মহানবী হযরত মুহম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যার জীবনের প্রতিটি কাজ- ক্ষুদ্রতম থেকে বৃহত্তম- সমস্ত কিছুই গোটা মানব জাতির জন্য আদর্শ ও অনুকরণীয়। তাই তাঁর প্রাত্যহিক জীবনের কার্যাবলি নিয়েও কম গবেষণা হয়নি পৃথিবীতে। তিনি কখন কী করতেন, কেন করতেন- এসব কিছুর উত্তর খুঁজেছেন বিজ্ঞানীরা আর বের করে এনেছেন চমৎকার সব ফলাফল। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) -এর বেশ কিছু অভ্যাস নিয়ে এ যাবতকাল অনেক গবেষণা হয়েছে, যা বহু বছর ধরে বিজ্ঞান ও চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে, এটা মানবদহের জন্য উপকারী। সেরকমই ৯টি অভ্যাস নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজগুলো নিয়মিত করতেন, তাহলো-
১. সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া : মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জাগতেন এবং দিনের কাজ শুরু করতেন। আজ বিজ্ঞান প্রমাণ করে যে, সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া মানুষের মধ্যে প্রোডাক্টিভিটি বেশি থাকে এবং সেই সঙ্গে যারা দ্রুত ঘুম থেকে ওঠে তাদের হতাশ কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে কম।
২. স্বল্প আহার গ্রহণ : মহানবী মুহাম্মদ (সা.) রোগ ও অসুস্থতা প্রতিরোধ করার জন্য কম খেতেন। বহু বছর পরে বিজ্ঞান আজ প্রমাণ করে যে, স্বল্প আহার গ্রহণ আমাদের মধ্যে অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩. ধীরে ধীরে খাদ্য গ্রহণ : খাওয়ার পরে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠানোর জন্য অন্তত ৩০ মিনিট সময় লাগে, যা বলে যে, আপনার পেট পরিপূর্ণ। তাই বিজ্ঞানও আজ আমাদেরকে ধীরে ধীরে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
৪. পরিবারের সঙ্গে খাবার খাওয়া : আমাদের নবী (সা.) সবসময় পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে খেতে উৎসাহিত করতেন। আজ বিজ্ঞান বলছে যে, পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাবার খেলে মানুষের মানসিক চাপ কমে যায় অনেকাংশে।
৫. তিন শ্বাসে পানি পান : মহানবী (সা.) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন। এটা সুন্নাহ্। আজ বিজ্ঞান দাবি করে যে, একসঙ্গে পানি পান করা রক্তের ইলেক্ট্রোলাইটগুলোতে মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোরা এবং ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
৬. ডালিম খুব পছন্দ করতে তিনি : নবী মুহাম্মদ (সা.) ডালিম খুব পছন্দ করতেন এবং খুব মজার বিষয় হলো, আজ বিজ্ঞান পৃথিবীর সব থেকে স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে ডালিমকে ঘোষণা করেছে।
৭. রোজা/উপবাস : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদেরকে রমজানের সময় রোজা রাখতে বলেছিলেন এবং তিনি রোজা রাখতেন নিয়মিত। আজ জাপানী বিজ্ঞানীরা রমজান মাসে রোজার ঘোষণা করেছে এবং তারা বলছে যে, রোজা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং শরীরের ক্যান্সার কোষগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে।
৮. খেজুর খাওয়া : আমরা রোজা ভাঙ্গি খেজুর খেয়ে। খেজুর আমাদের দেহে রক্তশর্করা’র পরিমাণ স্থির রাখে। ইলেক্ট্রোলাইট শরীরের রক্তসমতা ও ভারসাম্য রক্ষা করে। বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, খেজুর দেহে অক্সিকোটিন উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
৯. ফিট/ সুস্থ থাকা : ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তিনটিই মানুষকে শারীরিকভাবে ফিট এবং সুস্থ রাখে। নামায আদায় করাটাও একটা শারীরিক ব্যায়াম। বিজ্ঞান অবশ্যই আমাদের হৃদয় এবং মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করাটা একজন মানুষের শারীরিক ব্যায়াম এর প্রয়োজন পূরণ করতে পারে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাসগুলো যদি আমরা আয়ত্বে আনতে পারি, তাহলে একইসঙ্গে তাঁর সুন্নতের অনুসরণের পাশাপাশি শারীরিকভাবেও সুস্থ সবল থাকতে পারবো আমরা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাওফিক দান করুক।