গবেষণা

সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন— সম্ভব নাকি ভ্রান্তি?

শরিয়তের অন্যান্য শাখা মাসআলার মতোই সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করার প্রসংগ নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ দুইটি মত পাওয়া যায়। প্রত্যেক পক্ষই তাদের স্বপক্ষে কুরআন ও হাদিসের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে কিছু প্রমাণ পেশ করার সাথে সাথে যুক্তির উপস্থাপন করেন। এসব বিষয়গুলো আলেম উলামাদের থেকে শুরু হলেও বর্তমানে আমাদের মতো অন্যান্য দেশেও সর্ব-সাধারণের আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। ফলে, আলেম বা ইসলামী জ্ঞানে জ্ঞানীরা যেভাবে এটাকে সমাধান করার চেষ্টা করেন, তার হিতে বিপরীত হয়ে সাধারণ জনগোষ্ঠির মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংশয়ের পাশাপাশি একে অপরের মাঝে বিশৃংখলায় রূপ নিচ্ছে। এটি চিন্তার বিষয়। এই নিবন্ধে উপরোক্ত বিষয়ের কয়েকটি মৌলিক দিক তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।

প্রথমত : এ ব্যাপারে কুরআন কী বলছে? পবিত্র কুরআনে রোজা শুরু করা কিংবা রমজানের শুরু করার ব্যাপারে যে নির্দেশনা আছে সেখানে বলা হয়েছে, “তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে …। সুতরাং যে এই মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে…।” (সূরা আল-বাকারাহ, ১৮৩-১৮৫) এখানে মাস শুরু করার কথা শুধু বলা হয়েছে। কখন কীভাবে শুরু হবে তার ব্যাখ্যা হাদিসে দিয়ে দেয়া হয়েছে। যেটিও ওহি বা প্রত্যাদেশ। (দেখুন: সূরা ত্বহা, : ১) সেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশ হলো তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখেই ইফতার করো (রোজা ছেড়ে দাও)। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ) এখন এই চাঁদের ব্যাপারে সবচেয়ে পরিষ্কারভাবে যে তথ্য আমাদেরকে কুরআন দিয়েছে তা হলো, “(হে নবি) তারা আপনার কাছে নতুন চাঁদ (দেখা) সম্পর্কে জানতে চায়। আপনি বলে দিন এটি মানুষের জন্যে সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। … অবশ্য নেকি (সওয়াব) হলো আল্লাহকে ভয় করার মধ্যে।…” (সূরা আল-বাকারাহ, ২: ১৮৯) এখানে তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (১) চাঁদ হলো সময় নির্ধারণের জন্যে। সময়ের মধ্যে দিন, মাস, বছর, যুগ ইত্যাদি সমন্বিত। (২) এটি হজ্বের সময় নির্ধারণ করার মাধ্যম। লক্ষ্যণীয়, কেন আল্লাহ যিনি বিধান দাতা তিনি শুধু মাত্র হজ্বের কথা বললেন? কেন রোজার কথা বললেন না? কারণ, এখানে রোজা সম্পর্কেই আলোচনা করা হচ্ছিল। এটির একটা উদ্দেশ্য হতে পারে, হজ্ব শুধু মাত্র একটি নির্দিষ্ট স্থানের সাথে সম্পৃক্ত। সেটি ঐ স্থানের চাঁদের সাথে নির্ধারিত হতে হবে। কিন্তু সালাত, সাওম কিংবা অন্যান্য বিধান পালনের কোন নির্দিষ্ট স্থান, কাল, পাত্র হজ্বের অনুরূপ নয়। এবং (৩) সওয়াব হলো আল্লাহকে ভয় করার মধ্যে। অর্থাৎ আমরা কী করছি সেটির চেয়ে কেন করছি এটি আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সত্যিকার কল্যাণ পেতে হলে আল্লাহকে খুশি করার নিমিত্ত্বে আমাদের সাধ্যাতিত চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সেখানে ত্রুটি বিচ্যুতি হলেও আল্লাহ ক্ষমা করবেন।

দ্বিতীয়ত : রাসূল (সা.) এর হাদিস এবং তাঁর সুন্নতের নির্দেশনা কী? রোজা শুরু করা এবং শেষ করার ব্যাপারে যেসব হাদিস এসেছে তার মধ্যে বহুল প্রচলিত, প্রসিদ্ধ এবং অধিক গ্রহণযোগ্য হাদিস হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা চাঁদ দেখে রোজা শুরু করো এবং চাঁদ দেখেই রোজা ছেড়ে দাও। যদি কোন কারণে চাঁদ দেখা না যায় তাহলে রমজান মাসকে ত্রিশদিন পূর্ণ করো। অর্থাৎ রমজান মাসের শুরু হবে চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে এবং শেষ হয়ে শাওয়াল মাসের শুরু হবে চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন কিংবা এমন কোন স্থানে অবস্থান করা যেখানে চাঁদ দেখা সম্ভব নাও হতে পারে সেই জায়গার জন্যেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন কুরআনের আয়াতটির ব্যাখ্যা এখানে প্রযোজ্য হলে দেখা যাবে, বলা হচ্ছে নতুন চাঁদ হলো মানুষের জন্যে সময় নির্ধারণের মাধ্যম। এবং শব্দটি আরবি একবচন শব্দ ‘ওয়াকতুন’ ব্যবহার না করে ‘মাওয়াকিত’ ব্যবহার করে সময়ের বিভিন্নতার কথা বলা হয়েছে।

