ফিচার স্থাপত্য-নিদর্শন

ভান্ডারিয়ার দৃষ্টিনন্দন তিন ইসলামী স্তম্ভ

এস এম আকাশ, পিরোজপুর : ইসলামী ঐতিহ্য দৃষ্টিনন্দন আরবি হরফের ক্যালিগ্রাফিতে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার তিন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি স্তম্ভ, যা সংযুক্ত রয়েছে তিন চত্বরের সঙ্গে। সুউচ্চ মিনারের চারপাশজুড়ে আরবি ক্যালিগ্রাফির এই স্তম্ভ একদিকে যেমন শোভা বর্ধন করেছে, তেমনি তা দর্শনার্থী, পথ-যাত্রীদের দৃষ্টি কাড়ছে। শহরের ঢাকা-বরিশাল বাসস্ট্যান্ড মোড়ে ত্রিমোহনায় কলেমা চত্বর, চরখালী ফেরিঘাটের কাছে মঠবাড়িয়া-ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর মহাসড়কের চৌরাস্তা মোহনায় বিসমিল্লাহ্ চত্বর এবং ভান্ডারিয়া-ধাওয়া সড়কের ত্রিমোহনায় ফুলতলা বাজারে গড়ে তোলা হয়েছে সুবহানাল্লাহ্ চত্বর। এই তিন চত্বরে গড়ে তোলা মিনার আকৃতির স্তম্ভগুলো আরবি ক্যালিগ্রাফির কারুকাজে খচিত। সন্ধ্যায় রঙিন বাতির আলো আর ফোয়ারায় স্বচ্ছ জলধারায় অপূর্ব মনোরম পরিবেশ বিরাজ করে তিন চত্বর ঘিরে। ফলে এই তিন স্তম্ভ ভান্ডারিয়া উপজেলা শহরকে বিশেষ পরিচিতি এনে দিয়েছে।

কলেমা চত্বর : ১৯৯৮ সালে ভান্ডারিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাসস্ট্যান্ড মোড়ের ত্রিমোহনায় ৩১৫ ফুট স্থানজুড়ে ১৫ ফুট মাটির উঁচু ঢিবির ওপর ১৭ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার স্তম্ভটি গড়ে তোলা হয়।  চারপাশে রেলিং আর বাহারি ফুলগাছে ঘেরা স্তম্ভটির নাম রাখা হয় কলেমা চত্বর। স্তম্ভটির ব্যাকগ্রাউন্ডে স্তম্ভের সমান ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্’ লেখা আরবি হরফের ক্যালিগ্রাফি নির্মাণ করা হয়। কিবলামুখী এই হরফগুলো আকাশি রঙের টাইলসে ডিজাইন করা হয়েছে। বহুদূর থেকে পথচারীদের নজরে পড়ে এই ইসলামী বাণী। প্রায় ২১ বছর আগে গড়ে তোলা স্তম্ভটি দেশের ইসলামী বাণীসমৃদ্ধ প্রথম ক্যালিগ্রাফি স্থাপনা। ১৯৯৮ সালের ২৪ মে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কলেমা চত্বরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।


কালেমা চত্বর। ভান্ডারিয়া বাসস্ট্যান্ড। ছবি : এস এম আকাশ


তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকায় ইসলামী বাণীসমৃদ্ধ স্তম্ভটি নির্মাণ করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মো. শফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, কলেমা তাইয়েবা লেখা ইসলামী বাণীসমৃদ্ধ এ স্তম্ভটি একটি পবিত্র স্থাপনা। এটি নির্মাণে আমাদের শহর দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। আর এ স্তম্ভের কারণেই স্থানের পরিচিতি এখন কলেমা চত্বর।

কলেমা চত্বরের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জানান, ‘আমি একদিন প্রেসিডেন্টের (জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের) বাসায় যাই। হঠাৎ কলেমার এই ডিজাইনটি দেখে ভালো লেগে যায়। আমি তাঁর কাছে সাময়িক সময়ের জন্য ডিজাইনটি চাইলে তিনি আমাকে তা একেবারেই দিয়ে দেন। আমি তা নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে দিলে তিনি খুলনা থেকে ডিজাইনটি চূড়ান্ত করে আনেন।

বিসমিল্লাহ্ চত্বর : ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর সড়কের চরখালী ফেরিঘাটের কাছে চৌরাস্তার মোহনায় ২০০০ সালে গড়ে তোলা হয় ইসলামী বাণীসমৃদ্ধ আরও একটি সুউচ্চ স্তম্ভ। গোলাকৃতির রেলিংঘেরা প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার মিনার আকৃতির স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে। তিনটি স্তম্ভের ওপর দণ্ডায়মান স্তম্ভটির ওপরের অংশটি অনেকটাই মসজিদের গম্বুজ আকৃতির। তিনটি পিলারের নিচের অংশে আলাদা প্রস্তর মিনারটিকে নয়নাভিরাম করেছে দর্শনার্থীদের।


