ঈমান একটি আরবী শব্দ। এর সাধারণ অর্থ হলো— বিশ্বাস করা। এছাড়াও আনুগত্য করা, অবনত হওয়া, নির্ভর করা ইত্যাদি অর্থেও ঈমান শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ঈমান মূলত ছয়টি বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত, আর সেগুলো হলো- ১. আল্লাহ। ২. ফেরেশতা। ৩. আসমানী কিতাব। ৪. ইবী-রাসুল। ৫. শেষ দিবস ও পুনরুত্থান এবং ৬. ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপণ করা।
ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় ঈমানের অর্থ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমামগণের বিভিন্নধর্মী সংজ্ঞা পরিলক্ষিত হয়। সেগুলো হলো— ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, ‘আন্তরিক বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতিই হলো ঈমান’। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) -এর আনীত সকল বিধি-বিধানসহ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাই হচ্ছে ঈমান’। ইমাম শাফেয়ী, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) -এর-মতে, অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আরকানসমূহ (ইসলামের বিধি-বিধান) কাজে পরিণত করার নাম ঈমান।
কালেমার প্রথম অংশ হলো— ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, অদ্বিতীয়। তিনি সব পারেন, সব করেন। সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র তারই অধীন। তিনি সব ধরণের দুর্বলতা, ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র। সামান্য থেকে সামান্যতম বিষয়েও সবাই তার মুখাপেক্ষী, কিন্তু তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন- এমন বিশ্বাস লালন করা।
কালেমার দ্বিতীয় অংশ হলো— ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। তিনি সর্বশেষ নবী। মানুষের হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ পয়গম্বর। তার পরে আর কোনো নবী অথবা রাসুল আসবেন না- এ কথাও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা এবং মেনে নেয়া।
সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো ঈমান। ঈমানের বিপরীত কুফর। ঈমান সত্য, কুফর মিথ্যা। ঈমান আলো, কুফর অন্ধকার। এই ঈমান রক্ষার জন্য সর্বাগ্রে জানতে হবে ঈমান কাকে বলে। এবং আরো জানতে হবে কোন বিষয়গুলো ঈমানবিধ্বংসী। কী কী কাজ করলে ঈমান চলে যায়। আর কোন কাজের মাধ্যমে ঈমান থাকে এবং আরও মজবুত হয়। রাসুল (সা.) সতর্ক করে গেছেন এমন একটি যুগ সম্পর্কে, যে যুগে বিভক্তি দেখা দেবে। ফেতনা-ফ্যাসাদ প্রবল হবে। দাঙ্গাহাঙ্গামা বেড়ে যাবে। অশ্লীলতা, নির্লজ্জ বেহায়াপনা ব্যাপক আকার ধারণ করবে। আর তখন ঈমানের ওপর টিকে থাকা একজন মুমিনের জন্য বেশ কঠিন। প্রত্যেক মুমিনের সর্তক থাকা জরুরি- সমাজের বিভিন্ন ফেতনা-ফ্যাসাদ ও বিভ্রান্তি কবলে পড়ে ঈমান হারানো কিংবা ঈমানের দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ যেন আমাদের ঈমানের সৌভাগ্য থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বঞ্চিত না করেন। আমীন।
Comment