হজ— গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি। মুসলিম মাত্রই আকুল হৃদয়ে অপেক্ষমান থাকে— দরবারে এলাহি থেকে কখন আসবে ঐশী আহবান। কালো গিলাফের ছায়া আর মসজিদে নববীর সবুজ মায়ায় নয়ন জুড়াবে কখন। কবি আল্লামা শেখ সাদী লিখেছেন, ‘দাদে উরা কাবেলিয়াত শর্তে নিছত/বলকে শর্তে কবুলিয়াত দাদে উসত’। অর্থ্যাৎ— ‘মহান প্রভুর দানে সিক্ত হওয়ার জন্য বান্দার যোগ্যতা কোনো শর্ত নয়। মহান প্রভুর ঐশী মনোনয়নই একমাত্র শর্ত’। বান্দার ইচ্ছা-শক্তির বলে সফরে হিজাযের কাফেলায় শরিক হওয়া সম্ভব নয়। এ সাফল্য, এই সৌভাগ্য বাহুবলে অর্জনযোগ্য কোনো বিষয় নয়। রহমতে খোদার ডাক যতক্ষণ না আসে…
২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে যারা হজে যাবেন তাদেরকে হজকেন্দ্রিক বিভিন্ন পরামর্শ-দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য সর্বমোট ৫৮জন আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখকে পবিত্র হজব্রত পালনে পাঠাচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। এতোটা বৃহৎ পরিসরে সরকারিভাবে বিভিন্ন মতাদর্শ ও বিভিন্ন তরিকার হক্কানী আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখদের হজব্রত পালনের ব্যবস্থাকরণধর্মী এমন উদ্যোগ— বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সর্বপ্রথম। সরকারি খরচে হজে যাওয়া কার জন্য জায়েজ আর কার জন্য জায়েজ নয়— ইত্যকার আলোচনায় না জড়িয়ে সরাসরি বলা সম্ভব নিসঃন্দেহে এটি বর্তমান সরকারের একটি বড় ধরনের অর্জন এবং চিন্তাগত সাফল্য।
বাংলাদেশের আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখদের মাঝে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাসআলাগত বিভেদ-বিভক্তি একটি ঐতিহ্যবাহী বিষয়। এছাড়া তরিকাগত ভিন্নতায় ভিন্নভাবে পথচলা এবং আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ইসলাম পালনের নমুনাও বাংলাদেশের বেশ পুরানো দৃশ্য। শত বছরের ঐতিহ্যগত এই বিভদে-বিভক্তির কারণে বাংলাদেশের আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখগণকে কোনোভাবেই এক প্লাটফর্মে আসতে দেখা যায়নি। শত মত ও পথের অর্ধশতাধিক আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখকে একই সঙ্গে হজ পালনে পাঠানোর ব্যবস্থাটি এক্ষেত্রে অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় শুভ উদ্যোগ।
এছাড়া প্রতি বছর হজের মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম-অমুসলিম দেশের সরকার তাদের দেশের প্রতিথযশা ব্যক্তিত্বদের পবিত্র হজব্রত পালনের ব্যবস্থা করেন। বৈশ্বিক ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এ দ্বার উন্মোচিত হলো। এ প্রসঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিলো, ২০১৯ সালের হজ ব্যবস্থাপণা যেন অতীতের সব বছরের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হজ ক্যাম্পসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনাকে সুদীর্ঘ উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ থেকে হাজীদের ইমিগ্রশন সম্পন্ন করা এবং হাজীদের লাগেজ আলাদা এজেন্সি কর্তৃক গ্রহণ ও পৌছানোর ব্যবস্থাপনাকরণসহ এমন কিছু নতুন উদ্যোগ-আয়োজন সংযুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি, যা আগে কখনো করা সম্ভব হয়নি।
প্রতি বছর মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, সেচ্ছাসেবক ও হজ গাইডসহ বিভিন্ন প্রথিতযশা-গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে রাষ্ট্রীয় খরচে হজে পাঠানো হয়। এটা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রচলন। এবার আমরা রাষ্ট্রীয় খরচে হজে পাঠানোর সংখ্যায় কোনো বৃদ্ধি না ঘটিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় সব মতাদর্শ ও তরিকার হক্কানী আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখদের হজে পাঠানোর একটি মহতি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছি। এ বিষয়টি সুধীমহলসহ জনসাধারণের কাছেও বেশ সমাদৃত হয়েছে। এ ব্যবস্থাপনাকে সাধুবাদ জানিয়ে আলেম-উলামাদের সম্মানে মাননীয় রাষ্ট্রপতি দোয়া-মাহফিল সভার আয়োজন করেছেন’।
