দোয়া বিধান

আল্লাহর পরম প্রিয় তওবা

আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এক সুন্দর অবয়বে মানুষকে তৈরি করেছেন ।দিয়েছেন এক মহামূল্যবান বিবেক। আসমান জমিনের সমস্ত মাখলুকাতের উপর দিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্ব ।যদিও ফেরেশতারা সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে রত আছে। তাদের যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তারা প্রতিনিয়ত সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ফেরেশতাদের আল্লাহ তার অবাধ্য হওয়ার ক্ষমতাই দেননি।আর আল্লাহ মানুষকে বিবেক দিয়ে সৃষ্টি করেছেন । নবীরাসুল প্রেরন করেছেন তাদের প্রতি ওহী নাযিল করে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। ভালো মন্দ দুটি পথের মধ্যেই ইচ্ছেমত যেকোন একটি পথ বেছে নেয়ার এখতিয়ার দিয়েছেন। এখানেই ফেরেশতাসহ সকল মাখলুকাতের উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব । দুনিয়াতে প্রেরনের অনেক পূর্বেই আল্লাহ আমাদের রূহ তৈরি করেছেন। আলমে আরুয়াতে আমাদের সকলের রুহকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, আমি কি তোমাদের রব নই? আমরা সকলে বলেছিলাম, হ্যাঁ। আমরা আল্লাহর দুনিয়াতেও কালিমার অঙ্গীকার করেছি । জান্নাতের বিনিময়ে আল্লাহ মুমিনদের জানমাল ক্রয় করে নিয়েছেন। কিন্তু কখনো কখনো আমরা হেদায়তের আলোর পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে পাপাচারের অন্ধকারে নিজেদের নিমজ্জিত করি। কোন কোন পাপে সাময়িক সুখ অনুভূত হলেও পাপের পীড়া কামড় দেয় বারবার। ফলে মানসিক বিষাদ অনুভব হতে থাকে। পক্ষান্তরে তওবা করলে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে জীবন নতুনভাবে নবায়িত হয় ।

তওবা শব্দটিই যেন একটি মহান শব্দ। যার অর্থ ফিরে আসা। তওবার দহনেই গোলামের পাপে কলুষিত আত্না মনীবের সাথে নবরূপে মিলিত হয়। মহান আল্লাহ চান তার বান্দারাও যেন গুনাহ করার সাথে সাথে তওবা করে নেয়। পবিতর কুরআন ওহাদিসে তওবার উপর জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। বান্দার তওবায় আল্লাহ অত্যন্ত খুশী হন। তওবার ফলে তিনি এত খুশী হন যে,তার উদাহরণ দিতে গিয়ে নবী (সা.) বলেন এক মুসাফির তার উটসহ সফরে এক মারাত্নক মরুভূমিতে গিয়ে পড়লে বিশ্রামের জন্য এক গাছের ছায়ায় মাথা রেখে শোয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পড়ল । এর মধ্যেই তার উট গায়েব হয়ে গেল । সে এদিক-সেদিক খুজোখুজি শুরু করল ; কিন্তু সে বৃথায় হয়রান হল। ক্ষুধাও পিপীসায় বেশী কাতর হয়ে পড়ল ,তখন ফিরে সে গাছের নিকট এসে শোয়ামাত্র চোখ লেগে গেল। কিছুপরে চোখ খুলতেই দেখতে পেল তার সেই উট খাদ্যও পানিসহ দাড়িয়ে আছে । তা দেখে সে এত খুশী হল যে, উটের লাগাম ধরে খুশীর উচ্ছ্বাসে বলে উঠল, আল্লাহ তুই আমার বান্দা আমি তোর রব নবী (সা.) বলেন (হারিয়ে যাওয়া বা পালিয়ে যাওয়া উট ফিরে এলে) তওবা করলে আল্লাহ হারিয়ে যাওয়া উটওয়ালা অপেক্ষা অধিক খুশী হন। ( বুখারী, হাদিস: ৬৩০৯, মুসলিম, হাদিস: ২৭৪৭)

