ইন্টারনেট- গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম আবিষ্কার। ইন্টারনেটের কল্যাণে গোটা পৃথিবী এখন একই সুতোয় গাঁথা। হাজার মাইল দূরের মানুষের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনায়েসেই যোগাযোগ করা যায়। কথা বলা যায়, শেয়ার করা যায় অনুভূতি; এমনটি দেখাও যায়। বিশ্বব্যাপী তথ্য আদান-প্রদান; ব্যক্তিগত, সামাজিক, ব্যবসায়িক, ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় যে কোনো প্রকার যোগাযোগকে সহজ ও গতিময় করতে ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। অন্যান্য বিষয় ও তথ্যের মতো ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের বিষয়টি খুবই উর্বর ও যুগোপযোগী।
হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী-রাসূলের দাওয়াতি জীবন পর্যালোচনা করলে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি উঠে আসে, সেটা হল- প্রত্যেক নবী-রাসূলই ছিলেন তৎকালীন যুগোপযোগী বিদ্যা ও তথ্য-প্রযুক্তিতে পারদর্শী। প্রত্যেক নবী-রাসূলই দীনের দাওয়াতের কাজে ব্যবহার করেছেন তৎকালীন যুগশ্রেষ্ঠ মাধ্যম বা প্রযুক্তিকে। বর্তমান যুগ তথ্য-প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ। ইন্টারনেট-মিডিয়ার যুগ। প্রযুক্তির উৎকর্ষময় এই যুগে ইসলামের প্রচার-প্রসারের কাজে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ইন্টারনেটের গতিময়তাকে কাজে লাগাতে হবে ইসলামের দাওয়াতি কাজে। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মদ বলেছেন, ‘ইন্টারনেটের মোকাবিলা করতে হবে ইন্টারনেটের সাহায্যে। কম্পিউটারের মোকাবিলায় কম্পিউটার এবং কলমের মোকাবিলায় কলমের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে।’ দাওয়াত অর্থ আল্লাহর দীনের দিকে মানুষকে আহ্বান করা। আর তাবলিগ হচ্ছে, আল্লাহ-রাসূলের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। নবী-রাসূলদের মূল দায়িত্ব ছিল দাওয়াত ও তাবলিগ। নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নবীওয়ালা এই দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ওপর।
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, তার একটি বাক্যও যদি আমাদের কারও জানা থাকে, তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে। রাসূল (সা.)-এর এই নির্দেশ পালন করা সব মুসলমানের জন্য জরুরি। বর্তমান তাবলিগ জামাত এ কাজটিই করছে। ইসলামী দাওয়াতের ইতিহাসে নববি আদর্শ খচিত আখিরাতমুখী এক মিশন এই তাবলিগ ও বিশ্ব ইজতেমা। হাজার হাজার অমুসলিম, লাখ লাখ আল্লাহভোলা মুসলিমকে দীন ইসলামের সঠিক দিশা প্রদানে সক্ষম হয়েছে নবীওয়ালা এই ফিকির। লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ, ইসলাম প্রিয় মুসলিম আসেন ইজতেমায় কিন্তু অনেকে এমনও থাকেন শত ইচ্ছা থাকার পরও দূর-দূরান্তের দেশে অবস্থান করার কারণে ইজতেমায় আসতে পারেন না অনেক মুসলিম ভাই-ই। তাদের কি হবে?
তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে ইজতেমায় শরিক না হতে পেরে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম বঞ্চিত হন দাওয়াতি প্রবাহ থেকে। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে তাবলিগ জামাতের দাওয়াতি কাজে, ইজতেমার ময়দানের বাণী বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজে কেন ব্যবহার হচ্ছে না ইন্টারনেট? কেন গ্রহণ করা হচ্ছে না যুগোপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ? আজ যদি তাবলিগ জামাতের নিজস্ব কোনো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইজতেমার বয়ান ও আখেরি মোনাজাত প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো কতই না ভালো হতো। বিদেশে অবস্থানকারীরা এবং ইজতেমাতে শরিক হতে না পারা মুসলিম ভাইয়েরাও শুনতে পারতেন ইজতেমার বয়ান, শরিক হতে পারতেন আখেরি মোনাজাতে। কেন হচ্ছেন না তারা প্রযুক্তিমুখী?
মাইকের আওয়াজ যতদূর পৌঁছায় ঠিক ততদূরই সীমাবদ্ধ থাকে ‘ইজতেমার আওয়াজ’। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন মাইকের আওয়াজ শুনতে। স্থান সংকুলানের ঝামেলায় ঘটে নানা দুর্ঘটনা। কিন্তু এই মাইকের আওয়াজ যেখানে পৌঁছাবে না, ইজতেমার বার্তা কি পৌঁছাবে না সেখানটায়? কেন ‘আরও উচ্চ আওয়াজ’ গ্রহণ করা হচ্ছে না, দূর থেকে আরও দূর-দূরান্তে ইজতেমার বাণী পৌঁছানোর যুগোপযোগী গতিময় কোনো ব্যবস্থা ‘আওয়াজ’ কেন গ্রহণ করা হচ্ছে না! ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল যুগচাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করা। যুগের পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দাওয়াতের প্রকৃতি ও আঙ্গিকে পরিবর্তন আসে। পবিত্র কোরআনে দাওয়াতের মূলনীতি বর্ণনা করে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের প্রতি আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ মাধ্যমে এবং তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বিতর্ক কর’। [সূরা নাহল-১২৫]
মাইক যেমন একটি প্রযুক্তি, ইন্টারনেটও তেমনি একটি প্রযুক্তি। মাইকের তুলনায় অনেক বেশি গতিময়, সহজ এবং ক্রিয়াশীল ইন্টারনেট। দূর থেকে দূরান্তে, দৃষ্টিসীমার ওপারে বাণী পৌঁছানোর ক্ষমতাও রাখে এই ইন্টারনেট। ইন্টারনেট-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইজতেমার বাণী বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেয়া সম্ভব মুহূর্তেই। ‘মাইকের আওয়াজ’ যেখানে গ্রহণ করা হচ্ছে, ‘ইন্টারনেটের আওয়াজ’ গ্রহণ করতে সেখানে অসুবিধা কোথায়?