আন্তর্জাতিক সংবাদ

হামলার শ্বাসরুদ্ধকর বর্ণনা দিলেন আল্লামা তাকি উসমানী

লিখেছেন তানজিল আমির

বিশ্ব বিখ্যাত মুসলিম স্কলার ও পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের শরিয়াহ বেঞ্চের সাবেক বিচারপতি মুফতি তাকি উসমানীর গাড়িবহরে শুক্রবার দুপুরে গুলিবর্ষণ এখন দেশটির আলোচিত ঘটনা। তাকি উসমানীকে লক্ষ্য করে চালানো হামলায় তিনি ও তার স্ত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেও ২ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার হামলার পর বিশেষ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আল্লামা তাকি উসমানীকে তার বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। ছাত্র ও ভক্তদের আশ্বস্ত করতে দারুল উলুম করাচির মসজিদে আসরের নামাজের পর সংক্ষিপ্তভাবে হামলার বিবরণ সবার সামনে তুলে ধরেন। তার এ বক্তব্য ডনসহ পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়।

আল্লামা তাকি উসমানীর পুরো বক্তব্যটির বাংলা তুলে ধরো হলো-

আসসালামু আলাইকুম

আমার ধারণা, আপনারা আজকের ঘটনাটি নিয়ে বেশ চিন্তিত এবং পেরেশান। তাই আমি আপনাদেরকে সংক্ষেপে ঘটনাটির বিবরণ দিচ্ছি।

প্রতি শুক্রবার আমি করাচি বাইতুল মোকাররমে (দারুল উলূম থেকে ২০/২৫ মিনিট দূরত্বে) জুমা পড়াই। সে উদ্দেশ্যেই আমি দারুল উলুম থেকে বের হয়েছিলাম। সঙ্গে ছিল আমার স্ত্রী ও ছয় সাত বছরের নাতি-নাতনিরা। গাড়িতে আমার সামনের সিটে বসেছিলেন পুলিশের এক নিরাপত্তাকর্মী। আমার ড্রাইভার হাবিব গাড়ি চালাচ্ছিলেন।

আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর হঠাৎ বৃষ্টির মতো মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ শুরু হয়ে যায়। তারা আমাদের গাড়িকে লক্ষ্য করেই গুলি চালিয়েছিল। গাড়ির সামনে ও ডান-বাম সবদিক থেকে অনবরত বৃষ্টির মতো এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ চলতে থাকে। আমার ড্রাইভারের ডানহাতে এবং বাহুতে দুটি গুলি লাগে। নিরাপত্তারক্ষীর মাথায় গুলি লাগে।

আল্লাহ তা’আলার দয়া ও অনুগ্রহ আমার শরীরে, আমার স্ত্রী ও বাচ্চাদের গায়ে ভেঙে আসা কাচের টুকরোর আঘাত ছাড়া তেমন কোনো আঘাত লাগেনি।

প্রথম হামলাকারীরা আক্রমণ করে ফিরে যাওয়ার হয়তো তারা বুঝতে পেরেছে, তাদের টার্গেট পূরণ হয়নি। তাই তারা আবার ফিরে আসে এবং দ্বিতীয়বারের মতো চতুর্দিক থেকে এলোপাতাড়ি মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ শুরু করে। আমার নিরাপত্তাকর্মী আবারও গুলিবিদ্ধ হন। ড্রাইভারের ডান হাত গুলির আঘাতে অকেজো হয়ে যায়।

কিন্তু সে বাম হাত দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জীবনবাজি রেখে গাড়ি চালাতে থাকে সে।

আমি তাকে বলেছিলাম, আপনার হাতে আঘাত লেগেছে। আপনি সরে আমাকে দেন, আমি গাড়ি চালাই। কিন্তু সে রাজি হয়নি। সে বলল, হজরত আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি এমনটি করবেন না। ওরা আপনার ওপর পরপর দুবার হামলা করেছে। খুব সম্ভব ওরা আবার হামলা চালাবে। আপনি পেছনেই বসুন এবং মাথা নিচু করে রাখুন যেন আপনার শরীরে গুলি না লাগে।

তার হাত গুলির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ছিল। রক্ত ঝরছিল। এই অবস্থায় সে নিপা চৌরাঙ্গি থেকে লিয়াকত ন্যাশনাল হসপিটাল পর্যন্ত নিজে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর আমি তাকে গাড়ি থেকে নামাই। ড্রাইভার ও নিরাপত্তা কর্মীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

আমরা আশা করেছিলাম, নিরাপত্তারক্ষী বেঁচে যাবেন। কিন্তু ডাক্তাররা জানালেন, হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ড্রাইভারের কথা জানালেন যে, তার চিকিৎসা সম্ভব। চিকিৎসা করলে তিনি বেঁচে যাবেন এবং সুস্থ হয়ে উঠবেন।

আমাদের পেছনের গাড়িতে একজন ড্রাইভার ও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। গুলির আঘাতে তিনি শহীদ হয়ে যান এবং ড্রাইভার মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার অপারেশন করতে হবে।

আল্লাহর তাআলার অসীম কুদরতেই তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন। আপনাদের দোয়া এবং আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ছিল। আল্লাহ তাআলা আমাকে কীভাবে রক্ষা করলেন তার ব্যাখ্যা আমি জাগতিক কোনো জিনিসের মাধ্যমে করতে পারব না। আল্লাহ তাআলার দয়ায় আমি পরিপূর্ণ সুস্থ ও ভালো আছি। আমি ভয়ও পাইনি এবং চিন্তিতও নই।

কিন্তু আমার দুইজন সাথী শহিদ হয়েছেন। তাদের জন্য আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত। তাদের পরিবারের প্রতি আমার দোয়া ও সমবেদনা রইল। দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তার মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করেন। আমিন।

সৌজন্যে : যুগান্তর অনলাইন

Comment

লেখক পরিচিতি

তানজিল আমির

তরুণ লেখক, আলেম ও গবেষক। আলোচিত সাপ্তাহিক 'লিখনী'তে ফিচার লেখক হিসেবে শুরু করেছিলেন মিডিয়ায় পথচলা। এরপর দৈনিক যুগান্তরের 'ইসলাম ও জীবন' পাতায় নিয়মিত প্রদায়ক হিসেবে কাজ করেন। সার্টিফিকেট নাম ‘আমির উদ্দিন তানজিল’ হলেও লেখক হিসেবে তানজিল আমির নামটিই পরিচিতি পেয়ে যায়।
প্রবন্ধ, কলাম ও বৈচিত্রময় নানা ফিচার লিখেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। লেখালেখির পাশাপাশি গবেষণা ও ইতিহাস বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী তরুণ এই লেখক । তার লেখা রেফারেন্স হিসেবে উদৃত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন বইয়ে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে তার রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। তার নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার লিড হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তরের সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন তানজিল আমির।