আরবি সনের প্রথম মাস মুহাররম। ইসলামি দৃষ্টিকোণ এবং ইতিহাসের আলোকে এ মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সৃষ্টির শুরু থেকে মুহাররম মাসে ১০ তারিখ, তথা আশুরার দিনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। শুধু আশুরার দিবসই নয়; আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিন ও আয়োজন রয়েছে এ মাসে।
মুহাররম একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ, অধিক সম্মানিত। সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মুহাররমের ১০ তারিখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তাই এ মাসটি মুসলিমবিশ্বে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ। আগে মুসলমানদের জন্য মুহাররমের ১০ তারিখ তথা আশুরার দিনের রোজা ফরজ ছিল। দ্বিতীয় হিজরিতে শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে, নফল রোজার মধ্যে আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। (সুনানে আবু দাউদ, জামে তিরমিজি)
হিজরতের পরে মদিনায় গিয়ে নবীজি (সা.) দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও মুহাররমের ১০ তারিখে রোজা রাখেন। তিনি তাদের কাছে কারণ জিজ্ঞেস করলে প্রতি উত্তরে তারা বললো— এদিনে হজরত মুসা (আ.) -এর ওপরে সিনাই পর্বতে তাওরাত অবতীর্ণ করা হয় এবং এদিনেই তিনি বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের জুলুম থেকে উদ্ধার করে তাঁদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউনের সলিলসমাধি ঘটে এদিনেই। তাই আমরা এদিন রোজা রাখে। নবীজি (সা.) সাহাবিদের নির্দেশ দিলেন,‘তোমরা ইহুদিদের থেকে ব্যতিক্রম করো, আশুরার এক দিন আগে বা এক দিন পরেও রোজা রাখো অর্থাৎ ১০ মুহাররমের সঙ্গে ৯ বা ১১ মুহাররম মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে বললেন রাসুল (সা.)। যেন ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়। নবীজি (সা.) আরও বললেন, আমি আগামী বছর বেঁচে থাকলে নবম দিনেও রোজা রাখবো। (মুসলিম ও সুনানে আবু দাউদ)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। (সহীহ মুসলিম)
এ মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এদিনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন। (সহীহ বুখারি)
তবে এ দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথাও বলে থাকেন। যেমন, এদিন হজরত ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হজরত ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হজরত ইদরীসকে (আ.) আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া অনেকে এও বলে থাকেন যে, এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।
মুহাররম মাসে ইবাদতের স্বতন্ত্র ফজিলত থাকলেও একটি শ্রেনী এই মাসটিকে বিশেষত আশুরার দিবসটিকে অত্যন্ত শোকাবহে পালন করে থাকে। কারণ, এই মুহাররম মাসের দশ তারিখেই নবীজি (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত হোসাইনকে (রা.) স্বপরিবারে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহিদ করা হয়েছিল। উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয়। কিন্তু নবীজিই তো শিখিয়ে গেছেন, নিশ্চয়ই চোখ অশ্রুসজল হয়, হৃদয় ব্যথিত হয়, তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করি না; যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়।
অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যারা মুখ চাপরায়, কাপড় ছিড়ে এবং জাহেলী যুগের কথাবার্তা বলে। তাই হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে এমন কোনো কাজ আমরা করবো না, যা আল্লাহ এবং তার রাসুলের অপছন্দনীয় হয়।