ফিচার ভাষা-শিল্প-সাহিত্য

ইসলামে শালীন ভাষায় কথা বলার গুরুত্ব

লিখেছেন মিরাজ রহমান

পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘পরম দয়ালু (আল্লাহ) কোরান শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে কথা বা ভাষা শিখিয়েছেন। (সূরা রহমান : ১-৪)। ভাষা পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার সেরা দান। মানুষের বাকশক্তি এমন একটি বিশিষ্ট নিয়ামত, যা মানুষকে জীবজন্তু ও পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টি থেকে পৃথক করে রেখেছে। আল্লাহ যে বাকশক্তি দান করেছেন এটি শুধু বাকশক্তিই নয় বরং এর পেছনে জ্ঞান ও বুদ্ধি, ধারণা ও অনুভূতি, বিবেক ও সংকল্প এবং অন্যান্য মানসিক শক্তি কার্যকর থাকে।

ভাষা বা কথা দুই প্রকার। এক. পবিত্র বা ভালো কথা। দুই. খারাপ কথা। আল্লাহ বলেন, তুমি কি দেখছো না, আল্লাহ কালেমা তাইয়েবার উপমা দিয়েছেন কোন্ জিনিসের সাহায্যে? এর উপমা হচ্ছে যেমন একটি ভালো জাতের গাছ, যার শিকড় মাটির গভীরে প্রোথিত এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে পৌঁছে গেছে। প্রতি মুহূর্তে নিজের রবের হুকুমে সে ফলদান করে। এ উপমা আল্লাহ এ জন্য দেন, যাতে লোকেরা এর সাহায্যে শিক্ষা লাভ করতে পারে। অন্য দিকে অসৎ বাক্যের উপমা হচ্ছে, একটি মন্দ গাছ, যাকে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপড়ে দূরে নিক্ষেপ করা হয়, যার কোনো স্থায়ীত্ব নেই। (সূরা ইবরাহিম : ২৪-২৬) ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সর্বোত্তম কথা হলো কালিমাতুত তাইয়্যেবা তথা আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই- এই কথা বলা।

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম সে, যার ভাষা ও কর্ম থেকে মুসলমানেরা নিরাপদ থাকে’। (সহিহ বুখারি)। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, ভাষার ফসলই মানুষকে জাহান্নামে উপুড় করে নিক্ষেপ করবে। (তিরমিজি)। এ ছাড়াও কোরানের বহু আয়াত ও হাদিসে মন্দ কথা উচ্চারণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান রাখেন, মন্দ কথা থেকে বিরত থাকা তাদের ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা নবিজিকে সম্মোধন করেন বলেছেন, ‘হে মুহাম্মদ, আমার বান্দাদের বলো, তারা যেন মুখ হতে সে সব কথাই বের করে যা অতি উত্তম। আসলে শয়তানই মানুষের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করে থাকে। প্রকৃত কথা হলো, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (বনি ইসরাঈল : ৫৩)

সুতরাং ভাষার মাসে আহ্বান রইলো, সুন্দর ও ভালো কথা বলুন। মিথ্যা, অসৎ ও খারাপ কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকুন। সুন্দর ও ভালো কথা ঐক্যকে সুদৃঢ় করে। সুন্দর করে কথা বলা মানুষের শ্রেষ্ঠ একটি গুণ। আর এটি আল্লাহর দান। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে কথা বলা একটি দান। পক্ষান্তরে খারাপ, মিথ্যা ও অসৎ কথা শয়তানের কাজ।

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।