বিবাহ হলো একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি, যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য-সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ইসলাম-ধর্মে বিবাহের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামী বিবাহরীতিতে পাত্র-পাত্রী উভয়ের সম্মতি এবং বিবাহের সময় উভয়পক্ষের বৈধ অভিভাবকের উপস্থিতি ও সম্মতির প্রয়োজন। বিয়ে ইসলামের এক বিশেষ বিধান। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ নিজের জীবনসঙ্গিনী খুঁজে পায়। হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিবাহ করল; সে তার অর্ধেক ঈমান পূর্ণ করে নিল। এখন সে যেন বাকি অর্ধেকের জন্য তাকওয়া ও আল্লাহভীতি অবলম্বন করে। (বায়হাকি শরিফ)
মানবসমাজের শুরু থেকে অদ্যাবধি একসঙ্গে বসবাস করার জন্য ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী স্বীকৃতি জরুরি। এই স্বীকৃতিকে আমরা বিবাহ, নিকাহ বা ম্যারেজ বলে থাকি বা জানি। লেখিকা রেহনুমা বিনতে আনিস তার বিয়ে গ্রন্থটিকে উল্লেখ করেছেন, বিয়ে বা বিবাহ কেবল দুজন ব্যক্তির একত্রে বসবাস নয়; বরং দুটি পরিবার ও গোষ্ঠীর সম্পর্কের নির্ণায়কও।
মূলত বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধনের প্ল্যাটফর্মটিকে ধর্মীয় অনুশাসনের রেখা দিয়ে বিচারের একটি চেষ্টা বিয়ে গ্রন্থটিতে খুঁজে পাওয়া যায়। বইটির শুরুর প্রবন্ধ ‘প্যাকেট না প্রোডাক্ট’, যেখানে লেখক মানুষের বাহ্যিক ও ভেতরের মূল্যবোধের নির্বাচনমূলক স্থূলতার সূক্ষ্মতর দৃষ্টিভঙ্গির শ্রেণিভেদ তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছেন।
রেহনুমা বিনতে আনিস লিখেছেন, ‘সম্পর্ক টিকে থাকে স্ত্রীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও উত্তম গুণাবলিকে কেন্দ্র করে এবং এই বিষয়টি স্বামীর ক্ষেত্রেও তদ্রূপ।’
পবিত্র কুরআনের রেফারেন্স টেনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আল্লাহ মহান ইরশাদ করেন, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আর-রুম, আয়াত : ২১)। এ ছাড়া নারী-পুরুষের পর্দার বিষয়টিও বইটিতে উল্লেখিত হয়েছে এবং সেখানেও পবিত্র কুরআনের সুরা আন-নুরের ৩০-৩১ আয়াতের উক্তিগুলো রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রন্থটির শিরোনাম বিয়ে হলেও, নানা প্রবন্ধে মানুষের একত্রে বসবাস করার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় গুরুত্ব বহন করে, তার আলোচনা উঠে এসেছে। এছাড়া কর্মজীবী নারীদের ঘরে ফিরে এসে স্বামীকে একান্ত করে না পাওয়া, শাশুড়ি-ননদের কটূক্তি সহ্যাতীত হয়ে পথ হারানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং সমাজে চলমান বাস্তব কথাগুলো গ্রন্থটিতে উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রেও লেখিকার বয়ান হলো, বিয়ে করার ক্ষেত্রে আবেগের বশবর্তী না হয়ে মহান আল্লাহর কাছে চাওয়া আর বুঝে-শুনে অগ্রসর হওয়াটাই জরুরি।
আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীর প্রতি বৈষম্যের তুলনাটা চোখে পড়ার মতো এবং লেখিকা রেহনুমা বিনতে আনিস জীবনবোধের সূক্ষ্মতর দিকগুলো বেশ স্পষ্টভাবেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। সন্তানের নামের বিষয়টিকেও তিনি তালিকাভুক্ত করেছেন। মেয়ে-সন্তানের ক্ষেত্রে তিনি দেখেছেন মেয়ে বড় হয়ে অন্যত্র চলে যাবে, ভেবে জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই পরিবারের নাম থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হয়। অথচ ছেলে-সন্তানের ক্ষেত্রে নামের শেষে বাবার নামের যোগসূত্র থাকে। এমন আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও পারিবারিক অবহেলাগুলো তুলে ধরেছেন লেখক। ইসলামের আলোকে সুন্দর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। মোট ২২টি প্রবন্ধ রয়েছে বইটিতে।
প্রবন্ধগুলোর শিরোনাম হলো : ‘প্যাকেট না প্রোডাক্ট’, ‘ভালো বর পেতে হলে’, ‘তুমি ছিলে গো মোর প্রার্থনায়’, ‘বিয়ে একটি উত্তম বন্ধু’, ‘বিয়ে না হলে নাই-বা হলো’, ‘অনেক কিছুই আসে-যায়’, ‘প্রতিটি ফোঁড়েই জীবন’, ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’, ‘হঠাৎ বিয়ে’, ‘স্বপ্নভঙ্গ’, ‘মহাকাব্য’, ‘এপার ওপার’, ‘প্রত্যুষের প্রত্যাশা’, ‘মিথ্যা’, ‘আলোর দিশা’, ‘একজন বেহেস্তী নারী’, ‘যুদ্ধ’, ‘অমানুষ’, ‘প্রশান্তি’, ‘ব্যথা’, ‘পরিচয়’ এং ‘অনন্ত পথের সাথি’।
প্রতিটি প্রবন্ধেই সমাজব্যবস্থার বাস্তব রূপের সঙ্গে ইসলামের দিক-নিদের্শনার চমৎকার সন্ধি ঘটিয়েছেন লেখক। বিয়ে গ্রন্থে ব্যথা, প্রশান্তি, যুদ্ধ, পরিচয়, মিথ্যা, স্বপ্নভঙ্গের মতো বেশ কতগুলো বাস্তব বিষয়ের সন্নিবেশ হয়েছে সাবলীল ভাষায়।
বইটি প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স। গ্রন্থে সংকলিত বক্তব্যগুলোর সাহিত্য-মান নিশ্চিতকরণে কাজ করেছেন অনুবাদক মাসুদ শরীফ। বইটির মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৫৮। মুদ্রিত মূল্য ২৫০ টাকা। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। প্রচ্ছদ করেছন আলেক হোসাইন।
বইটি কিনতে চাইলে কল করুন ০১৭১০ ১৯৭৫৫৮ বা ০১৯৯৮ ৫৮৪৯৫৮ এই নম্বরে অথবা ভিজিট করুন www.guardianpubs.com এই ঠিকানায়। এ ছাড়া ঘরে বসে বইটি কিনতে অর্ডার করতে পারেন রকমারি.কমে।