ইসলামে শহীদদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। শহীদ দুই প্রকার। এক. ইসলামের জন্য আল্লাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন যারা অথবা যাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। দুই. কোনো মহামারীতে, পানিতে ডুবে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে অথবা কোনো ভবন বা স্থাপনা ধসে তার নিচে চাপা পড়ে যদি কোনো মুসলমান প্রাণ হারায়; ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদ বলে বিবেচিত হবেন তারা। এমনিভাবে সন্তান প্রসবের সময় কোনো স্ত্রীলোক যদি মৃত্যুবরণ করেন সেও শহীদ বলে গণ্য হবেন। বাংলাদেশের মুসলমানগণ ভাষার জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল। ছালাম, জব্বার, রফিক, বরকতেরা মাতৃভাষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে আমাদেরকে ধন্য করেছেন। অন্যের হাতে অন্যায়ভাবে মৃত্যু বরণ করেছে তারা।
ইসলামের আলোচনা অনুযায়ী ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তারা শহিদ। সম্পদের জন্য, স্বাধীনতার জন্য এবং ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ দেশে দেশে লড়াই করে কিন্তু মাতৃভাষার জন্য লড়াইয়ের ইতিহাস শুধু বাংলাদেশীরাই তৈরী করেছে।
শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে ভিন্ন আলোচনা এসেছে। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘ঋণ ব্যতীত শহীদের সব গুণাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ কেননা শাহাদাত তথা অন্যান্য নেক আমল দ্বারা কেবল আল্লাহর হক মাফ হয়। কিন্তু ঋণ তথা বান্দার হক আল্লাহ ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত হকদার ব্যক্তি ক্ষমা না করেন। জামে তিরমিজি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘শহীদকে মহান আল্লাহ তায়ালা প্রথমেই ক্ষমা করে দেন। এরপর জান্নাতে তার আবাসস্থল দেখানো হয়, কবরের ভয়াবহ আজাব থেকে হেফাজত রাখবেন। কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদে থাকবে। এবং তার মাথায় বিশেষ মুকুট পরিধান করানো হবে।’
মহান আল্লাহ তায়ালা শহীদদের ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তাদের (শহিদদের) মৃত বলো না। তারা আল্লাহর কাছে জীবিত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষভাবে রিজিকপ্রাপ্ত হয়। সুতরাং ভাষা শহিদ কিংবা যে কোনো ধরনের শহীদ হোক না কেন, আল্লাহ মহানের কাছে রয়েছে তার জন্য আলাদা মর্যাদা এবং ইসলাম তাকে প্রদান করেছে বিশেষ গুরুত্ব। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত বাংলা ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের জন্য আল্লাহ মহানের কাছে দোয়া-প্রার্থনা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভাষা শহিদদের প্রকৃত মর্যাদা প্রদান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।