বাংলাদেশে দুই ধারার ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। অন্যতম ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা হলো— কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা। এ ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার নেতৃত্বদানকারী প্রতিথযশা আলেমেদ্বীনগণ এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় পবিত্র হজব্রত পালনে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কথা হয় আল হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়্যার কো-চেয়ারম্যান এবং মালিবাগ জামিয়া শরইয়্যাহ মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস মাওলানা আশরাফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সরকার আলেম-উলামাদের হজে পাঠাচ্ছে, এটা ভালো উদ্যোগ। আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বহু সংখ্যক আলেম-উলামা একই সঙ্গে হজে যাচ্ছেন, পবিত্র সফরে যাচ্ছেন— এই সফরে একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হবে এবং নিজেদের মাঝে সৃষ্ট দূরত্বও মিটে যাবে আশা করি’।
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হালিম বোখারী বলেন, ‘হজ করা ভালো কাজ। সরকার আলেম-উলামাদের হজে পাঠাচ্ছেন মানে ভালো কাজে পাঠাচ্ছেন সুতরাং এটা ভালো উদ্যোগ।’
দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ শোলাকিয়ার গ্রান্ড ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, ‘হজ একটি আবেগ জড়িত ইবাদত এবং এ ইবাদতটি পালনে বান্দার অর্থ ব্যয় হয় সুতরাং কোনো বান্দাই চায় না তার হজ পালনে কোনো ঘাটতি হোক। আমি নিজেও দেখেছি বহু মানুষ হজের মাসআলা জানতে আলেম-উলামাদের কাছে ছুটে আসেন। সুতরাং হাজীদের পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে আলেম-উলামাদের হজে পাঠানোর এ উদ্যোগকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। এছাড়া এবার ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর আন্তরিকতায় বহু মত ও পথের আলেম-উলামা এক সঙ্গে হজ পালনে সফর করছেন। নানা কারণে বিভিন্ন আলেম-উলামাদের মাঝে যে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে এক সাথে সফর করা ও থাকার সুবাধে সেসব দুরত্ব গুছে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।’
গোপালগঞ্জস্থ গওহরডাঙ্গা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা রুহুল আমীন বলেন, ‘আলেম-উলামাদের সম্মান করা সরকারসহ জনসাধারণের দায়িত্ব। আমি মনে করি, সরকার এই উদ্যোগটির মাধ্যমে আলেম-উলামাদের সম্মান দিয়েছেন। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহসহ যাদের মাধ্যমে এমন মহতি উদ্যোগ বাস্তাবায়িত হচ্ছে তাদের সবার শুকরিয়া জ্ঞাপণ করছি।’
চট্টগ্রামস্থ জিরি মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শাহ মো. তৈয়্যব বলেন, ‘সরকার আমাদেরকে হজে নিচ্ছে, মক্কা-মদিনায় নিচ্ছে— এটা তো ভালো উদ্যোগ। আমার ফরজ হজ তো অনেক আগেই আমি আদায় করেছি। এখন যে যতবার পবিত্র ভূমিতে পাঠাবে আমি ততবার যাবো। এটা শুকরিয়া জানানোর মতো উদ্যোগ।’
চট্টগ্রামের জামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী বলেন, ‘সরকার আলেম-উলামাদের হজে পাঠিয়ে সম্মান দিয়েছেন। আমরা দোয়া করছি আল্লাহও যেন তাদের সম্মানিত করেন। আল্লাহ চাইলে এই সফরের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ের কল্যাণ সাধিত হতে পারে।’
গেন্ডারিয়াস্থ বায়তুল উলুম ঢালকানগর মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জাফর আহমাদ বলেন, ‘সরকারের এই্ উদ্যোগকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখি। আমার ব্যক্তিগত একটি উপলব্ধি হলো— সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলেম-উলামাদের সম্পর্কগত দূরত্ব থাকা ঠিক নয়, এটা অনেক ক্ষেত্রে দ্বীনের কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য অ-সহায়ক। এই সফরের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে আলেম-উলামাদের এবং আলেম-উলামাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পাবে এবং এই গভীরতা দ্বীনের স্বার্থকে তরান্বিত করবে ইনশা আল্লাহ।’
শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্স সেন্টারের মুহতামিম মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ বলেন, ‘প্রতি বছর সরকারি খরচে বিভিন্ন মানুষকে হজে পাঠানো হয় কিন্তু এবার সরকার হজে পাঠানোর জন্য হক্কানী আলেমেদ্বীনদেরকে মনোনীত করেছেন। এটা সরকারের ভালো একটি উদ্যোগ। সরকার আলেমদের সম্মান দিয়েছেন আশা করা যায় এসব আলেমগণ হজে গিয়ে দেশ-জাতি ও দ্বীনের কল্যাণে দোয়া করবেন।’
জামেয়া কাশেমুল উলুম হজরত শাহজালাল (রা.) দরগা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মো. মুহিব্বুল হক বলেন, ‘এই উগ্যোটি বাস্তাবায়নের মাধ্যমে প্রতিয়মান হলো যে, বর্তমান সরকার ধর্মের প্রতি আন্তরিক। হক্কানী আলেমেদ্বীনদের সম্মান দিয়ে হজে পাঠাচ্ছে। আমি এই উদ্যোগ বাস্তাবয়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদীস মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ বলেন, ‘আমি মনে করি সরকার একটি মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। হজের সফর নিছক কোনো সফর নয় এটা একটি পবিত্র যাত্রা। বিভিন্ন মতাদর্শের আলেম-উলামাদের মাঝে বৃহৎ ঐক্য সাধনে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ইনশা আল্লাহ। এমন একটি মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি।’
ইদারাতুল উলুম আফতাব নগর মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘নিসঃন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। আমি মনে করি, দ্বীনের কাজ সম্পন্ন করার নিয়তে আলেম-উলামা ও সরকারের মাঝে সব সময় সুসস্পর্ক থাকা উচিত। একসঙ্গে বিভিন্ন মতাদর্শের আলেম-উলামাদের এই সফর তাদের মাঝে ঐক্য সূচনায়ও ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আশা করা যায়।’
কুমিল্লার জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম বরুড়া মাদরাসার মুহ্তামিম মাওলানা মোহাম্মদ নোমান বলেন, ‘সরকারের রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে অবশ্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এছাড়া আলেম-উলামাদের মাধ্যমে হাজীদের হজকেন্দ্রিক দিক-নির্দেশনা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হলে এ উদ্যোগটি শতভাগ সফল হবে বলে আমি আশা করি।’
ব্রাহ্মনবাড়িয়ার জামেয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার শাইখুল হাদীস ও দারুল আরকাম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, ‘কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়ে সরকার আলেমদের সম্মানিত করেছে। এবার সম্মান দিচ্ছে হজে পাঠিয়ে। সরকারের এ উদেধ্যাগকে আমি সাধুবাদ জানাই। আলেম-উলামাগণ হজের সময় জনসাধারণকে হজকেন্দ্রিক মাসআলার সমাধান দিয়ে উপকৃত করতে পারবেন— তাই এই উদ্যোগটির যথার্থতা রয়েছে।’
গোপালগঞ্জস্থ জামেয়া ইসলামিয়া কাজুলিয়া মাদরাসার মুহতামিম ও গওহরডাঙ্গা মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আবুল কালাম বলেন, ‘হজের সফরে আলেম-উলামাদের উপস্থিতি খুবই জরুরি। সাধারণ মানুষ হজের মাসআলা জেনে উপকৃত হতে পারে। সরকারিভাবে আলেম-উলামাদের হজে পাঠানোর উদ্যোগটিকে আমি সাধুবাদ জানাই।’
আলিয়া শিক্ষা ব্যবস্থা— সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে প্রচলিত আরেকটি ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা। এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় পবিত্র হজব্রত পালনে যাচ্ছেন এ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিথযশা আলেমরাও। কথা হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিশিষ্ট বক্তা মাওলানা মীর হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এমন একটি মহতি উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলো। এর আগের কোনো সরকারের কোনো ধর্মমন্ত্রী এতো সংখ্যক আলেম-উলামাদের হজে পাঠাতে সক্ষম হয়নি। আমি এই উদ্যোগকে সাদুবাদ জানাচ্ছি। আশা করবো এই উদ্যোগ প্রতি বছর জারি থাকবে।’