তবে, ঈদের দিন নির্ধারণের ব্যাপারে এবং একই দিনে ঈদের ব্যাপারে যারা মত ব্যক্ত করেছেন তারা মদিনাতে দুইজন ন্যায় পরায়ণ ব্যক্তির স্বাক্ষীর আলোকে রাসূল (সা.) দুপুরের পরে রোজা ভেঙ্গে ফেলার এবং পরের দিন ঈদ পালন করার ব্যাপারে নির্দেশ দেন। (দেখুন: সুনানু নাসাঈ, হাদিস নং ২১১৬) এই হাদিসে তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। (১) চাঁদ দেখা সবার জন্যে শর্ত নয় বরং নির্ভরযোগ্য দুইজন ব্যক্তিও যদি চাঁদ দেখার ব্যাপারে স্বাক্ষী দেয় তাহলে তা গ্রহণ যোগ্য। (২) চাঁদ দেখার ব্যাপারে কোন সংবাদ রোজা রাখা অবস্থায়ও যদি জানা যায় তখন রোজা ছেড়ে দিতে হবে। এবং (৩) পরের দিন ঈদ পালন করার নির্দেশ দেন।

আমার কাছে প্রথম ও দ্বিতয়টির পাশাপাশি তৃতীয় নির্দেশনাটি বিশেষ গুরুত্ব রাখে। আমরা জানি, রমাজানের ঈদ শাওয়াল মাসের প্রথম দিনেই হয়। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে যেদিন রোজা ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিচ্ছেন সেদিন শাওয়ালের প্রথম দিন ছিল নিশ্চয়ই। তদুপোরি, সেদিন ঈদ পালন না করে কিংবা ঈদের দিন শেষ হয়ে গেছে বলে তা পালন করা থেকে বিরত থাকেন নি। বরং তা শাওয়ালের দ্বিতীয় দিনে পালন করেছেন। সুতরাং রাসূল (সা.) এর হাদিস শুধু নয় সুন্œত দিয়েও প্রমাণিত যে, পরিস্থিতির কারণে রমজানের ঈদ দ্বিতীয় দিনেও পালন করাতে কোন দোষের নেই। তাহলে, এ নিয়ে বাড়া বাড়ি করা কি আমাদের উচিৎ হবে?

তৃতীয়ত : আছার বা সাহাবিদের আমল কী ছিল? এ ব্যাপারে করাইব (রা.) এর বর্ণিত আছারে এসেছে য, তিনি সিরিয়ায় রমজানের রোজা পালন শেষে মদিনায় এসে এখানকার ছিয়ামের সাথে একদিন কম-বেশি দেখতে পান। তখন এ বিষয়ে ইবনু ‘আব্বাস (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন যে, সিরিয়ার আমির মু‘আবিয়া (রা.) এর গৃহীত রোজার তারিখ মদিনায় প্রযোজ্য নয়। কেননা, ওখানে তোমরা শুক্রবার সন্ধায় চাঁদ দেখেছ। অতএব আমরা রোজা রাখব যতক্ষণ না ঈদের চাঁদ দেখতে পাব। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তাকে বলা হলো, মু‘আবিয়ার চাঁদ দেখা ও রোজা রাখা কি আপনার জন্যে যথেষ্ট নয়? তিনি বললেন, না। এভাবেই রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে নির্দেশ দান করেছেন। (দেখুন: সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ১০৮৭; সুনানু তিরমিযি, হাদিস নং- ৫৫৯; সুনানু আবি দাউদ, হাদিস নং- ২০৪৪) ইমাম নববি (র.) বলেন, “এ হাদিস সুস্পষ্টভাবে প্রামাণ করে যে, এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য শহরের জন্যে প্রযোজ্য নয় অধিক দূরত্বের কারণে।” (দেখুন: মির‘আত, খ-, ৬, পৃ. ৪২৮)

