটির মূল উপকার হাসিল করে—অর্থাৎ এই কিতাবে উল্লেখিত দোয়াগুলো মুখস্থ করে কিংবা দেখে দেখে যে সময় যে দোয়া পড়া উচিত, তা পড়ে। কিতাবটিকে শুধু মুসিবতের সময় খতম করানোর কিতাব মনে করে। জিকির ও দোয়া—যা বিশেষ সময়ে বা বিশেষ অবস্থায় পড়া কাম্য ছিল, তার ব্যাপারে যত্নবান হতে সাধারণত দেখা যায় না।’
গ্রন্থটিতে মোট ১১টি পরিচ্ছেদ ও ৫টি অধ্যায় এবং দুটি পরিশিষ্ট রয়েছে। প্রথম পরিচ্ছেদে রয়েছে দোয়ার ফজিলত-বিষয়ক আলোচনা। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে রয়েছে আল্লাহ তাআলার জিকির করার ফজিলত-বিষয়ক আলোচনা। তৃতীয় পরিচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে দোয়ার আদববিষয়ক আলোচনা। চতুর্থ পরিচ্ছেদে রয়েছে আল্লাহ তাআলার জিকিরের আদব-বিষয়ক আলোচনা। পঞ্চম পরিচ্ছেদে রয়েছে দোয়া কবুলের বিশেষ সময়ের বর্ণনা। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে সকল অবস্থায় দোয়া কবুল হয়। সপ্তম পরিচ্ছেদে উল্লেখ রযেছে দোয়া কবুলের স্থান পরিচিতি। অষ্টম পরিচ্ছেদ আলোচিত হয়েছে যাদের দোয়া আল্লাহ তাআলার দরবারে দ্রুত কবুল হয়। নবম পরিচ্ছেদ বর্ণিত হয়েছে ইসমে আজম এবং দোয়া কবুলে তার প্রভাব। দশম পরিচ্ছেদে রয়েছে আল্লাহ তাআলার আসমায়ে হুসনা বা সুন্দর নামসমূহের বর্ণনা এবং ইসমে আজম-সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস। এগারোতম পরিচ্ছেদে আলোচিত হয়েছে দোয়া কবুল হওয়ার পর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় প্রসঙ্গ।
এরপর প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন কাজ-আমলের শুরুতে পঠিতব্য দোয়া। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে বিভিন্ন জিকির-আজকারসহ বিভিন্ন কালেমার ফজিলত। তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে ইসতিগফার পরিচিতি ও ফজিলত প্রসঙ্গ। চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে কোরআনে কারীম এবং তার বিশেষ সুরা ও আয়াতের ফজিলত। পঞ্চম অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে ব্যাপক দোয়া, যেগুলো কোনো বিশেষ সময় বা কারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এ ছাড়া প্রথম পরিশিষ্টতে তুলে ধরা হয়েছে রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করার ফজিলত এবং সালাত ও সালাম প্রসঙ্গ এবং দ্বিতীয় পরিশিষ্টতে সংযুক্ত করা হয়েছে হিসনে হাসিন পড়ার অনুমতিপত্র।
বাংলায় অনূদিত গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে রাহনুমা প্রকাশনী। অন্য অনেক প্রকাশনী থেকে বাংলা ভাষায় এই গ্রন্থটির আরও অনুবাদ পাওয়া যায়। রাহনুমা প্রকাশনী থেকে মুদ্রিত হিসনে হাসিন গ্রন্থের অনুবাদটির বিশেষত্ব সম্পর্কে প্রকাশক মুহাম্মাদ মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘হিসনে হাসিন—দোয়া ও জিকির-আজকার বিষয়ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কিতাব। বাংলা ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রে রাহনুমা থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটিতে বিভিন্ন দোয়া ও জিকির-আজকারের যথার্থ রেফারেন্স বা সূত্র যুক্ত করা হয়েছে এবং দোয়া, জিকির-আজকার ও কুরআনের সুরা-আয়াত এবং মহান আল্লাহর আসমায়ে হুসনার ফজিলত বর্ণনার ক্ষেত্রেও রেফারেন্স বা সূত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে গ্রন্থটির পাতায় পাতায় বহু টীকা, পদটীকা ও ব্যাখ্যা যুক্ত করা হয়েছে। বাজারে হিসনে হাসিন গ্রন্থের অন্য কোনো বাংলা অনুবাদে এমনটা আমাদের চোখে পড়েনি।’
গ্রন্থটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪১৬। মুদ্রিত মূল্য ৪৬০ টাকা। বইটির প্রচ্ছদ, বাঁধাই ও প্রকাশনার মান খুবই উন্নত ও রুচিসম্মত। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। বইটি কিনতে চাইলে ফোন করুন ০১৭৬২ ৫৯৩৩৪৯ অথবা ০১৯৭২ ৫৯৩৩৪৯ এই নম্বরে। অনলাইন থেকে কিনতে ভিজিট করুন www.rahnumabd.com এই ঠিকানায়। এ ছাড়া ঘরে বসে বইটি ক্রয় করতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন রকমারি.কমে।
ওকে/এমএইচ