কুরআনুল কারিম—আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত সর্বশেষ আসমানি কিতাব। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি সুদীর্ঘ তেইশ বছরে প্রয়োজন পরিমাণে অল্প-বিস্তর করে এই গ্রন্থ অবতীর্ণ হয়েছে। গোটা কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে। ‘কুরআন’ আরবী শব্দ। যার অর্থ—পঠিত বা আবৃত্তিকৃত। পরিভাষায় কুরআন বলা হয়—কুরআন আল্লাহর বাণী, যা মুহাম্মাদের (সা.) ওপর ক্রমান্বয়ে ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ লিপিবদ্ধ রয়েছে। পবিত্র কুরআন একটি অলৌকিক গ্রন্থ; যা মানবজাতির পথনির্দেশক। মানবজীবনের সকল সমস্যার সাংবিধানিক সমাধান নিহিত রয়েছে এই গ্রন্থে।
‘হাফিজ’ আরবী শব্দ। এর বাংলা অর্থ রক্ষক। তবে হাফিজ বলতে সাধারণত যে বা যারা পবিত্র কুরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করতে সক্ষম হন তাদের বোঝানো হয়। রাসুল (সা.) তার সাহাবীদের বিভিন্ন উপায়ে পবিত্র কুরআন মুখস্থ বা হিফয করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করতেন। সাহাবীগণও রাসুলের (সা.) নির্দেশনা অনুযায়ী পবিত্র কুরআন হিফয করেছেন। ফলে রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশাতেই সাহাবায়ে কেরামের একটি বড় অংশ হাফেজে কোরআন হয়েছেন। পবিত্র কুরআন হিফয করার মুবারক ধারা রাসুলের (সা.) যুগ হয়ে সাহাবা আজমাইন, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও সালাফে সালেহীনদের কাল পেরিয়ে বর্তমান পর্যন্ত জারি রয়েছে। আশা করা যায় কিয়ামত পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। এ ছাড়া পবিত্র কুরআন হিফযের পাশাপাশি রাসুলের (সা.) হাদীস মুখস্থকরণের একটি মহতি প্রচলনও মুসলিম-সমাজে প্রচলিত রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে রাসুল হিফয করার বিভিন্ন নিয়ম-পদ্ধতি ও প্রথা-রীতি চালু রয়েছে। অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশে চালু রয়েছে পবিত্র কুরআন হিফয করার নানান পদ্ধতি। চালু রয়েছে হাদীসে রাসুল মুখস্থকরণের নানা আয়োজন। কীভাবে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে রাসুল সহজে মুখস্থ করা যায়, কীভাবে তা স্থায়ীভাবে ধারণ করা যায় এবং এর সহায়ক উপায়-পদ্ধতিগুলো কী—এমন-সব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থ হিফয করতে হলে। গ্রন্থটি লিখেছেন শাইখ আব্দুল কাইয়্যুম আস-সুহাইবানী। বাংলা ভাষায় গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন আব্দুল্লাহ মাহমুদ। সম্পাদনা করেছেন আকরাম হোসাইন। বানান ও ভাষারীতি সংশোধন করেছেন জাবির মুহাম্মাদ হাবীব ও এইচ এম সিরাজ।
বইটিতে মোট ছয়টি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে হিফযের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য প্রসঙ্গ। দ্বিতীয় অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে বিস্ময়কর স্মরণশক্তি প্রসঙ্গ। তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে মুখস্থ করার পদ্ধতি। চতুর্থ অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে হিফযের সহায়িকা-বিষয়ক আলোচনা। পঞ্চম অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে কুরআনুল কারীম হিফয করার ফজিলত প্রসঙ্গ। এবং ষষ্ঠ অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে হাদীস মুখস্থ করার ফজিলত।
বইটি সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে সম্পাদকের কথায় আকরাম হোসাইন লিখেছেন, ‘বিশিষ্ট লেখক শাইখ আব্দুল কাইয়্যুম ইবনু মুহাম্মাদ হিফযের ক্ষেত্রে আমাদের প্রান্তিক ধারণা দূর করার জন্য এবং জ্ঞানের ভুবনে আমাদের অভিযাত্রাকে আরও গতিশীল ও অর্থপূর্ণ করার লক্ষ্যে হিফয বইটি রচনা করেছেন। বইটিতে তিনি হিফযের পরিচয়, প্রকার, প্রয়োজনীয়তা, উপযুক্ত সময়, সহায়ক পদ্ধতি, বিস্মৃতির কারণ এবং এসব বিষয়ে পূর্ববর্তীদের প্রেরণামূলক ঘটনা সন্নিবেশিত করেছেন। আশা করছি, বইটি পাঠকের মধ্যে কুরআন-হাদীসসহ প্রয়োজনীয় সকল জ্ঞানমূলক বিষয় মুখস্থ করতে উৎসাহিত করবে।’
বইটি প্রকাশ করেছে সমকালীন প্রকাশন। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯৬। মুদ্রিত মূল্য ১৪১ টাকা। ২০১৯ সালের আগস্টে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি কিনতে চাইলে ১১/১ বাংলাবাজারস্থ ইসলামী টাওয়ারে অবস্থিত সমকালীন প্রকাশনের দোকান থেকে কিনতে পারেন অথবা কল করতে পারেন ০১৬১৬ ৬২৬ ৬৩৬ এই নম্বরে। এ ছাড়া ঘরে বসে বইটি কিনতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন রকমারি.কমে।
ওকে/এমএইচ