حواء (হাওয়া) ও ادم (আদম) — এই নাম দুটি আরবি না-কি অনারবি? এই নাম দুটি কোন ভাষার শব্দ— তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে বিভিন্ন মতামত লক্ষ্য করা যায়। আর কিসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই নাম দুটি রাখা হয়েছে, না-কি শুধু নাম হিসেবেই রাখা হয়েছে?
প্রথম প্রশ্নটি সম্পর্কে বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনে হাজার মক্কি রহ.-এর মত এটা জানা যায় যে, এই নামগুলো ‘সুরিয়ানি’ নাম; আরবি নয়। আর বাইবেলে (ا) ‘আলিফ’ অক্ষরটির ওপর স্বর দীর্ঘকারী مد ‘মদ’ এবং ‘দাল’ অক্ষরটিকে লম্বা উচ্চারণের সঙ্গে آدام আ-দা-ম পড়া হয়। আল্লামা যাওহারি ও যাওয়ালিকি রহ. বলেন. এগুলো আরবি নাম। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি সম্পর্কে আল্লামা সালাবি রহ. বলেন , হিরু ভাষায় মাটিকে آدام (আদাম) বলা হয়। যেহেতু তাঁকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই সামঞ্জস্যের কারণেই তাঁর নাম آدام (আদাম) রাখা হয়েছে।
আবার কারো কারো মতে, ادم শব্দটি ادمة উদমাতুন থেকে গৃহীত হয়েছে; ادمة উদমাতুন বা اديم الأرض (আদিমুল আরদ) অর্থাৎ জমিনের উপরিভাগ থেকে নেয়া মাটি দিয়ে তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে আর এ-জন্যই তাঁর নাম হয়েছে আদম (ادم)।
অন্য কয়েকজন আলেম বলেন, ادم শব্দটি ادمت—যার অর্থ خلطت (মিশ্রিত হয়েছে)—শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। তা এই সামঞ্জস্যের কারণে যে আদম আ.-এর দেহের খামির পানি ও মাটির মিশ্রণে প্রস্তুত করা হয়েছিলো।
এভাবে حواء (হাওয়া) শব্দটি এ-জন্য হযরত আদম আ.-এর স্ত্রীর নাম হয়েছে যে তিনি সমস্ত انسان حى অর্থাৎ জীবনধারী মানুষের মাতা। حى-এর مبالغة অর্থাৎ আধিক্যব্যঞ্জক রূপ প্রদান করে নাম حواء নাম রাখা হয়েছে। যাইহোক, নাম ও অর্থের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকার বিষয়টি অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিষয়। তাই বর্ণিত প্রকরণগুলো একইসঙ্গে শুদ্ধ হতে পারে আবার তার কোনো একটিতে প্রাধান্যও দেয়া যেতে পারে। কেননা এই বিষয়টি খুবই ব্যাপক।
মূল— মাওলানা হিফযুর রহমান। ভাষান্তর— আবদুস সাত্তার আইনী। লেখাটি মাকতাবাতুল ইসলাম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কসাসুল কুরআন নামক গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত।
কমেন্টস করুন