ফিচার মুসলিম উম্মাহ

আসুন ঈমানী ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তুলি— আওলাদে রাসূল আফফান মনসুরপুরী

দুনিয়ার কোনো সম্পর্কই টিকে থাকে না উল্লেখ করে ভারতের প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘আমরুহা মাদরাসার’ সদরুল মুদাররিস, আওলাদে রাসূল সাইয়্যিদ মাওলানা কারী আফফান মনসুরপুরী বলেছেন, হাশরের ময়দানে মানুষ মানুষের মধ্যকার একমাত্র ঈমানী সম্পর্ক কাজে আসবে। ঈমানী সম্পর্কের মাধ্যমেই মানুষ জান্নাতে যাবে। তিনি বলেন, যদি কোন ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন ও তাঁর রাজি-খুশির জন্য কাউকে ভালোবাসে, তাহলে তার এই ভালোবাসা হাসরের ময়দানে তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিবে। দুনিয়ায় মানুষে মানুষে তিন ধরনের সম্পর্ক রাখে মন্তব্য করে মাওলানা আফফান মানসুরপুরী বলেন, দুনিয়াতে সাধারণত সম্পর্ক তিন ধরনের হয়। ১. রক্তের সম্পর্ক। আত্মীয়তার সম্পর্ক। ২. ইহসান তথা সহযোগিতার সম্পর্ক। অর্থাৎ কেউ কাউকে সাহায্য বা অনুগ্রহ করার কারণে তাদের মাঝে যে সম্পর্ক হয়, এই সম্পর্ক ইহসানের সম্পর্ক। ৩. ঈমানের সম্পর্ক। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন ও তাঁর রাজি-খুশির জন্য কাউকে ভালোবাসা। তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন রক্তের সম্পর্ক এবং ইহসানের সম্পর্ক কোন কাজে আসবে না। একমাত্র ঈমানের সম্পর্ক কাজে আসবে। মাওলানা মনসুরপুরী বলেন, আমরা এই ইসলাহী ইজতেমায় একত্র হয়ে আমাদের মধ্যকার যে সম্পর্ক হয়েছে সেটা ঈমানী সম্পর্ক। এখানে আমরা একজন আরেকজন্যকে একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন ও তার রাজি-খুশির জন্য ভালোবাসি। তিনি বলেন, যখন কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাউকে ভালোবাসবে, তখন তাকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসবেন। আর যাকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসবেন, তার দুনিয়া ও আখেরাতে আর কোন সমস্যা হবে না। সে দুনিয়াতেও শান্তিতে থাকবে। আখেরাতেও শান্তিতে থাকবে।
৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার বেলঙ্কা-ইছাপশর, জামিয়াতুল ইসলাহ ময়দানে ইসলাহী ইজতেমায় ইসলাহী বয়ানে আওলাদে রাসূল মাওলানা কারী আফফান মনসুরপুরী এসব কথা বলেন। তিনি জমিয়তে উলামা হিন্দের সভাপতি সাইয়্যিদ মাওলানা কারী উসমান মনসুরপুরীর ছেলে এবং বিশ্বের অন্যতম মুফতি আল্লামা সালমান মানসুরপুরী (দা.বা.)-এর অনুজ ভ্রাতা। মানুষের হৃদয় এখন হিংসা-বিদ্বেষে ভরে গেছে উল্লেখ করে মাওলানা আফফান মানসুরপুরী বলেন, মানুষ এখন মানুষকে ভালোবাসে না। মানুষ মানুষকে ভালোবাসতে ভুলে গেছে। মানুষ এখন মানুষের ভালোটুকুও সহ্য করতে পারে না। আমাদের হৃদয় হিংসা-বিদ্বেষে ভরে গেছে। গুণাহের অধিক্যতার কারণে আমরা এখন ভালোবাসতে ভুলে গেছি। মানুষ মানুষের মধ্যকার হিংসা-বিদ্বেষে ভুলে পরস্পরের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করার আহ্বান জানান তিনি। মানুষ দুইটা জিনিসের নাম মন্তব্য করে আওলাদে রাসূল বলেন, দুইটা জিনিসের নাম মানুষ। ১. শরীর। ২. রূহ। মৌলিকভাবে রূহই মানুষের নাম। শরীরে রূহ না থাকলে ওই শরীর কোন কাজে আসে না। তিনি বলেন, শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যেভাবে পানাহার করতে হয়, এমনিভাবে রূহকে সুস্থ করার জন্য আল্লাহ তাআলার জিকির করতে হয়, কুরআন তেলাওয়াত করতে হয়, তাঁর হুকুম-আহকাম পালন করতে হয়।
মাওলানা কারী আফফান মনসুরপুরী বলেন, কুরআন ও হাদীসে অনেক ইবাদতের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কোনটার ক্ষেত্রে বেশি বেশি করে বলা হয়নি। একমাত্র জিকিরের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তোমরা বেশি বেশি জিকির করো। হাদীসে আছে, এমনভাবে আল্লাহ তাআলার জিকির করো, যেন মানুষ তোমাকে পাগল বলে। আমরা যেন এই ইসলাহী মজলিস থেকে জিকিরে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। সারাজীবন বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করতে পারি। মুআমালাত ঈমানের একটি মৌলিক বিষয় জানিয়ে কারী আফফান মনসুরপুরী বলেন, নেক কাজ শুধু ইবাদতের নাম নয়, মুআমালাত ও নেক কাজের অন্তর্ভুক্ত। কারো মুআমালাত যদি ভালো না থাকে, তাহলে তার নেক কাজগুলো তেমন কোন কাজে আসবে না। প্রসঙ্গত, ইসলাহী বয়ান শেষে দরাজ কণ্ঠে পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করে মজলিসে উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন আওলাদে রাসূল মাওলানা কারী আফফান মনসুরপুরী।

Comment

লেখক পরিচিতি

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ। তরুণ লেখক। আলেম ও গবেষক। দীর্ঘদিন যাবত দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজপোর্টালে লিখছেন। কাজ করেছেন সুনামধন্য কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে।
বর্তমানে এই তরুণ লেখক আমাদের সময়.কম অনলাইন নিউজ পোর্টালের সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন দৈনিক বাংলাদেশের খবর পত্রিকার ইসলামি বিভাগের।