তাজমহল- ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় স্মৃতিসমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম ওরফে মমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেছেন। সৌধটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ সালে। সৌধটির নকশা কে করেছিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, শিল্পনৈপুণ্যসম্পন্ন একদল নকশাকারক ও কারিগর সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রধান নকশাকার ছিলেন ওস্তাদ আহমেদ লাহুরি। সঙ্গে ছিলেন আবদুল করিম মামুর খান এবং মাকরামাত খান- যারা সে সময়ের সবচেয়ে নিখুঁত, পারদর্শী ও উচ্চ পর্যায়ের প্রকৌশলী এবং নকশাকারক ছিলেন। এছাড়া তাজমহলের নান্দনিক ও নিখুঁত সব ক্যালিগ্রাফি করেছেন তৎকালের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার আবদুল হক। যার প্রশংসনীয় ক্যালিগ্রাফি দেখে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট নিজেই তাকে ‘আমানত খান’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।
তাজমহলের নির্মাণ কাজে ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেছেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৬৪৮ সালে অর্থ্যাৎ মমতাজের মৃত্যুর ১৭ বছর পর গম্বুজগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পরিশেষে ১৬৫৩ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ সমাপ্ত হয়। শুধু মানুষ শ্রমিকই নয়; মহান এ কীর্তির নির্মাণ অংশীদার হিসেবে প্রায় ১০০০ হাতীর ব্যবহৃত হয়েছে। অদ্ভূতপূর্ণ সুন্দর এ সৌধ নির্মাণে বিভিন্ন ধর্মের স্থাপত্যের রীতি-আকার অনুকরণ করা হয়েছে। তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়। যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। সামগ্রিকভাবে তাজমহল একটি নান্দনিক অখন্ড স্থাপত্য। পুরো তাজমহল ১৮০ ফুট উঁচু। প্রধান গম্বুজটি ২১৩ ফুট উঁচু এবং ৬০ ফুট চওড়া। এর চারপাশে চারটি মিনার রয়েছে, যার প্রতিটির উচ্চতা ১৬২.৫ ফুট। পুরো কমপ্লেক্সটির আকার ১৯০২x১০০২ ফুট। মূল তাজমহলটি ১৮৬ x১৮৬ ফুট মার্বেল পাথরের উপর স্থাপিত। এর প্রধান প্রবেশদ্বার ১৫১x১১৭ ফুট চওড়া এবং ১০০ ফুট উঁচু।
তাজমহল নির্মাণের জন্য পাঞ্জাব থেকে স্বচ্ছ মার্বেল পাথর, চীন থেকে সবুজ পাথর, তিব্বত থেকে স্বচ্ছ ও নীল পাথর এবং শ্রীলংকা থেকে নীলমনি আনা হয়। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৮ রকমের মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি করা হয় এই অনন্য স্থাপত্য নিদর্শনটি। ধারণা করা হয়, তাজমহল নির্মাণে তৎকালীন আনুমানিক ৩২ মিলিয়ন ডলার রুপি খরচ হয়েছিল। এটিকে ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম আগ্রার তাজমহল।
কমেন্টস করুন