চতুর্থত : বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী হবে? সৌরজগতের গঠণগত কারণে আমাদের এ গ্রহের একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের উদয়স্থল ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এমনকি বিভিন্ন মৌসুমে পশ্চিম আকাশের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় চাঁদকে দেখতে পাই। স্থানের অধিক দূরত্বের কারণে তাই আমাদের এই ছোট্ট গ্রহের বিভিন্ন জায়গার মানুষও তাই ভিন্ন সময়ে তাদের নতুন চাঁদ দেখতে পায়। এখন এই দূরত্ব কম বেশি হওয়ার কারণে চাঁদ দেখা না দেখার সময়ের দূরত্বও বাড়ে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, সৌদিআরবের মক্কা নগরিতে অবস্থিত কা‘বা হলো পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল। কিন্ত সেটিকে চাঁদ দেখার স্থান নির্ধারণ করলে কিছু অনিয়ম লক্ষ্য করা যাবে। কারণ, জৈতির্বিজ্ঞানের আলোকে পৃথিবীর সর্ব পশ্চিমের দেশেই প্রথম চাঁদ দেখা যায়। আর সৌদিআরব সর্ব পশ্চিমে না হওয়ার কারনে তার আগেও পশ্চিমের কিছু দেশে চাঁদ দেখা যাবে। তাহলে সারা পৃথিবীতে রোজা ও ঈদ পালনের ক্ষেত্রে পশ্চিমের দেশে আগে দেখা চাঁদকে উপেক্ষা করে সৌদিআরবের চাঁদকে ‘আমলে নেয়া বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নয়।

পঞ্চমত : যুক্তি বা আকল কী বলে? স্থানের ভিন্নতার কারণে সময়ের ভিন্নতা হয় স্বাভাবিক নিয়মে। সেই ভিন্নতা একই দিনে ঈদ পালন করাকে অসম্ভব করে তোলে। একটা উদাহরণ দেই। যদি কোন দিন আমেরিকার আলাসকা কিংবা নিউজিল্যা-ের ক্যাথাম আইল্যান্ডে আগে চাঁদ দেখা যায় তাহলে ঐ দুই দেশের পক্ষ্যে একে অপরকে অনুসরণ করে একই দিনে রোজা যেমন শুরু করা সম্ভব নয় তেমনি ঈদও পালন করা সম্ভব নয়। কারণ তাদের দুই দেশের মধ্যে সময়ের পার্থক্য হলো প্রায় ২১ ঘন্টা। আল-আসকার সময়ে যদি ডিসেম্বরের কোন শুক্রবার সন্ধায় অর্থাৎ ১৫:৫১ মিনিটে চাঁদ দেখা যায় ঠিক তখন নিউজিল্যান্ডের ক্যাথাম আইল্যান্ডে সময় থাকবে শনিবার দুপুর ১১:৩৭ মিনিট। সেখানে, আলাসকায় শনিবারের দিন রোজা কিংবা ঈদ পালন করা সম্ভব হলেও এবং এ সংবাদ মুহুর্তেই ক্যাথামে পৌঁছানোর পরেও তারা কিন্তু শনিবারে তা পালন করতে সক্ষম নয়। উত্তর মেরুর দেশগুলোর কথা না হয় বিশেষ কারণে ধত্যর্বে আনলাম না।

অন্যভাবে একথা আমরা বলব যে, পবিত্র কুরআনে চাঁদ দেখার ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে মানুষের সময় এবং হজ্বের দিন-সময় নির্ধারণের কথা উল্লেখ করে পৃথিবীর মানুষের জন্যে চাঁদকে যেমন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে তেমনি হজ্বকে নির্দিষ্ট করে চাঁদের সাথে সম্পর্কীত ইবাদতগুলোকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। অপরপক্ষ্যে, রাসূল (সা.) এর হাদিস ও সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শাওয়ালের প্রথম দিনে ঈদ না হয়ে দ্বিতীয় দিনে হলেও তাতে বিধান পালন কিংবা সওয়াবের কোন ঘাটতি হবে না। তবে, কেন এটি নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি করব?

আরো একটি কথা বলা যায় যে, প্রত্যেক মুসলিম দেশে এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে কতিপয় বিশিষ্ট আলেমদের সমন্বয়ে কমিটি নির্ধারণ করা আছে। আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিতে পারি কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তকে মানলে আমাদের কোন ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই সেই মাস‘আলার মতো, ইমামের ওযু না থাকলেও তার ইমামতিতে সালাত আদায়কারীর সালাত ঠিকই আদায় করা হয়ে যাবে। এখানে ইমাম দায়ী থাকবেন।

পরিশেষে বলব— আমাদের এ কথা স্মরণ রাখা জরুরি যে, শরিয়াতের বিধান পালনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় তার উদ্দেশ্য অর্থাৎ ‘মাকাসিদ আল-শরিয়াহ’। এটি না বুঝে বিধান পালন করতে গেলেই উদ্দেশ্য শুধু ব্যহত হয় না বরং শারে’ঈ বা বিধানদাতার বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়। ফলে, তার কূফল সমগ্র সমাজ ব্যবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে। অতএব এসব বিষয়ে কথা বলার জন্যে যেমন দ্বীনের জ্ঞানের পান্ডিত্য থাকা দরকার তেমনি প্রজ্ঞা থাকাও জরুরি। তদুপরি, সতর্ক থাকা প্রয়োজন যেন এসব উত্থাপিত বিষয়গুলো মুসলিম উম্মাহের মাঝে বিভক্তি কিংবা একে অপরের সৌহর্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের বিপরীতে শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্কে রূপ না নেয়।

