জীবন বিধান বিধান

অগ্নিকান্ডে শহীদদের জন্য দোয়া এবং স্বজনদের জন্য সমবেদনা

হঠাৎ অগ্নি এসে আচরে পরে । বাচার জন্য চেষ্টা করে সবাই। কিন্তু আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারনে শতচেষ্টা করা সত্বেও আগুনে প্রান দিতে হল অনেককেই। মনে জমাট বাধা সকল স্বপ্ন আর সাজানো সংসারটি পুরে যায় আগুনের কালো থাবায়। বাচার জন্য চিৎকার আর চেচামেচিতে পুরো এলাকা ভাড়ী হয়ে যায়। সন্তানকে বাচাতে চায় তার মা। ভাইকে বাচাতে চায় অন্য ভাই। মা কে বাচাতে চায় তার ছেলে। নিজে বাচার জন্য শতচেষ্টা। মৃুত্যু থেকে ঝাপিয়ে পড়ে মৃত্যুতে। আহ কি নির্মম অবস্থা। কি কঠিন আর করুন অবস্থা হয় এই নির্মম সময়ে । চোখের সামনে পুড়ে যায় হাজারো স্বপ্ন। বিধাব হয় অনেক নারী। পিতা মাতা হারিয়ে এতিম হয় । মৃত্যু জেনেও নিজ জীবনকে আগুনে সপে দেয়। জানালা দিয়ে নিজ সন্তানকে বাচানোরও চেষ্টা করে তার মা আর বাবা। সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় হয়ে যায় সন্তানের পিতা মাতা। সন্তানকে নিয়ে তৈরি করা সকল স্বপ্ন অগ্নির থাবায় বিলীন হয়ে যায়। সন্তান হারানোর শোক খুব কষ্টের। এই শোক তাকে যন্ত্রনা দিবে জীবনের বাকী সময়টুকু। সন্তান জন্ম গ্রহন করে বা পিতা মাতা জীবিত থাকাবস্থায় যদি সন্তান মৃত্যু বরন করে তাহলে সেই সন্তানের পিতা মাতার ধৈর্য ধারন করাটা খুব কষ্টের হয়ে যায়। তখন সেই পিতা মতা সন্তান মৃত্যুতে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত বন্দেগী করা।

হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কারো সন্তান মারা যায় তখন আল্লাহ ফিরিশতাদেরকে ডেকে বলেন, যে তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করে ফেলেছ? তারা বলেন, হ্যা আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা তার কলিজার টুকরারর জান কবজ করে ফেলছ? তারা বলেন, হ্যা । আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দা কি বলছে? তারা বলেন আপনার বান্দা এই বিপদেও ধৈর্য ধারন করে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্নলিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন পড়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং তার নামকরন কর বাইতুল হামদ প্রশংসার গৃহ।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ হাদীস নং-১৭৩৬, তিরমিযী ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২১)

