সৌদি আরব ও ইরানের দূরত্ব মিটাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে ইমরান খান। তাঁর এমন উদ্যোগ সৌদি আরব ও ইরানসহ বিশ্বপরিমন্ডলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। গত ১৪ই সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর মালিকানাধীন বড় দুটি তেল স্থাপনা আবকাইক তেলক্ষেত্র ও খুরাইস তেল শোধনাগারে ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র হামলা হয়। সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার জন্য ইরানকে দায় করছে। ফলে উপসাগরীয় অঞ্চলে আবারো যুদ্ধ শুরু হওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সৌদি আরব ও ইরান শক্তিশালী দুটি দেশ। নিজেদের আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখতে দেশ দুটি বহু বছর ধরেই প্রতিযোগিতায় লেগে আছে। দশকের পর দশক ধরে চলে আসা এই বিরোধ তীব্র হয়েছে দেশ দুটোর ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে। দেশ দুটি ইসলাম ধর্মের আলাদা দুটো শাখার অনুসারী। ইরানের জনসাধারণ শিয়া মুসলিম আর সৌদি আরব সুন্নি মুসলিম। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যেও ধর্মীয় এ বিভাজন রয়েছে। যার কারণে কারো ইরানের সাথে, কারো সৌদি আরবের সাথে সখ্যতা।
অন্যদিকে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে পূর্বের বিরোধ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক সৌদিতে ড্রোন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উপসাগরীয় এলাকায় মার্কিন সৈন্য মোতায়নের ঘোষণা দিয়েছেন।
পাক সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার এ সংঘাতের ইতি টানতে চায় পাকিস্তান। তাই দু’দেশের মধ্যকার উত্তেজনা কমাতে ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। আর তাই সৌদি ও ইরানে একের পর এক সফরে যাচ্ছেন ইমরান খান। দু’দেশের নেতাদের সাথে বৈঠক করছেন দফায় দফায় ।
সৌদি ও ইরানের দূরত্ব নিরসনের আলোচনার জন্য গত ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সৌদি আরব সফরে যান ইমরান খান। চলতি বছরেই এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো সৌদি আরব সফরে যান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের গণমাধ্যম জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, এ সফরে তিনি সৌদি বাদশা সালমান এবং ক্ষমতাশীন যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের সাথে বৈঠক করেন। এ সময় সৌদির এ দুই নেতা ইমরান খানের প্রশংসা করেন।
পাকিস্তানের আরেক গণমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে জানায়, সৌদির শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠকের সময় ইরানের সাথে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানান ইমরান খান। যদিও তার আহ্বানে সৌদি ক্ষমতাশীন যুবরাজ কী বলেছেন তা জানা যায়নি।
এর আগে গত রোববার (১৩ অক্টোবর) ইরান সফরে যান পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ সময় দু’দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করার পাশাপাশি সৌদির সঙ্গে সংঘাত কমাতে ইরানকে আহ্বান জানান তিনি। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে জানা যায়, সফরে ইমরান খান ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে বৈঠকের সময় সৌদি আরবের সাথে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন। সেই সঙ্গে রিয়াদ-তেহরান যেন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধাণ করে সেটিও বলেন।
জানা যায়, সৌদি আরব এবং ইরানকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে মুখোমুখি বৈঠকে বসার ব্যবস্থা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইমরান খান। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের পার্শ্ববৈঠকেও ইরান-সৌদি বিরোধ নিরসনের প্রস্তাবদেন পাক প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে ইমরান খান বলেন, সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে সংঘর্ষ দেখতে চায় না পাকিস্তান। দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারায় আমি খুশি। আশা করছি সৌদি ও ইরানের মধ্যকার চলামান সংঘাত অনেকটাই কমে আসবে।