মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি— তিন ধর্মের বিশ্বাসীদের তীর্থস্থান পবিত্র শহর জেরুজালেম। প্রাচীন এই শহরেই গড়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ইসলামী জাদুঘর— দ্য মিউজিয়াম অব ইসলামিক আর্ট। ঐতিহাসিক আল আকসা মসজিদের সন্নিকটেই অবস্থিত এই জাদুঘরটি ১৯২২ সালে জেরুজালেমের হায়ার ইসলামিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠিত হয়। জেরুজালেমের প্রথম জাদুঘর এটি-ই। আল আকসা মসজিদে সংরক্ষিত প্রাচীন নিদর্শনাবলি নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাদুঘরটি। পরবর্তী সময়ে জেরুজালেম ও ফিলিস্তিনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী অনেক নিদর্শন ও স্মারক উপহার হিসেবে পায় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। কোরআনের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, আকসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাব, অত্র অঞ্চলের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের স্মৃতিচিহ্ন, প্রাচীন মুদ্রা ও তৈজসপত্র ইত্যাদি স্থান পেয়েছে জাদুঘরটিতে।
১৩০৩ সালে ৫৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থ ভবনটি নির্মাণ করেন শেখ ওমর ইবনে আবদুন নবী আল মাগরিবি আল মাসউদি। তবে এর প্রবেশ পথটি উসমানীয় শাসনামলে আনুমানিক ১৮৭১ সালে সংস্কার করা হয়। দ্বিতীয় কক্ষটির দৈর্ঘ্য ১৭ মিটার এবং প্রস্থ ৩৫ মিটার। এটি ফাতেমীয় শাসনামলে মূলত মহিলাদের নামাজের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল।
ইসলামী শাসনের স্বর্ণযুগের দুর্লভ ও হাজার বছরের প্রাচীন অনেক নিদর্শন রয়েছে জেরুজালেম ইসলামী জাদুঘরে। উত্তর আফ্রিকা, মিসর, সিরিয়া, তুরস্ক, ইরান, পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ থেকে এসব নিদর্শন ও স্মারক সংগ্রহ করা হয়েছে। এখানে রয়েছে উমাইয়া আমলের কাঠের সেট, ১৯৬৯ সালে ইসরায়েলের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া নূর আল দ্বিন মিম্বরের ধ্বংসাবশেষ, মামলুক আমলের মূল্যবান নথিপত্র, ধাতব, মার্বেল ও টাইলস। এ ছাড়া রয়েছে কুফি, নকশি ও বিভিন্ন স্টাইলের আরবি লিপির একাধিক ক্যালিগ্রাফি।
দুর্লভ ও ঐতিহাসিক কোরআনের সংগ্রহ এই জাদুঘরের গর্বের বিষয়। এখানে রয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত হুসাইন (রা.)-এর ছেলে হজরত হাসসান (রহ.)-এর ব্যক্তিগত কোরআনের কপি। এ ছাড়াও সুলতান সোলায়মান আল কানুনি, সুলতান বায়েজিদ, সুলতান বার্সবি ও মরক্কোর বাদশার স্মৃতিবাহী কোরআনের কপিও রয়েছে এই জাদুঘরে।
জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন সময়ে আল আকসা মসজিদে ব্যবহৃত সুনিপুণ কারুকাজের কাঠের প্যানেলগুলোর প্রতি রয়েছে দর্শনার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ। প্রায় ৩০০ প্যানেল রয়েছে এখানে। প্যানেলগুলো শাসকগোষ্ঠীর রুচি ও সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে। কাঠের প্যানেলের কোনো কোনোটি ১৯৬৯ সালের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে।ৎ
তথ্যসূত্র : দৈনিক কালের কণ্ঠ