কিয়ামতের আলামত বিধান

দাজ্জালের সঙ্গে ইহুদি ধর্মযাজকের সরাসরি সাক্ষাতের দাবি— কী বলে ইসলাম? 

লিখেছেন মিরাজ রহমান

সম্প্রতি দাজ্জালের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের দাবি করেছেন ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় রাব্বি বা ধর্মযাজক চেইম ক্যানিভস্কি। তার এ দাবির সত্যতা প্রকাশ করে রাব্বি ইয়াকুব জিশলজ ধর্মভিত্তিক রেডিও ২০০০ -কে দেয়া তিন ঘন্টার এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমাদের শীর্ষস্থানীয় রাব্বি চেইম ক্যানিভস্কি আমাকে বলেছেন ইতিমধ্যে মসীহ বা দাজ্জালের সঙ্গে তার সরাসরি সাক্ষাত হয়েছে।’ধর্মযাজক ইয়াকুব জিশলজ আরো বলেন, ‘ক্যানিভস্কিসহ আধ্যাত্নিক কারণে গোপন থাকা অন্যান্য রাব্বিরা মসীহের আসন্ন আগমনের বিষয়টি জনগণের কাছে প্রচার করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।’

দাজ্জালের আগমনের নিদর্শন প্রকাশিত হওয়ার দাবি করে ইয়াকুব বলেন, ‘আমাদের রাব্বিরা মসীহের আত্নপ্রকাশের অনেক নিদর্শন ইতিমধ্যে দেখতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দশবছর আগে ইসরায়েলে যখন মারাত্নক খড়া চলছিলো, তখন রাব্বি ডভ কুককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো— গ্যালিলি সমুদ্র আবার কবে অথই পানিতে ভরে যাবে। তিনি বলেছিলেন, যখন মসীহ আসবেন তখন এ সমুদ্র কানায় কানায় পূর্ণ হবে। সেই গ্যালিলি সমুদ্র কয়েক সপ্তাহ আগে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।’

তালমুদ প্রাচীন গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘দাজ্জাল বা মসীহ আসার আগে নতুন কেউ ইহুদি ধর্মে পরিবর্তিত হবার জন্য জেরুজালেম আসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। করোনাভাইরাসের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ায়, সেই কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে বলে তারা মনে করেন।  তিনি আরো জানান, ‘কয়েক দশক আগে মহাপ্রাজ্ঞ রাব্বি ইয়েজাক কাদুরি এবং রাব্বি মেনাসেম সেনিরসন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হবেন মসীহ আসার পূর্বে ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী। ধারাবাহিকভাবে পঞ্চমবারের মতো বিজয়ী হয়ে বর্তমানেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন নেতানিয়াহু।’

রাসুল (সা.)-এর ভবিষ্যৎবাণী হিসেবে কেয়ামতের আগে দাজ্জালের আগমন ঘটবে— এটা সুনিশ্চত। ইসলাম সমর্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু কখন তার আগমন ঘটবে এবং ঠিক কোন সময় তার আত্মপ্রকাশ হবে— তা সুচিহ্নিত নয়। ইসরায়েলের ধর্মযাজকদের এই দাবি কতটা ইসলামসম্মত এবং এহেন সংবাদ বা পরিস্থিতিতে মুমিন-মুসলমানের করণীয় কী?

বিষয়টি নিয়ে ইসলাম প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের গ্রান্ড ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক এবং তেজগাঁও রেলস্টেশন মাদরাসার শাইখুল হাদিস ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ, ধানমন্ডিস্থ মসজিদ-উত-তাকওয়ার সম্মানিত খতিব এবং রাহবার মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুফতি সাইফুল ইসলাম এবং নরসিংদী জামেয়া কাসিমিয়া কামিল মাদরাসার উস্তাদুল হাদিস মুফতি ওমর বিন মুহাম্মাদ। প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাদের বক্তব্য শুনথে এই ভিডিওটি দেখুন প্লিজ…



দাজ্জালের ব্যাপারে রাসুল (সা.) সর্তক করেছেন। মুমিন বান্দাকে সচেতন থাকার নিদের্শও দিয়েছেন। দাজ্জালের ফিতনাকে ‘কঠিন ফিতনা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। পাশাপাশি এই ফিতনা থেকে এবং দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার উপায় ও পথ বাতিলে দিয়েছেন রাসুল (সা.)। দাজ্জাল আসবে এটা যেমন সত্য, ইসলামের কাছে সে পরাজিত হবে এটাও মহাসত্য। সুতরাং প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উচিত হবে— এসব সংবাদ বা দাবিতে বিভ্রান্ত না হয়ে ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান থাকা, দাজ্জালের ফিতনা ও কেয়ামতের আলামত বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং দাজ্জালের ফিতনা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য রাসুল (সা.) নির্দেশিত উপায় বা পদ্ধতি গ্রহণ করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দাজ্জালের কঠিন ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

Comment

লেখক পরিচিতি

মিরাজ রহমান

গতানুগতিক ধারার বাইরে থেকে কাজ করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মিরাজ রহমান। পেশায় পুরোদস্তুর একজন সাংবাদিক হলেও কেবল ইসলামকে ঘিরেই আবর্তিত তার ধ্যান-জ্ঞান। দৈনিক পত্রিকার ইসলাম পাতায় লেখালেখি থেকে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন বটে, কিন্তু একসময় শিল্প চর্চায়ও ছিলেন বেশ মনোযোগী।
মিডিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেছেন যখন, তখনও তিনি ছাত্র। মাদানিনগর মাদরাসার কাফিয়া জামাতের (শ্রেণি) শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় কণ্ট্রিবিউটর হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দৈনিক যুগান্তরে। ধারালো লিখনী শক্তি অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত করে তোলে তাকে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রায় সবগুলোতেই ইসলামবিষয়ক কলাম ও ফিচার লিখেছেন দীর্ঘ সময়। জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে তার অন্তত দুই সহস্রাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
মিরাজ মূলত পড়াশুনা করেছেন কওমি শিক্ষাধারায়, এর পাশাপাশি তিনি জেনারেল শিক্ষাধারায়ও পড়াশুনা করছেন। সহ-সম্পাদক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায়। সেখান থেকে দৈনিক কালের কণ্ঠে। দেশে-বিদেশে অনলাইন গণমাধ্যমের জয়যাত্রা শুরু হলে মিরাজ ইন্টারনেট জগতকে ইসলাম প্রচারের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করে অনলাইনেই গাঁটছাড়া বাঁধেন। দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল প্রিয়.কমের ‘প্রিয় ইসলাম’-এর সৃষ্টি ও পথচলার সূচনা তারই হাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন প্রিয়.কমের প্রিয় ইসলাম বিভাগের এডিটর ইনচার্জ। সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার ইনচার্জ হিসেবে।
টেলিভেশনে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও আলোচনার সঙ্গেও ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ রহমান। পরিচালনা করেছেন বেশ কিছু অনুষ্ঠানও। এসো কলম মেরামত করি, ছোটদের নবী-রাসূল সিরিজ, তাবলিগী জামাতের পৃষ্ঠপোষক-মুরুব্বি ছিলেন যাঁরা, শরয়ী পর্দার বিধান, আশিক মিন ফিলিস্তিন, নারী তুমি সৌভাগ্যবতী ও হালাল ব্যবসা ও হালাল অর্থনীতির কথকতাসহ বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থেও জনক তিনি। বর্তমান তিনি ইসলাম প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দ্য সুলতান প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।