নারী ফিচার

আমেরিকার হিজাব পরিহিতা প্রথম মুসলিম নারী সাংবাদিক নূর

২৫ বছর বয়সী তরুণী নূর তাগোরির জন্ম লিবিয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তবে তিনি বড় হয়েছেন দক্ষিণ মেরিল্যান্ডের একটি রক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরে। ছোটকাল থেকেই তিনি বিভিন্ন সাফল্যের গল্পে আচ্ছন্ন থাকতেন এবং একজন অনুষ্ঠান উপস্থাপিকা কিংবা একজন সংবাদ উপস্থাপিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু তিনি এটাও অনুমান করেছিলেন যে, সফল হওয়ার জন্য তাকে চেহারা দেখাতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে- কোনো হিজাব থাকবে না।

কিশোরী বয়সে নূর তার মুসলিম বিশ্বাসের প্রতীক হিসাবে হিজাব বেছে নেন। তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র ক্লাসে অধ্যয়নের সময় কর্মজীবন শুরু করার জন্য তিনি স্থানীয় একটি পত্রিকাতে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি ‘সিবিএস’ রেডিওতে ‘জীবন পরিবর্তনকারী’ ইন্টার্নশীপের সুযোগ পান। এটি তাকে অন্যান্য রেডিও ও টিভিতে কাজের সুযোগ করে দেয়। পুরো সময় তিনি একজন সংবাদ উপস্থাপিকা হতে চেষ্টা চালান। কিন্তু এসময় অনেক লোক তাকে বলতে থাকেন যে তিনি যদি তার হিজাব পরা অব্যাহত রাখেন, তবে তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। কিন্তু নূর তার বিশ্বাসে অটল থাকেন এবং হিজাব পরা অব্যাহত রাখেন।

২০১৫ সালের এপ্রিলে বাল্টিমোরে পুলিশের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ফ্রেডি গ্রের মৃত্যুর পর উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো আমেরিকা। এসময় মেরিল্যান্ডের স্থানীয় একটি টিভি স্টেশন বিক্ষোভের সংবাদ কভার করার জন্য নূরকে ঘটনাস্থলে পাঠায়। বলা চলে এটা তার জন্য একটি ‘আলোকিত মুহূর্ত’ হয়ে আসে। এর আগে হিজাবের কারণে রাস্তায় মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য তাকে কঠোর সময় অতিক্রম করতে হয়েছে। বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নূরের সঙ্গে একজন আফ্রিকান-আমেরিকা নারী ক্যামেরা পারসনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই সংক্রান্ত সংবাদ কভার করতে গিয়ে তারা দেখতে পান বিক্ষোভস্থলের কয়েক ব্লক দূরেই কিছু মানুষ প্রতিবাদ করার পরিবর্তে গান গাওয়া, কান্নাকাটি ও একজন অপরজনকে জড়িয়ে আলিঙ্গন করছিল। তারা এটি কভার করার সিদ্ধান্ত নেন।

এসম্পর্কে নূর বলেন, ‘এটা ছিল অভূতপূর্ব। বিক্ষোভস্থলের মাত্র কয়েক ব্লক দূরেই এটা ছিল একটি ইতিবাচক, উৎসাহজনক ঘটনা। কিন্তু কেউ এটা কভার করতে আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। হঠাৎ করে, সম্প্রদায়ের শত শত লোক আমাদের কাছে ছুটে এসে এবং তাদের গল্প বলার জন্য আমাদের জিজ্ঞেস করে।’ তিনি বলেন, ‘এটা ছিল আমার জন্য একটি ইউরেকা মুহূর্ত। আমি বুঝতে পারি যে, যারা মূলধারার প্রচার মাধ্যমকে তাদের গল্প বলার জন্য আগে কখনো বিশ্বাস করে নি, এমন লোকেদের সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করতে আমাকে আমার নিজের পরিচয় ব্যবহার করতে হবে এবং এর মধ্যেই আমার শক্তি নিহিত।’

এর কিছু দিনপর নূর তার চাকরি ছেড়ে দেন এবং নিজ ‘অর্থায়নে দ্য ট্রাবল এন্ড সেভেন: দ্য ফরেস্ট হ্যাভেন স্টোরি নামে একটি সংক্ষিপ্ত ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেন। এটি ছিল মানসিক প্রতিবন্ধী লোকেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার সম্পর্কিত একটি ডকুমেন্টারি। এটি ছিল তার জন্য একটি আবেগপ্রবণ প্রকল্প, যা তিনি নিজের অর্থায়নে করেন। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে নূর আরো একবার তার ক্ষমতার পরিচয় দেন। নূর বলেন, ‘যদি আপনি আপনার আবেগ অনুধাবনে নিজের যত্ন না নেন, সেক্ষেত্রে আপনি দীর্ঘমেয়াদী সফল হবেন না। নিজের যত্ন নেয়া স্বার্থপর কিছু নয়; এটি আসলে এক ধরনের পরিষেবা। আপনার রুটিন এবং জীবনের পথ নির্মাণের জন্য কিছু করা উচিত। নিজের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমেই আপনি ভাল নেতা হতে পারবেন এবং সমাজে সাহসের সঙ্গে দাঁড়াতে পারবেন।’

সৌজন্যে : ইনসাফটোয়েন্টিফোর.কম

Comment

লেখক পরিচিতি

জাহিদ হাসান মিলু

আমি জাহিদ। সরকাারি কাগজপত্রের জাহিদুল ইসলাম থেকে বেসরকারি কাগজপত্রে জাহিদ হাসান মিলু- নামের এই বিচিত্র পরিবর্তনের পেছনে একটা মিষ্টি গল্প আছে।
জন্মেছি গোপালগঞ্জ জেলার অখ্যাত গ্রাম প্রশন্নপুরে, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে। কী এক বিশেষ কারণে যেন কাগজকলমে বয়েস কমিয়ে আমাকে আরও তিনবছরের ছোটো করে রাখা হয়েছে। বাবা মা দুজনেই অক্ষর না শিখেও আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম স্বাক্ষর হয়ে আছেন।
অবুঝ বয়েসে পারিবারিক স্বপ্নের কারণে ভর্তি হতে পেরেছিলাম মাদ্রাসায় , আলহামদুল্লিলাহ। জীবনের সবথেকে বড় পারিবারিক গিফ্ট ছিল এটা আমার জন্য। কুরআন পড়তে শিখলাম, মুখস্থ করতে পারলাম। অর্থ জানলাম এবং ব্যাখ্যাও পড়লাম।
আমাদের পাড়ার মাদ্রাসা কুলিয়ার ভিটায় পড়ার সময় ধর্মের প্রতি আমাদের ভেতরে যে বীজটা রোপিত হয়েছিল, সেটা ডালাপাল মেলে খোলা হাওয়ায় বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় প্রাণের প্রতিষ্ঠান এরাবিল মডেল মাদ্রাসায়। তারপর? তারপর আর কি- এখন পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগে।
দায়ী হওয়ার স্বপ্ন আমার সবথেকে বড় স্বপ্ন। স্বপ্নটি পূরণ করতেই পড়ছি, শুনছি, দেখছি, শিখছি এবং অপেক্ষা করছি।