তার বান্দাদের প্রতি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তিনি চান বান্দা তওবা করুক। এজন্যই দিনে রাতে হাত বাড়িয়ে দেন ।তিনি সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। এমনকি একশতটি খুন করলেও বিশুদ্ধ তওবার দ্বারা মাফ হয়ে যাবে। নবীকরীম (স)এর কোন পাপ ছিল না। তবুও তিনি প্রত্যেহ একশতবার আল্লাহর নিকট তওবা করতেন। উম্মতকে বেশী বেশী তওবা করতে উতসাহিত করতেন। আল্লাহ বলেন “হে মুমিনগন তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর,আন্তরিক তওবা (সূরা তাহরীম-আয়াত৮)। তওবা হল অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করা ,যে গুপ্ত অথবা প্রকাশ্য জিনিস আল্লাহ গৃণা করেন সে জিনিস হতে ,যা তিনি পছন্দ করেন ভালোবাসেন তার ফিরে আসার নাম । ওলামায়েকেরাম তওবার কয়েকটি শর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন । যে শর্ত গুলো পূরণ না হলে তওবা কবুল হয় না- (১) তওবা হবে আন্তরিকভাবে এক আল্লাহর জন্য বিশুদ্ধ । (২) পাপে লিপ্ত থাকা অবস্থায় তওবা গ্রাহ্য নয়। সাথে সাথে পাপ বর্জন করতে হবে । (৩) বিগত পাপের উপর লাঞ্চনাওঅনুশোচনা প্রকাশ করতে হবে । (৪) পুনরায় মরণ পর্যন্ত তার প্রতি না ফেরার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। (৫) কোন মানুষের অধিকার হরণ করলে তার অধিকার আদায় করে নিতে হবে কিংবা তার নিকট হতে মাফ চেয়ে নিয়ে তওবা করতে হবে । (৬) তওবা কবুল হওয়ার নির্ধারিত সময়ে (মৃত্যু নিকটবর্তী হওয়ার আগে ও পশ্চিমকাশে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে)

আল কুরআনে আল্লাহ নুহকে (আ.) উল্লেখ করে বলেন, (নূহ বলল,)আমি তাদেরকে বললাম তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর । তিনি তো মহাক্ষমাশীল।তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর পরিমানে বৃষ্টিপাত করবেন । তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি দ্বারা সমৃদ্ধ করবেন । আর তোমাদের জন্য বাগান তৈরি করে দেবেন এবং প্রবাহিত করে দেবেন নদীনালা। (সূরা নূহ আয়াত ১০-১২)। গুনাহ থেকে ফিরে এসে খালেসভাবে আল্লাহর নিকট তওবা করা ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে বরকত লাভ এবং পরকালে পরম সুখের আকর জান্নাত লাভের একটি কারণ। পাপ করার পর ক্ষমাপ্রার্থনাকারী বান্দাকে আল্লাহ কতটা ভালোবাসেন তার বর্ণনা করতে গিয়ে নবী (সা.) বলেছেন– সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন ! যদি তোমরা পাপ না কর ,আল্লাহ তোমাদের নিশ্চন্ত করে দিয়ে (তোমাদেরপরিবর্তে)এমন এক জাতি আনয়ন করবেন,যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে । আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন (মুসলিম হাদিস নাম্বার: ২৭৪৯)। মানুষ মাত্রই ভুলে জড়িত। মানুষের দ্বারা ভুল হতেই পারে ।তাই আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ না হয়ে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়াই কর্তব্য।

 

Comment

লেখক পরিচিতি

মেহেদী হাসান সাকিফ

আমি মেহেদী হাসান সাকিফ। আমার পিতার নাম নাজমুল আলম। মাতা সেলিনা মমতাজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার ইসলামিক পাতাসহ বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, পরিবর্তন ডটকম ও বাংলা মেইলের ইসলামিক পাতায় লেখালেখি করি। ভবিষ্যৎ ইসলামি নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী এমফিল , পিএচইডি করার ইচ্ছে রয়েছে। পড়াশুনার পাশাপাশি প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় দাওয়াতি কাজ করার স্বপ্ন দেখি।