রূহ তথা আত্মা হলো মানুষের মূল বিষয়। শরীর বা আঙ্গিক কাঠামোটি রূহের বাহন। মানুষের চেতনা, আবেগ-বিশ্বাস, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন ও অণুসঞ্চালন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে তার রূহ বা হৃদয়। এর অনুভব ও চিন্তন যদি সুস্থ থাকে তবে আর সবকিছুরই ব্যবহারও থাকে সুস্থ। আর যদি রূহ অসুস্থ থাকে তাহলে সবকিছুই হয়ে যায় অসুস্থ ও অ-কল্যাণকর।
শরীরের যেমন রোগ-বালাই আছে মনেরও তেমন রোগ-বালাই থাকে। শারীরিক অসুস্থতা সারাতে যেমন চিকিৎসা জরুরি, রূহের রোগের আরোগ্য লাভেও তেমন চিকিৎসা আবশ্যক। রূহ বা আত্মার রোগের দাওয়াই হলো আল্লাহ মহান ও আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামের দিকনির্দেশনা। আল্লাহওয়ালারা এই রূহানী চিকিৎসার ধারক ও বাহক। একটি হাদীসে সর্বশ্রেষ্ঠ রূহানী চিকিৎসক নবী-এ-পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষের শরীরের মাঝে গোশতের একটি টুকরা আছে, তা যদি সুস্থ থাকে গোটা শরীরই সুস্থ থাকে, আর তা যদি বিনষ্ট হয়ে যায়, অসুস্থ থাকে গোটা শরীরটাই। আর সেটি হলো কালব বা হৃদয়।
সত্যিকার অর্থে মুসলমান হওয়ার মধ্যেই মানবজাতির ইহকালীন ও পরকালীন সুখ-শান্তি এবং সম্মান-সফলতা নিহিত রয়েছে। আর পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়ার জন্য বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উচিত বাহ্যিক ইবাদত-বন্দেগী পালনের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক সাধনা বা আত্মশুদ্ধির চর্চায় নিজেকে জড়িত রাখা।
হৃদয়জাগানিয়া আধ্যাত্মিক বক্তৃতার অনবদ্য তুহফা রূহানী খোরাক গ্রন্থটি। এটি মূলত মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ (দা.বা.) –এর আধ্যাত্মবাদ সংশ্লিষ্ট বক্তৃতার সংকলন। কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে অনুষ্ঠিত ইসলাহী মজলিসসহ দেশে-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে তার প্রদত্ত ইসলাহী বক্তৃতাগুলো দুই মলাটে আবৃত করা হয়েছে। বক্তৃতাগুলোর শ্রুতিলিখন করেছেন হুসাইন মুরতাজা।
গোটা গ্রন্থটিতে মোট ২৮টি বক্তৃতার লিখিতরূপ সংকলিত হয়েছে। বক্তৃতার শিরোনামগুলো হলো— ১. আমলে থাকাই মুমিনের সার্থকতা। ২. আল্লাহওয়ালার সান্নিধ্য জরুরি। ৩. রমজান ও তাকওয়া। ৪. আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাব ও শাবান। ৫. বিগলিত চোখের জলে মাগফেরাত। ৬. জিকিরে হৃদয়ের অনুভূতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। ৭. লোভ সংবরণ ও নেক সন্তান। ৮. সংবাদ ও সত্যবাদিতা। ৯. আল্লাহর ভয়ে বিগলিত চোখের অশ্রু। ১০. পরিপূর্ণ দ্বীন : সংরক্ষণ ও প্রসার। ১১. আল্লাহর নিসবতে কাজ হলে তিনি তা কবুল করেন। ১২. সব সৃষ্টিই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। ১৩. আল্লাহপ্রেমে অস্থির মুমিনের মন। ১৪. ফেতনা সৃষ্টি ও এর প্রতিকার। ১৫. দিল বনে আসেনি বানাতে হয়। ১৬. অন্যের গুণকে দেখো আর নিজের দোষকে খোঁজো। ১৭. আত্মসংশোধনের সারকথা। ১৮. জিকিরে আত্মা খোরাক পায়। ১৯. শরীরের প্রতিটি অঙ্গেই আল্লাহর নামের তাছির পয়দা করতে হবে। ২০. বৃষ্টির পানির মতো ইসলাম সবার জন্য উপকারী। ২১. ইসলামেই মুসলমানদের উন্নতি ও সমৃদ্ধি। ২২. শান্তির প্রত্যাশা ও ইসলাম। ২৩. একাগ্রচিত্তে আল্লাহকে পেতে। ২৪. পরচর্চা নয় সদ্ভাব প্রয়োজন। ২৫. আমলের স্বাদ ও তৃপ্তিময়তা। ২৬. হৃদয়ে যেন কেবলই আল্লাহ থাকে। ২৭. হেদায়েতের আশা ও ফুযায়েল ইবনে আয়াজ (রহ.)। ২৮. ইখলাস মুমিনের বড় সম্পদ।
গ্রন্থটি সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে পাথেয় পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন বলেছেন, প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের উচিত আত্মশুদ্ধির সাধনায় নিজেকে জড়িত রাখা। আত্মশুদ্ধির সাধনায় রত মুমিন-মুসলমানের আধ্যাত্মিক সাধনার পাথেয় হিসেবে এ গ্রন্থটি বেশ উপকারী হবে। একজন সাধক পুরুষ তাকে শুধরে নিতে, নতুনভাবে সাধনার রুটিন সাজাতে এবং তাসাউফের গোটা পথ পাড়ি দিতে গ্রন্থটির সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারেন।
বইটি প্রকাশ করেছে পাথেয় পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৪০। মুদ্রিত মূল্য ২৬০ টাকা। ২০১৫ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন নাজমুল হায়দার। বইটি কিনতে চাইলে ১২২৭/এ/১ চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত পাথেয় পাবলিকেশন্সের অফিস থেকে ক্রয় করতে পারেন অথবা কল করতে পারেন ০১৭৭৭৪৪৭৭২৪ বা ০১৯১৪০৪৩৭৫৭ এই নম্বরে। এ ছাড়া ঘরে বসে বইটি কিনতে চাইলে অর্ডার করতে পারেন রকমারি.কমে।