পবিত্র কুরআনে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদাতের জন্য। (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬) একজন মানুষ হিসেবে একমাত্র এটাই ইহকালীন জীবনের মূল উদ্দেশ্য। পরকালীন সফলতার একমাত্র সোপান। দুনিয়া নামক এ ধরাধামে যতভাবে মহান প্রভুর ইবাদাত করা যায়, দুআ তার মধ্যে অন্যতম। অন্তরের অন্তস্তল থেকে হৃদয়ের গভীর থেকে সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী আল্লাহর কাছে আন্তরিক এক আকুতির নাম দুআ। বিনয়ী এক আরাধনা। আমরা এমন এক স্রষ্টার সৃষ্টি, যিনি চাইলে খুশি; না চাইলে অ-খুশি। তাকে ডাকলে সুখী; না ডাকলে বেজার। মহান প্রভুকে ডাকা, তার কাছে কিছু চাওয়া এবং বিনিদ্র রাতে জায়নামাজে বসে তার দরবারে হাত তোলাই তো দুআ।
ক্ষমতাবানের সঙ্গে অক্ষম বান্দার সেতুবন্ধই হলো দুআ। দুআর মাধ্যমে আমরা আসলে আল্লাহর প্রতিটি নাম ও বিশেষত্বের স্বীকৃতি দিই। তিনিই আমাদের একমাত্র স্রষ্টা এ কথার স্বীকৃতি প্রদান মানেই দুআ। দুআ মানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ। উপাস্য হিসেবে তাঁর একক অধিকারের স্বীকৃতি।
দুআর মর্যাদা, নিয়ম এবং কবুলের আদবকেতা-বিষয়ক একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ দুআ : বিশ্বাসীদের হাতিয়ার। এটি মূলত বর্তমান সময়ের নন্দিত ইসলামী স্কলার ড. ইয়াসির কাদি রচিত Dua : The Weapon of Believers-এর বাংলা অনুবাদ। বাংলাতে অতি প্রয়োজনীয় এই গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন মাসুদ শরীফ।
ড. ইয়াসির কাদি— মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমে হাদীস ও ইসলামী শাস্ত্র অনুষদ থেকে আরবী ভাষার ওপর ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে দাওয়াহ অনুষদ থেকে ইসলামী ধর্মতত্ত্বের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২০০১ সাল থেকে তিনি আল-মাগরিব ইন্সটিটিউটের অ্যাকেডেমিক বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে ইয়াসির কাদিকে আমেরিকায় ইসলামের সবচেয়ে প্রভাবশালী পণ্ডিতদের অন্যতম একজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বইটিকে দুআবিষয়ক মোট ১৬টি অধ্যায় বা ভাগে বিন্যস্ত করা হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায় বা ভাগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একাধিক আলোচনা যুক্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায় বা ভাগে রয়েছে দুআসংশ্লিষ্ট কিছু বুনিয়াদি বিষয়ের আলোচনা। দ্বিতীয় অধ্যায় বা ভাগে আলোচনা করা হয়েছে দুআর ধরন। তৃতীয় অধ্যায় বা ভাগে তুলে ধরা হয়েছে দুআর মর্যাদা ও ফায়দার কথা। চতুর্থ অধ্যায় বা ভাগে রয়েছে দুআর কিছু শর্তবিষয়ক আলোচনা। পঞ্চম অধ্যায় বা ভাগে আলোচিত হয়েছে দুআর আদবকেতা। ষষ্ঠ অধ্যায় বা ভাগে তুলে ধরা হয়েছে দুআর সময় যা করা ঠিক নয় প্রসঙ্গ। সপ্তম অধ্যায় বা ভাগে রয়েছে দুআ করার সুবর্ণ সময় পরিচিতি। অষ্টম অধ্যায় বা ভাগে আলোচিত হয়েছে দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনাময় পরিস্থিতির বিষয়টি। নবম অধ্যায় বা ভাগে তুলে ধরা হয়েছে যেসব বিষয় দুআ কবুলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। দশম অধ্যায় বা ভাগে রয়েছে দুআ কবুল হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা বিষয়ক আলোচনা। একাদশ অধ্যায় বা ভাগে আলোচিত হয়েছে দুআ কবুলে দেরি হওয়ার কারণ। দ্বাদশ অধ্যায় বা ভাগে তুলে ধরা হয়েছে দুআর কিছু অনুমোদিত বিষয়। ত্রয়োদশ অধ্যায় বা ভাগে রয়েছে তাওয়াসসুল বা উসিলা প্রসঙ্গ। চর্তুদশ অধ্যায় বা ভাগে আলোচিত হয়েছে দুআর সাথে তাকদিরের সম্পর্ক। পঞ্চদশ অধ্যায় বা ভাগে তুলে ধরা হয়েছে দুআর বিদআত প্রসঙ্গ এবং ষষ্ঠদশ অধ্যায় বা ভাগে আলোচিত হয়েছে দুআ-সংক্রান্ত কিছু দুর্বল হাদিস। এ ছাড়া বইটির শেষে ‘শেষকথা’ শিরোনামে একটি প্রসঙ্গও যুক্ত করা হয়েছে।
বইটি প্রসঙ্গে অনুবাদক মাসুদ শরীফ লিখেছেন, ‘দুআর কিছু আদব আছে, কিছু কায়দা-কানুন আছে, কিছু নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক নিয়মের গণ্ডি আছে। সর্বোপরি আছে আল্লাহর অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। আমি চাইলাম, কিন্তু পেলাম না, তার মানে দুআ কবুল হয়নি, বিষয়টা এত সরল নয়। কিংবা আমি চাইলাম এক জিনিস, পেলাম অন্য আরেক জিনিস— এ নিয়ে আক্ষেপ করারও সুযোগ নেই। সবকিছুই আল্লাহ তাঁর নিজ জ্ঞানে করেন এবং সবকিছুই আমাদের কল্যাণের জন্য। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের সীমিত জ্ঞানে তা বুঝে ওঠা দুষ্কর। দুআ নিয়ে আমাদের যত ধরনের কল্পনা, যত ধরনের অজ্ঞতা, তার প্রায় সবকিছুর জবাব মিলবে এই বইটিতে’।
বইটি প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা সংখ্যা ২১৬। হার্ডকভার ছাপার মুদ্রিত মূল্য ৩২৫ টাকা এবং পেপারব্যাক ছাপার মুদ্রিত মূল্য ৩০০ টাকা। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন হাশেম আলী। বইটি কিনতে চাইলে কল করুন ০১৭১০ ১৯৭৫৫৮ বা ০১৯৯৮ ৫৮৪৯৫৮ এই নাম্বারে অথবা ভিজিট করুন www.guardianpubs.com এই ঠিকানায়। এ ছাড়া ঘরে বসে বইটি কিনতে অর্ডার করতে পারেন রকমারি.কমে।