ঈদ পালনের শরয়ী উদ্দেশ্যের অন্যতম কয়েকটি হলো— (১) মুসলিমদের বিনোদন, আনন্দ উদযাপন ও উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়া কারণ, ঈদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনাতে যাওয়ার পর ইহুদিদের নওরেজ ও মেহেরজারে পরিবর্তে বছরের দুইদিন ঈদ পালনের ঘোষণা দেন (দেখুন: সুনানে আবি দাউদ, খ- ১, পৃ. ১৪১) এবং (২) বাৎসরিক একটি মহাসমাবেশের মাধ্যমে বিরুদ্ধচারীদেরকে মুসলিমের একবদ্ধতা, ঐক্য জানিয়ে দেয়া। এজন্যে রাসূল (সা.) ঈদের দিন সকালে বাড়ি বাড়ি যেয়ে সবাইকে ঈদের মাঠে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিতেন। এমনকি ঋতুশ্রাব হওয়া মহিলাদেরকেও। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলে প্রতিউত্তরে তিনি বলেছিলেন, এর মাধ্যমে মুসলিমদের সংখ্যাধিক্যতা প্রমাণ পাবে। (৩) ইমামের দিক নির্দেশনা। ঈদের খুতবাতে সমসাময়িক দিন নির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের সঠিকপথে পরিচালিত হওয়ায় সাহায্য করা। (৪) সম্প্রীতি বৃদ্ধি। যে কারণ, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের মাঠে এক পথ দিয়ে যেতেন এবং অন্যপথ দিয়ে ফিরতেন। এ ব্যাপারে তাঁর (সা.) সাহাবিদেরকেও নির্দেশ দিয়েছেন।

একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, যারা একই দিনে ঈদ করার ব্যাপারে মত দিয়ে থাকেন তাদের উদ্দেশ্য মহৎ এবং প্রসংশনীয়। কারণ, আমার মনে হয়, তাদের উদ্দেশ্য হলো মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করে শরয়ি বিধানগুলোকে পালন করা। এটি অত্যন্ত চমৎকার উদ্যোগ। কিন্তু উদ্যোগ বাস্তবায়নের সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং সৎ ও কল্যাণকর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে যেয়ে যেনো অন্য কোন বিধান লংঘন না হয় তার প্রতি বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। হয়ত আগামীর বিশ্ব এটি বাস্তবায়নের জন্যে উপযোগী হবে; কিন্তু বর্তমানটি নয় বলেই আমাদের বিশ্বাস। তাই উভয় পক্ষকেই অনুরোধ করবে, এসব নিয়ে যেন আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ সৃষ্টি না হয় কিংবা শত্রুতা তৈরি না হয়। এটি হারাম। আল্লাহ সকল মু’মিনদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন ঐক্যবদ্ধ হিসেবে থাকতে। (দেখুন: আল-কুরআন, সূরা আস-সাফ, ৬১:৩) এমনকি একে অন্যকে যেন ভ্রান্ত বলে আখ্যা না দেই। কারণ, আমরা প্রকৃত অর্থে জানিই না যে, আমাদের ইজতেহাদ বা মতটিই একমাত্র সত্য এবং সঠিক। আল্লাহই আমাদের অন্তর এবং ‘আমল সম্পর্কে ভাল জানেন। তিনি আমাদের সকল কাজগুলোকে ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে কবুল করুন। আমিন।

Comment

লেখক পরিচিতি

ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ

ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া থেকে উসূলুদ্দিন ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর পি.এইচ-ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি সহকারী অধ্যাপক (ইসলামি শিক্ষা) হিসাবে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত আছেন। তাঁর পিতা অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ আমিন উদ্দীন গাজী এবং মাতা মরহুমা সুফিয়া আমিন।
ড. ওবায়দুল্লাহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং কনফারেন্সে ২৫ টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি তুরস্ক, নাইজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিআরব, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ইন্ডিয়া ভ্রমন করেছেন। তাঁর একটি অনুবাদগ্রন্থ ইতিমধ্যেই পাঠক সমাজে সাড়া জাগিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি মৌলিকগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়। তাঁর লেখা ২৩ টি গবেষণা প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রিসার্স জার্ণালে প্রকাশিত হয়েছে। ইসলাম প্রতিদিনে লিখছেন অতিথি লেখক হিসেবে ।