বিসমিল্লাহ চত্বর । জরখালী চৌরাস্তা মোড়, ভান্ডারিয়া। ছবি : এস এম আকাশ


নিচের তিনটি প্রস্তরে দুই পিঠে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ আরবি ক্যালিগ্রাফি স্তম্ভটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। লাল আর সবুজ রঙের টাইলসের বিশালাকৃতির এই ক্যালিগ্রাফি বহুদূর থেকে দেখা যায়। নানা বর্ণিল আলোকচ্ছটা সন্ধ্যায় অপূর্ব রূপ-আবহে মানুষকে বিমোহিত করে। চরখালী চৌরাস্তা মোহনার এ স্তম্ভটির পরিচিতি বিসমিল্লাহ্ চত্বর। স্থানীয় ব্যবসায়ী আকতারুজ্জামান আবু মল্লিক জানান, এই চত্বরে পথচারীরা এলেই আপন মনে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম জপে। স্তম্ভটি আমাদের আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ শেখায়।

সুবহানাল্লাহ্ চত্বর : ভান্ডারিয়া পৌর শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ধাওয়া সড়কের ফুলতলা বাজারের ত্রিমোহনা সড়কে গড়ে তোলা হয়েছে আরও একটি দৃষ্টিনন্দন স্তম্ভ। পিরোজপুর জেলা পরিষদের অর্থায়নে গড়ে তোলা মিনার আকৃতির এই স্তম্ভটির নাম রাখা হয়েছে সুবহানাল্লাহ্ চত্বর। প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার গোলাকৃতির স্তম্ভটি অনেকটাই মিনার বা গম্বুজের আদলে গড়া। নানা বর্ণিল টাইলসে গড়ে তোলা এই স্তম্ভটি নান্দনিক শোভাবর্ধন করেছে। তিনটি পিলারে গড়ে তোলা স্তম্ভটির নিচের মাঝখানে ছোট একটি স্তম্ভে স্টিলের হরফে লেখা রয়েছে আল্লাহু আকবার। তিনটি পিলারের নিচের অংশে লেখা রয়েছে আরবি ভাষায় আল্লাহর ৯৯ নাম।


সুবহানাল্লাহ চত্বর। ফুলতলা বাজার, ত্রিমোহনা, ভান্ডারিয়া। ছবি : এস এম আকাশ


২০১৭ সালের ১০ মে তৎকালীন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সুবহানাল্লাহ্ চত্বরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যে মোহনার তিনটি সড়কের বহু দূর থেকে এটি দেখা যায়। স্থানীয় তরুণ এমাদুল হক জানান, ফুলতলা একটি গ্রাম্য বাজার। এখানে তিন রাস্তার মোড়ে এমন একটি ইসলামী বাণীসমৃদ্ধ স্তম্ভ গড়ে তোলায় আমাদের গ্রামটি আরও সুন্দর লাগছে। এখানে এলে আমরা আল্লাহকে স্মরণ করি। স্তম্ভটি আমাদের কাছে পবিত্র স্থানে পরিণত হয়েছে।

দৃষ্টিনন্দন এসব চত্বর প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, স্তম্ভ নির্মাণ করার সময় আমি খুব পরিকল্পনা করে করেছি তা নয়, তবে করার পর মানুষের মুগ্ধতা দেখে ভেবেছি, আমি কী করলাম! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে দিয়ে করিয়েছেন। আমি দেখেছি, মানুষ যখন এই চত্বরের পাশ দিয়ে যায়, তারা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মুগ্ধতার সঙ্গে তাকিয়ে থাকে। মালিকের (আল্লাহর) ইচ্ছা হলে এমন চত্বর আরও হতে পারে। তাওফিক দিলে অন্যরাও এমন করতে পারে। আমি এর ভালো-মন্দ কিছুই বলতে চাই না।

ওকে/এমএইচ

Comment

লেখক পরিচিতি

ইসলাম প্রতিদিন

ইসলাম প্রতিদিন- এটি ইসলাম প্রতিদিন.কমের একটি অফিসিয়াল আইডি। যাদের নামে ইসলাম প্রতিদিনে কোনো আইডি নেই, আমরা সাধারণত এই আইডির মাধ্যমে তাদের লেখাগুলো ইসলাম প্রতিদিন.কমে প্রকাশ করে থাকি।