আর যেসব স্ত্রীর মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর, তাদেরকে তোমরা সদুপদেশ দাও, তাদেরকে বিছানায় পৃথক করে দাও এবং (প্রয়োজনে মৃদু) প্রহার কর। তাতে যদি তারা তোমাদের বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোন পথ তালাশ করো না। [সুরা আন নিসা-৩৪] এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে হজরত ইমাম ওয়াহেদি [রহ.] বলেন, এখানে “অবাধ্যতা” দ্বারা বুঝানো হয়েছে- “স্ত্রী স্বামীর অবাধ্যচারী হওয়া”। তার আমূল পরিবর্তন হওয়া এবং কোন কারণ ছাড়াই স্বামীকে যৌনমিলনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করাও এর অন্তর্ভুক্ত। “সুদুপদেশ দাও” অর্থ হচ্ছে কোরআনে নির্দেশিত আল্লাহর বিধি-বিধানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) -এর মতে, “শয্যায় তাদের পৃথক করার” অর্থ হচ্ছে- স্ত্রীর দিকে না ফিরে বরং তার দিকে পিঠ ফিরিয়ে শোয়া এবং কোন প্রকার কথা বলা থেকে বিরত থাকা। হজরত শাবী ও মুজাহিদের মতে এর অর্থ হচ্ছে, শয্যা একেবারেই পৃথক করে নেয়া এবং স্ত্রীর সাথে এক শয্যায় না শোয়া। আর “প্রহার কর” অর্থ- হালকা মারধর করা, যাতে সে খুব একটা কষ্ট না পায়। হজরত ইবনে আব্বাসের (রা.) মতে, খালি হাতে চড়, কিল ইত্যাদির বেশী নয়। এ অবস্হায় স্বামীকে স্ত্রীর অবাধ্যতার ব্যপারে অত্র আয়াতকে নির্ধারিত আল্লাহর বিধানের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে।
বোখারী ও মুসলিমে আছে, রাসুল (সা.) বলেন, যখন কোন ব্যক্তি স্ত্রীকে শয্যায় আহবান করে, আর স্ত্রী সেই আহবানে সাড়া দেয়না, তখন ভোর না হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাকুল তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। বোখারী ও মুসলিমের আর এক হাদীসে আছে, যখন কোন স্ত্রী স্বামীর বিছানায় শয়ন না করে অন্যত্র রাত যাপন করে, তখন স্বামী সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন।
হজরত জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন জনের নামাজ কবুল হয় না এবং তাদের কোন সৎকাজ আকাশেও উঠেনা। (তারা হচ্ছে-) পালিয়ে যাওয়া দাস, যতক্ষন না সে তার মনিবের কাছে ফিরে যায় এবং তার হাতে আপন হাত রাখে। যে মহিলার প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট, যতক্ষন না তার স্বামী তার প্রতি খুশি হয় এবং মদে মাতাল ব্যক্তি, যতক্ষন না সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। [তাবারানী, ইবনে খুযায়মা ও ইবনে হেব্বান]
হাসান বলেন আমাকে এমন কয়েকজন জানিয়েছেন যারা শুনেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন মহিলাদেরকে প্রথমে তাদের নামাজ ও স্বামীর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে। বোখারিতে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মুমিনা স্ত্রীলোকের পক্ষে স্বামীর সম্মতি ছাড়া নফল রোযা রাখা এবং তার গৃহে তার বিনা অনুমতিতে আর কাউকে ঢুকতে দেয়া জায়েজ নেই।
আর এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, আমি যদি কারো সামনে কাউকে সেজদা করার অনুমতি দিতাম, তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীকে সেজদা করতে বলতাম। [তিরমিযী] একবার হুসাইন বিন মুহসেনের ফুফু রাসুল (সা.) এর কাছে অভিযোগ করলে তিনি বললেন, ভেবে দেখ তার তুলনায় তুমি কতটুকু মর্যাদার পাত্রী। সে তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম। [নাসায়ী]
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, সর্বদা স্বামীর উপর নির্ভরশীল হয়েও যে স্ত্রী স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, তার দিকে আল্লাহ পাক দৃষ্টি দিবেন না।
ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, স্বামীর সম্মতি ছাড়া স্ত্রী যখন তার ঘর থেকে বের হয়, তখন পুনরায় সে ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত অথবা তওবা না করা পর্যন্ত ফেরেশতাকুল তাকে অভিশাপ দিতে থাকেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, স্বামীকে খুশী রেখে যে স্ত্রীলোক মৃত্যুবরণ করে সে বেহেশতে যাবে। [ইবনে মাজাহ, তিরমিজি ও হাকেম।]