বরিশালের চরমোনাই আহছানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মো. মোসাদ্দিক বিল্লাহ আল–মাদানী বলেন, ‘আমি প্রথম এই আমন্ত্রণে যেতে রাজি ছিলাম না। পরে পরামর্শক্রমে যাওয়ায় সম্মত হয়েছি। কারণ সরকার এবার সব হক্কানী আলেম-উলামাদের হজে পাঠাচ্ছে। বিগত দিনে এই মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্বজনপ্রীতি হয়ে অযোগ্য লোকজন হজে যেত। এবার ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ প্রসংশাযোগ্য একটি কাজ করেছেন।’
পিরোজপুরস্থ শর্ষিনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহা. শরাফত আলী বলেন, ‘ভালো মনে করেই তো যাচ্ছি ইনশা আল্লাহ। প্রতি বছরই কমবেশি আলেম-উলামাদের হজগাইড হিসেবে হজে পাঠানো হয় তবে এবারের বিষয়টি অতীতের তুলনায় বেশ প্রসংশনীয়।’
মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট বালক কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বর্তমান সরকার প্রধানের নির্দেশনায় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে বড় বড় হক্কানী আলেমেদ্বীনদের পবিত্র হজব্রত পালনে পাঠানোর উদ্যোগটি মোবারকবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমি আশা করবো সরকার তাদের এ মহতি উদ্যোগ প্রতি বছর জারি রাখবেন।’
সরকারী মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষ পরিপূর্ণভাবে হজের মাসআলা না জানায় সঠিকভাবে হজ পালনে সমস্যা হয়। আলেম-উলামাগণ পাশে থাকলে ভুল ধরিয়ে দিতে পারবেন এবং দিক-নির্দেশনা প্রদান করতে পারবেন। অতীতের কোনো সরকার এতো সংখ্যক আলেম-উলামাদের এক সঙ্গে হজে পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হয়নি। এমন একটি চমৎকার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
ঢাকার মহাখালীস্থ জামিয়া হুসাইনিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আল মারুফ বলেন, ‘পবিত্র হজব্রত পালনে চিকিৎসক দলসহ অন্যান্য দল যেমন যাওয়া জরুরি তারচেয়ে বেশি জরুরি আলেম-উলামাদের যাওয়া কারণ হজ একটি ইবাদত। বর্তমান সরকারের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি।’
চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি ওয়াসিউর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ ও মোবারকবাদ জানাই। আলেম-উলামাগণ হজে গিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া করবেন ইনশা আল্লাহ। আশা করবো সরকার প্রতি বছর এভাবে আলেমদের হজে পাঠোনোর ব্যবস্থা গ্রহণ জারি রাখবেন।’
চট্টগ্রামস্থ জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব সৈয়দ আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দীন বলেন, ‘অনেকে অপপ্রচার চালাত আওয়ামীলীগ সরকার ইসলামবিরোধী সরকার। মাননীয় ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর এই উদ্যোগ প্রমাণ করলো যে, আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামবিরোধী সরকার নয়। অন্যান্য বছরও সরকারীভাবে বিভিন্ন মানুষ হজে যেত কিন্তু এবার দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামাগণকে হজে পাঠনোর এই উদ্যোগটি মাশাআল্লাহ খুবই প্রশংসনীয়। দোয়া করি সরকারের এই উদ্যোগ যেন প্রতি বছর ধারাবাহিক হয়।’
কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘নিসঃন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। সরকার আলেম-উলামাদের হজে পাঠিয়ে সম্মানিত করছেন— এটা তো কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই খারাপ বা মন্দ কোনো উদ্যোগ হতে পারে না। এই সফরে অনেক অপরিচিত আলেম-উলামাদের মাঝে পরিচিতি ঘটবে এবং এই পরিচিতি উম্মাহর কল্যাণে কাজে আসুক— এমনটাই প্রত্যাশা রইলো।’
কিশোরগঞ্জস্থ চমকপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সুপারিটেন্ডেন্ট মাওলানা ইয়াকুব আলী খন্দকার বলেন, ‘অতীতে এমন কোনো উদ্যোগ কোনো সরকার গ্রহণ করেনি সুতরাং এটি খুবই প্রশংসাযোগ্য একটি আয়োজন। আমি আশা করবো সরকার এইভাবে প্রতি বছর দেশের হক্কানী আলেম-উলামাগণকে হজে পাঠোনোর ব্যবস্থা জারি রাখবেন।’
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘গুনাহমুক্ত গ্রহণযোগ্য হজের একমাত্র বিনিময় জান্নাত।’ (বুখারি ও মুসলিম) বর্তমান সরকারের এই মহতি উদ্যোগের মাধ্যমে আলেম-উলামা ও সরকারের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক গভীর থেকে আরো গভীর হবে এবং সম্পর্কগত এই উন্নয়ন দেশ-জাতি ও দ্বীনের কল্যাণে ব্যয়িত হবে— এমনটাই প্রত্যাশা।