শুধু সন্তান হারিয়ে নয় অনেকেই পিতা মাতাকে হারিয়ে কাতর সন্তানেরা। যার হাত ধরে খেলবে যার হাতের ষ্পর্শে রাতের ঘুম আসবে সেই মাথার উপরে থাকা ছায়া পিতা মাতা আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছে। ছোট সন্তান খুজছে প্রিয় আব্বুকে। আব্বু কোথায় আস। আমাকে কোলে নেও। কে আমাকে আদর করবে। আমায় ঘুম পরিয়ে দিবে। মনে এমনটি বলতে চাচ্ছে অবুজ শিশু। আগুনে মৃত্যু হয় পিতা মাতা। এতিম হয়ে যায় অসংখ্য কোমলমতি শিশুরা। পিতা মাতাকে হারিয়ে এতিম হয়ে সেদিন। আমাদের উচিত সেদিন যারা এতিম হয়েছে তাদের সহ সকল এতিমদের সাথে ভাল ব্যবহার করা। তিরমিযী শরীফের এক বর্ননায় উল্লেখ রয়েছে রাসুল (সা.) বলেন,যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এতিম অনাথদের মাথায় স্নেহের হাত বোলাবে এতিমের ষ্পর্শিত প্রত্যেকটি চুলের বিনিময়ে আাল্লাহ ঐ স্নেহকারীকে অসংখ্য নেকী দান করবেন’। প্রিয় পাঠক কি করুন পরিণতি। কি বেদনাময় অবস্থা। আগুনে পুড়ে প্রিয় স্বজনের লাশ চিনতে হিমশিম খেতে হয়। ডাক্তার ডি এন এ টেষ্ট এর মাধ্যমে সনাক্ত করে মৃত্যুর পরিচয়। হাসপাতালের মর্গের সামনে ভীড় জমায় শোকে কাতর আত্মীয়রা। খাবার ঘুম বন্ধ হয়ে যায় তখন । লাশের অপেক্ষায় থাকে তাদের অত্মীয়রা। আহ কি নির্মম পৃথিবী। কেউ কি ভেবেছিল এই করুন পরিনিতি আমাদের বরন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। হঠাৎ করে নির্মম ভাবে আগুনে পুড়ে যারা নিহত হয়েছে তারা অবশ্যই শহিদের মর্যাদা পাবেন ইনশাঅল্লাহ।

রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর পথে নিহত হওয়া ব্যতিত সাত ধররেন শহীদ রয়েছে। ১. মহামারিতে মৃত ব্যক্তি, ২.পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি, ৩.শয্যাশয়ী অবস্থায় যে মারা যায় সেও শহীদ,৪.কলেরা বা পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি, ৫.আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি, ৬. ভূমি বা ভবন কিংবা দেয়াল ধসে চাপা পড়া মৃত ব্যক্তি, ৭ যে নারী গর্র্ভধারণে বা প্রসবজনিত কষ্টে মারা যায তাকেও ইসলামে শহিদী মর্যাদায় ভূষিত করবেন।’ (আবু দাউদ -৩১১১) উপরে উল্লেখিত হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম অগ্নিতে পতিত হয়ে যারা নিহিত হলেন তারা আল্লাহর দরবারে শহিদী মর্যাদা পাবেন। তাই আসুন অগ্নিতে পুড়ে যারা নিহত হয়েছেন আমরা তাদের জন্য দোয়া করি। হে আল্লাহ যারা আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছে আপনি তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিন। তাদের পরিবারকে ধৈর্য্য ধারন করার তাওফিক দান করুন। সন্মানিত পাঠক, আসুন নিস্ব অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাড়াই। অন্যের কল্যানে এগিয়ে আসি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য’। (সূরা আল ইমরান-১১০)

Comment

লেখক পরিচিতি

মো. আবু তালহা তারীফ

একজন প্রাবন্ধিক ও বিশ্লেষক এবং গবেষক। দেশের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী মাদ্রাসা-ই-আলিয়া,ঢাকার থেকে দাখিল, আলিম, ফাজিল সাফল্যেও সাথে উত্তীর্ন হয়ে একই প্রতিষ্ঠানে কামিল হাদিস বিভাগে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগে অনার্স ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়ন করছেন তরুণ এই লেখক।
ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা করতেন তিনি। যার ফলে কলম ধরেছেন ছোটবেলা থেকেই। বিভিন্ন রচনা প্রতিযোগীতায় জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য বার পুরুস্কারও পেয়েছেন। দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকায় তার জীবনের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকের ধর্মীয় পাতায় তার লেখা দেখা যায় প্রতিনিয়তই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন বইয়ের সম্পাদনাও করেছেন তালহা তারীফ। নবম শ্রেনীতে অধ্যায়ন অবস্থায়ই তার লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয়। তরুন আলোচক হিসেবে মিডিয়া ও মাহফিল পাড়ায় তার ব্যপক পরিচিতি রয়েছে।