আন্তর্জাতিক সংবাদ

টার্গেট এবার আগ্রার তাজমহল!

‘শিগগিরই উত্তর প্রদেশের তাজমহলকে মন্দিরে পরিণত করতে হবে’- সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা এমন মন্তব্য করে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লি থেকে ২০০ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত বিখ্যাত এই তাজমহল সপ্তদশ শতকে মোঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীর স্মরণে নির্মাণ করেছিলেন। তাই এটি মুসলিম স্থাপত্য হিসেবেই সমধিক পরিচিত।

গেলো সোমবার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এমপি বিনয় কাটিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, ‘তাজ আর তেজ (মন্দির) এর মধ্যে খুব বেশি তফাৎ দেখি না আমি।’ এ কথা বলে তিনি তাজমহলের স্থানে মন্দির ছিল এমন দাবী তোলেন। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আমাদের মন্দির ছিল। সুতরাং শিগগিরই তাজমহলের জায়গায় আমাদের মন্দির স্থাপন করতে হবে।’ হিন্দুদের মন্দিরের ওপরেই তাজমহল নির্মাণ করা হয়েছে সরাসরি এমন দাবী ভারতীয় এ এমপির।

সে সময় বিনয় কাটিয়ার আগ্রার এই বিখ্যাত মহল ভেঙ্গে ফেলারও আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে তিনি জানান, তাজমহল ভেঙে এখানে মন্দির নির্মাণ করা হবে। তার মন্তব্যের পর এ নিয়ে সারা ভারতে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। খোদ বিজেপিও এটিকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে না।

বিনয় কাটিয়ার এবারই প্রথম এমন মন্তব্য করছেন না তেমন নয়, বরং ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসেও তার বিরূদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় অনেক গনমাধ্যম তাকে উদ্বৃত করেছিলো যে, তিনি বলেছেন, ‘তাজমহল প্রকৃতপক্ষে শিব মন্দির ছিল’।

তাজমহলের জায়গায় মন্দির ছিল- এমন ভিত্তিহীন দাবী বিগত ক’বছর ধরে ভারতে আলোচিত হয়ে এসেছে। বিশেষ করে ডানপন্থী দলগুলো এ নিয়ে বেশ আলোচনায় ছিল। তবে এখনো এর কোনো পূর্ণাঙ্গ সমাধান আসেনি। অবশ্য চলতি বছেরর আগস্ট মাসে হিন্দুত্ববাদী একটি গ্রুপের পিটিশনের জবাবে সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টেকে জানিয়েছে,  তাজমহল একটি মুসলিম স্থাপত্য। এটা কোনো মন্দির নয়।

একজন ইন্ডিয়ান এক্টিভিস্ট ও শিক্ষাবিদ আল জাজিরার কাছে কাটিয়ারের এ মন্তব্যকে  অবান্তর বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কাটিয়ারের এ মন্তব্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে হীনমন্যতার জন্ম দেয়া ছাড়া আর কিছুই করবে না। এ মন্তব্যের ফলে হিন্দুরা ভাবতে শুরু করবে যে, তাদের কাছ থেকে কোনকিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন সেটা আবার ফেরত পেতে হবে। এ চিন্তাধারা নতুন দাঙ্গার জন্ম দেবে হয়তো। এটা আখেরে হিন্দু মুসলিম বিভক্তি আরও বাড়িয়ে তুলবে।’

কাটিয়ার এ মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিজেপির মুখপাত্র নালিন কোহলি জানান, ‘ভারতীয় সংবিধান অনুসারে প্রতিটি মানুষের বাক স্বাধীনতা রয়েছে। সেই হিসেবে তিনি এমনটা বলতেই পারেন’। কোহলি আরও বলেন, ‘তাঁর একটি স্টেটমেন্ট নিশ্চয়ই পুরো দলের প্রতিনিধিত্ব করে না’। তিনি তার ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করেছেন। আমরা তাতে বাধা প্রদান করতে পারি না’।

উল্লেখ্য, পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম এ তাজমহল বছরে প্রায় ছয় মিলিয়ন পর্যটকের ভ্রমণের প্রিয় জায়গা। ভারতের উত্তর প্রদেশের সরকারের পর্যটন রীতি অনুসারে নির্মিত না হলেও এটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য । এপি এর এক তথ্য অনুসার, ভারতের এই বিখ্যাত তাজমহল ২০১৭ সালে ছয় মিলিয়নেরও বেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল।

তথ্যসূত্র : আল জাজিরা

Comment

লেখক পরিচিতি

জাহিদ হাসান মিলু

আমি জাহিদ। সরকাারি কাগজপত্রের জাহিদুল ইসলাম থেকে বেসরকারি কাগজপত্রে জাহিদ হাসান মিলু- নামের এই বিচিত্র পরিবর্তনের পেছনে একটা মিষ্টি গল্প আছে।
জন্মেছি গোপালগঞ্জ জেলার অখ্যাত গ্রাম প্রশন্নপুরে, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে। কী এক বিশেষ কারণে যেন কাগজকলমে বয়েস কমিয়ে আমাকে আরও তিনবছরের ছোটো করে রাখা হয়েছে। বাবা মা দুজনেই অক্ষর না শিখেও আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম স্বাক্ষর হয়ে আছেন।
অবুঝ বয়েসে পারিবারিক স্বপ্নের কারণে ভর্তি হতে পেরেছিলাম মাদ্রাসায় , আলহামদুল্লিলাহ। জীবনের সবথেকে বড় পারিবারিক গিফ্ট ছিল এটা আমার জন্য। কুরআন পড়তে শিখলাম, মুখস্থ করতে পারলাম। অর্থ জানলাম এবং ব্যাখ্যাও পড়লাম।
আমাদের পাড়ার মাদ্রাসা কুলিয়ার ভিটায় পড়ার সময় ধর্মের প্রতি আমাদের ভেতরে যে বীজটা রোপিত হয়েছিল, সেটা ডালাপাল মেলে খোলা হাওয়ায় বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় প্রাণের প্রতিষ্ঠান এরাবিল মডেল মাদ্রাসায়। তারপর? তারপর আর কি- এখন পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগে।
দায়ী হওয়ার স্বপ্ন আমার সবথেকে বড় স্বপ্ন। স্বপ্নটি পূরণ করতেই পড়ছি, শুনছি, দেখছি, শিখছি এবং অপেক্ষা করছি।